শেষের পাতা

গাজীপুরে জাসদ অনড় সমঝোতায় জামায়াত

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে:

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ২৩শে এপ্রিল। ১৪ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার ঘোষণা এলেও গাজীপুরে নিজের প্রার্থিতার বিষয়ে অনড় জাসদ প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা  । অন্যদিকে প্রতিপক্ষ হয়ে মাঠে নামলেও শেষ পর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী। স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়া জামায়াতের মহানগর আমীর শেষ পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের পক্ষে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন। এতে অনেক আশাবাদী বিএনপির মেয়র প্রার্থী। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরও আশা শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদের প্রার্থী তার পক্ষে নামবেন।
নগরের চান্দনা চৌরাস্তায় রোববার সকালে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন জাসদ মনোনীত মেয়র প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা  জানান, মেয়র পদে প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি এখনো অনড় আছেন। কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা নির্বাচনের মাঠে আছি এবং শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবো। আওয়ামী লীগ আমাদের শরিক দল হলেও এ ক্ষেত্রে আমরা এককভাবে নির্বাচন করবো। দলীয় ফোরাম থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের বিষয়ে কিংবা আওয়ামী লীগকে সমর্থন সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা পাননি জানিয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে লড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। তফসিল ঘোষণার আগে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু গাজীপুর সফরে এসে রানাকে প্রার্থী ঘোষণা করে যান। এখনো জাসদের প্রার্থী মাঠে থাকলেও এ নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা নেই আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীর। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম মনে করছেন সময়ের ব্যাপার মাত্র, ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীসহ মহাজোটের শরিক দলের সবাই গণতন্ত্রের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে সময়মতো নির্বাচনী মাঠে নেমে যাবেন তার পক্ষে। এরই মাঝে মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ তাকে সমর্থন জানিয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই জাতীয় পার্টির নগরের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যৌথ বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নামবেন।
অন্যদিকে, জামায়াতের গাজীপুর মহানগর আমীর অধ্যক্ষ মো. সানাউল্লাহ জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে ছিলেন। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, যা ছিল বিএনপির জন্য মাথাব্যথার কারণ। শেষ পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকের পর দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে মেয়র পদে জামায়াতের প্রার্থী নগর আমীর অধ্যক্ষ এসএম সানাউল্লাহ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে জোটের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় জানান। তিনি জানান, দেশে আজ গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকার নেই, রাষ্ট্রীয় মৌলিক অধিকারগুলো খর্ব করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেশ ও জাতির ভাগ্য, আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের বিষয় গুরুত্ব দিয়ে এই নির্বাচনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন। জামায়াতের এই সিদ্ধান্তে আগের চেয়ে উজ্জীবিত জামায়াত। নগরের বিএনপির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীরা যৌথ সভা করেছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার বলেছেন, তাদের বিজয়ের পথ এতে আরো সুগম হলো। জামায়াত আমাদের সমর্থন দেয়ায় আমাদের শক্তি অনেকগুণ বেড়ে গেছে। বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয়তাবাদী শক্তি একসঙ্গে মিলে কাজ করলে আমাদের বিজয় ইনশাআল্লা কেউ ঠেকাতে পারবে না।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, জাতীয় রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন শর্ত সাপেক্ষে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী প্রত্যাহারের সমঝোতা হয়েছে বিএনপির সঙ্গে। মেয়র ছাড়াও গাজীপুর সিটিতে ছয়টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে জামায়াত। বিএনপির সমর্থন চেয়েছে তাদের তিনজন প্রার্থীর প্রতি। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াতের দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপির পুরো সমর্থন পাবে বলে আশ্বাস দেয়া হয়। এর আগে শনিবার রাতে গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে বিএনপি। এই বৈঠকে জামায়াত নেতৃবৃন্দ উপস্থিত না থাকলেও টেলিফোনে যোগাযোগ করে তাদের প্রার্থী-জটিলতা দূর করে গাজীপুরের মেয়র পদে জোটসঙ্গীকে ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্তে একমত হয় জামায়াত। এর মধ্যদিয়ে গাজীপুরে ২০ দলীয় জোটের বড় দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানের অবসান হতে যাচ্ছে। ২০ দলের আর কোনো প্রার্থী না থাকায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জোটের একক প্রার্থী থাকবেন হাসান উদ্দিন সরকার।  কাউন্সিলর পদেও বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে প্রার্থিতা নিয়ে তেমন সমস্যা  থাকছে না। গাজীপুর জামায়াতের মহানগর আমীর অধ্যক্ষ এসএম সানাউল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এছাড়া ৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত। ওয়ার্ডগুলো হলো-২৮, ৩৩, ৩৭, ৪৯, ৫১ এবং ৫৪। এই ওয়ার্ডগুলোতে বিএনপির প্রার্থীও রয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৮৭ এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আজ ২৪শে এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ এবং ১৫ই মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যে পাঁচ মহানগরে ভোট হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার গাজীপুরে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status