শেষের পাতা

নি র্বা চ নী হা ল চা ল (যশোর-৪)

বিরোধে আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী বিএনপির

নূর ইসলাম, যশোর থেকে:

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

যশোরের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকার মতো যশোর-৪ আসনের বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলাও প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে সরগরম। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। করছেন জনসংযোগ। দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। সরকারি দলের পাশাপাশি বিএনপিসহ সমমনা দলের একাধিক প্রার্থী দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠে-ময়দানে। প্রার্থীদের
পাশাপাশি ভোটাররাও কষছেন নানা হিসাব-নিকাশ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বেশ কিছু নতুন মুখ। চলছে পোস্টারিং আর অনলাইন প্রচার প্রপাগান্ডা। বিভিন্ন জাতীয় উৎসবকে ঘিরে স্থানীয় গণযোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের শুভেচ্ছা বিনিময়। চায়ের স্টলগুলোতে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনায় উঠছে ঝড়। সবকিছু ছাপিয়ে দেশের পশ্চিমাঞ্চলের এই নির্বাচনী এলাকার প্রধান সমস্যা মাদক, সন্ত্রাস, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্নীতি আর দলীয়করণের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সামনে উঠে আসতে শুরু করেছে। বিগত দিনে যারা এসব এলাকায় বিভিন্ন পদে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বা বর্তমানে করছেন তাদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিচার বিশ্লেষণ। বিগত দিনে ভোটারদের কাছে দেয়া প্রতিশ্রুতি কোন নেতা কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন তারও হিসাব কষছেন ভোটাররা। ভোটারদের অভিমত বিগত বছরগুলোতে এই নির্বাচনী এলাকার দুটি উপজেলার বিভিন্ন পদে যেসব জনপ্রতিনিধিরা দায়িত্ব পালন করেছেন তারা দৃশ্যত ব্যর্থ হয়েছেন জনপ্রত্যাশা পূরণে। এলাকার উন্নয়নের পরিবর্তে নেতারা বেশি ব্যস্ত ছিলেন নিজের ও পরিবারের ভাগ্যোন্নয়নে। শূন্য থেকে শুরু করে আজ শত-কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এ নির্বাচনী এলাকার বহু জনপ্রতিনিধি। ফলে আগামী নির্বাচনে যারা প্রার্থী হবেন তাদের জনপ্রত্যাশার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশেষ করে চিত্রা নদ খনন, রাস্তাঘাটের উন্নতি ও সংস্করণ, নতুন রাস্তা পাকাকরণ, সন্ত্রাস ও মাদক নিয়ন্ত্রণ, ঘুষ, দুর্নীতি প্রতিরোধে আন্তরিকতা প্রকাশ করা ও তা বাস্তবায়ন করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি ত্যাগ করা, দলীয়করণের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হওয়া ইত্যাদি  বিষয়গুলোর প্রতি নজর দিতে হবে প্রার্থীদের।
বাঘারপাড়া উপজেলার ৯টি ও অভয়নগর উপজেলার ৮টি ও যশোর সদর উপজেলার ১টি মোট ১৮টি ইউনিয়ন  এবং ২টি পৌরসভা নিয়ে যশোর-৪ নির্বাচনী এলাকা গঠিত। বিগত নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী রণজিৎ কুমার রায় এমপি নির্বাচিত হন। তার আগের নির্বাচনেও তিনি এমপি নির্বাচিত হন। তখন নির্বাচনী এলাকার পরিধি ছিল ভিন্ন। যশোর সদর উপজেলার ৫টি ও বাঘারপাড়া উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সেই নির্বাচনী আসনে রণজিৎ রায় বিএনপির প্রার্থী প্রকৌশলী টিএস আইয়ুবকে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ নির্বাচনে যশোর-৪ নির্বাচনী এলাকার আয়াতন পরিবর্তন করে সাবেক জায়গায় ফিরিয়ে নেয় নির্বাচন কমিশন। এদিকে আগামী একাদশ সংসদ নির্বচনকে কেন্দ্র করে এই আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন। আগামী নির্বাচনে এই আসন থেকে নৌকার কাণ্ডারি হতে এখনো পর্যন্ত চারজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এরা হচ্ছেন বর্তমান এমপি রণজিত কুমার রায়, সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ আব্দুল ওহাব, অভয়নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র এনামুল হক বাবুল ও জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা নাজমুল ইসলাম কাজল।
তবে আওয়ামী লীগ দলীয় বর্তমান এমপিদের মতো রণজিৎ কুমার রায়ও বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এই আসনে। নানা অনিয়ম আর বিতর্কের কারণে দলের একটি বড় অংশের তোপের মুখে রয়েছেন তিনি। রণজিতের মতো মারাত্মক ইমেজ সংকটে রয়েছেন সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাব। তারপরও এই দুজনই নৌকার বড় দাবিদার। পাশাপাশি ক্লিন ইমেজের কারণে অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র এনামুল হক বাবুলের ব্যাপারে ভোটারদের আগ্রহ বেশ। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাঘারপাড়ার নাজমুল ইসলাম কাজলও নিজ এলাকায় বিশেষ প্রভাব তৈরি করেছেন। ইতিমধ্যে কাজল একটা নিজস্ব গ্রুপ তৈরি করে বাঘারপাড়া ও অভয়নগর এলাকায় নিয়মিত জনসংযোগ করছেন। চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা।
এই আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব এক প্রকারের একক প্রার্থী। তিনি সব সময় মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকেন। এখনও পর্যন্ত তিনি এই আসনে দলের একক প্রার্থী। তবে তরিকুলপন্থী হিসেবে পরিচিত বাঘারপাড়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দল থেকে বহিষ্কৃত নেতা আবু তাহের দলে ভেড়ার চেষ্টা করছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি যদি দলে ভিড়তে পারেন তবে আগামী নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন। টিএস আইয়ুবের অনুসারী বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান ও দলের কেন্দ্রীয় নেতা অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমানও আগামী নির্বাচনে এ আসনে দলের টিকিট চাইতে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত এ আসনে প্রকৌশলী টিএস আইয়ুব দলের টিকিট পাবেন- সে বিষয়ে প্রায় একমত দলের সব স্তরের নেতাকর্মী। কারণ দীর্ঘদিন টিএস আইয়ুব এই আসনে দলের কাণ্ডারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। দলের সব বিপদ-আপদে তিনি মাঠ ছাড়া হননি। কর্মীদের আগলে রেখেছেন ভালোবাসা দিয়ে।
এদিকে অতি সম্প্রতি এইচএম এরশাদের স্বাক্ষরিত সমর্থনসূচক একটি চিঠি ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে লে. কর্নেল (অব.) এম শাব্বির আহম্মেদের নাম। সেখানে এই আসনে শাব্বির  আহম্মেদকে লাঙলের প্রার্থী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে হাল ছাড়েননি জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম জহির ও অভয়নগর উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শাহ আশরাফুজ্জামান- এই দুজনও লাঙলের দাবিতে মাঠে রয়েছেন।
এদিকে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এমন প্রত্যাশায় দুই দলের প্রায় হাফ ডজন নেতা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠ কাঁপাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা শুভেচ্ছা বিনিময়, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনের মাধ্যমে তাদের উপস্থিতির জানান দিচ্ছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব এসব সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় তার। পাশাপাশি এলাকায় জনসংযোগের মাধ্যমে প্রার্থীরা নিজেদের তুলে ধরার চেষ্টা করছেন ভোটারদের কাছে।

আগামীকাল: ঢাকা-২০
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status