শেষের পাতা

বিচার পাওয়ার অপেক্ষায় রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শ্রমিকরা

মানবজমিন ডেস্ক:

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির শিকার গার্মেন্ট শ্রমিকরা এখনো সুবিচার পাওয়ার অপেক্ষায়। আগামীকাল ওই ট্র্যাজেডির পঞ্চম বার্ষিকী। চার বছর আগে সাভারে রানা প্লাজা ধসে নিহত হন কমপক্ষে ১১৩০ শ্রমিক। বেঁচে আছেন যারা তাদের অবস্থা শোচনীয়। তাদের নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর ধ্বংসস্তূপ আর মৃতদেহের চাপায় ১০ ঘণ্টা আটকে   ছিল নিলুফার বেগমের পা। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু সুবিচারের আশায় থাকা তার কাছে এখন এক যন্ত্রণা। বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডি ঘটে রানা প্লাজায়। মঙ্গলবার এর পঞ্চম বার্ষিকী। এই কারখানায় তৈরি হতো পশ্চিমা নামকরা সব ব্র্যান্ডের পোশাক। শ্রমিকদের দেয়া হতো কম মজুরি। সেসব কিছুর পেছনে রেখে এখন বেঁচে থাকা শ্রমিকরা সুবিচার চান। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু আদালতে এ মামলায় যে ধীরগতি তাতে ওই ট্র্যাজেডির বার্ষিকীতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ওই ট্র্যাজেডি থেকে বেঁচে গেছেন নিলুফার বেগম। সে সেই ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিলের কথা। তার ডান পায়ের ওপর পড়ে ছিল তিনটি মৃতদেহ আর ধ্বংসস্তূপ। এ জন্য তিনি পা তুলতে পারছিলেন না। নিলুফার বেগমের বয়স এখন ৩৮ বছর। তাকে উদ্ধার করার পর অপারেশন করা হয়েছে। তিনি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পেয়েছেন ৩৫০০ ডলার। কিন্তু অপারেশনে লেগেছে তার দ্বিগুণ অর্থ। এর ফলে তিনি আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার কাছ থেকে ঋণ করেছেন। রানা প্লাজা ধ্বংসস্তূপের কাছেই একটি মুদি দোকান চালান তিনি। বলেছেন, এখন আমি মৃত্যুর প্রহর গুনছি। আমার পায়ের মাংসপেশী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিডনি কাজ করছে না। রানা প্লাজা ছিল ৯ তলাবিশিষ্ট। এখানে কাজ করা ২০০০’র বেশি শ্রমিক আহত হয়েছেন। তাদের সবার কাহিনীই প্রায় একই। একশন এইড বাংলাদেশের মতে, তাদের বেশির ভাগই ক্ষতিপূরণ হিসেবে যে অর্থ পেয়েছেন তার পুরোটাই খরচ করেছেন চিকিৎসা করাতে। নিলুফার বেগম বলেন, রানা প্লাজার বিচার প্রক্রিয়া যে ধীরগতিতে চলছে তাই দেখার জন্যই সম্ভবত আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আগের দিন ভবনের পিলারে ফাটল দেখা দেয়ার পরও আমাদের কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা কাজে না গেলে বরখাস্ত করার হুমকি দিয়েছিলেন কারখানার মালিক ও ম্যানেজার। ভবন মালিক এখন জেলে ভালো সময় পার করছেন। বাকি অভিযুক্তরা জামিনে বাইরে রয়েছেন। অন্যদিকে আমাদের অনেকেরই অঙ্গহানি হয়েছে। সবাই এখন আমাদের এবং ওই ট্র্যাজেডির কথা ভুলে গেছেন।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। পাইমার্ক, ম্যাঙ্গো ও বেনেটনের মতো ইউরোপিয়ান ও মার্কিন পোশাকের ব্র্যান্ডগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। চাপ দেয়া হয় বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি ও তাদের কর্মপরিবেশ উন্নত করার জন্য। এই খাতে বাংলাদেশে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। তাদের মাসিক বেতন ৬৫ ডলার থেকে শুরু। এই বেতন বিশ্বের মধ্যে সর্বনিম্ন। যেসব গ্রুপ কারখানার নিরাপত্তা আধুনিকায়ন দেখাশোনা করে তারা বলেছে, বাংলাদেশের গার্মেন্ট কারখানাগুলোর মান উন্নত হয়েছে। গত বছর ২০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটি সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন এমন সংখ্যা। এখনো ইউরোপিয়ান শতাধিক ব্র্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি গ্রুপ সতর্কতা উচ্চারণ করেছে। তারা বলেছে, এখনো ৪৫০০ এমন পোশাক শিল্পে বড় ধরনের জীবনের প্রতি হুমকি আছে। এখাতে ঝুঁকি বিদ্যমান। এএফপি’র ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে, রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা ও অভিযুক্ত অন্য ৪০ জনের বিচার প্রক্রিয়া যে গতিতে চলছে তার চেয়ে বেশি দ্রুতগতিতে চলছে অবস্থার উন্নয়ন। দুদকের মামলায় ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ প্রকাশে ব্যর্থ হওয়ার কারণে গত বছর আগস্টে সোহেল রানাকে তিন বছরের জেল দেয়া হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও আছে। এ মামলার প্রক্রিয়া যেভাবে চলছে তাতে প্রসিকিউটররা বলছে, রায় ঘোষণা হতে আরো পাঁচ বছর লাগতে পারে। এক্ষেত্রে বার বার মুলতবি করে দেয়াকে দায়ী করেন প্রসিকিউটর মিজানুর রহমান। এখন পর্যন্ত কোনো সাক্ষী তার সাক্ষ্য দেন নি। এরই মধ্যে অনেক সাক্ষী লাপাত্তা হয়ে গেছেন। ওদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা বলছেন, যে ধীরগতিতে মামলা চলছে তাতে দায়মুক্তির একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। শ্রমিক অধিকার আদায়ের শীর্ষ স্থানীয় নেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেছেন, আমরা আশা করেছিলাম রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি শ্রমিকদেরকে ইউনিয়নভুক্ত হতে সহায়তা করবে। তারা এক হয়ে তাদের উন্নত অধিকার আদায়ের দাবি তুলবে। কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো। তিনি বলেন, কোনো প্রতিবাদ বিক্ষোভের আভাস পেলেই কারখানা মালিকরা স্থানীয় গুণ্ডা, পুলিশদের ব্যবহার করে। সরকার চালায় দমন-পীড়ন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে বেশি বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা যখন আন্দোলন করছিলেন তখন মোহাম্মদ ইব্রাহিম সহ ৪১ নেতাকে আটক করা হয়েছিল। ইব্রাহিম বলেছেন, পুলিশ তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে। তার মতে, প্রায় ১৭০০ শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তাদেরকে আর চাকরিতে নেয়া হয় নি। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর গার্মেন্ট মালিকরা আরো শক্তিধর হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করে বিদেশে তার মধ্যে শতকরা প্রায় ৮০ ভাগই তৈরি পোশাক। এ থেকে আসে ৩০০০ কোটি ডলার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status