শেষের পাতা

বেরাইদে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষে সংঘর্ষ, নিহত ১

স্টাফ রিপোর্টার:

২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৯:৪৭ পূর্বাহ্ন

অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষে রাজধানীর বেরাইদে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে একজন। সংসদ সদস্য একেএম রহমত উল্লাহর সমর্থক ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। নিহতের নাম: কামরুজ্জামান দুখু (৪০)। তিনি   ভাটারা থানার বেরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান ও বাড্ডা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের চাচাতো ভাই। আহতরা হলেন- সানি (৩০), শরীফ (৩৫), কামাল (৩০), বাদল (৪০), নাজির হোসেন (৩৫), তাজ মোহাম্মদ (৩৪) রোববার বিকালে বেরাইদের ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কাছে প্রধান সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এম রহমতউল্লাহর ভাগ্নে ফারুক হোসেন এবং স্থানীয়  চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। আগামী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নকে কেন্দ্র করে এ বিরোধ আরো জোরালো হয়। স্থানীয় এমপি’র পুত্র হেদায়েত উল্লাহ মনোনয়ন প্রত্যাশা করে এলাকায় বিভিন্ন পোস্টার লাগিয়েছেন। এতে চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম তার প্রতি নাখোশ হন। সংঘর্ষ ও একজন নিহতের ঘটনায় এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষ এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, এমপি রহমত উল্লাহ’র ভাগ্নে ফারুক আহমেদের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা প্রতিরোধ করতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, নিহত কামরুজ্জামান ক্রাউন সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ঠিকাদারের কাজ করেন। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি ফ্যাক্টরির কাছে কয়েকজনকে নিয়ে কাজ করছিলেন। এ সময় এমপি’র ভাগ্নে ফারুকের নেতৃত্বে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। এ সময় জাহাঙ্গীরের সমর্থকরা প্রতিহত করতে এগিয়ে এলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানান, বেরাইদে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের এমপি রহমত উল্লাহর ভাগ্নে ফারুক আহমেদ। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে বাড্ডা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপ-নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিট করা এবং বেরাইদ ইউনিয়ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এমপি রহমত উল্লাহর ভাগ্নে ফারুক আহমেদ ও জাহাঙ্গীর আলমের গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। নির্বাচন স্থগিত চেয়ে রিটটি করেছিলেন বেরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও ভাটারা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান। ওই রিটের প্রেক্ষিতেই নির্বাচন স্থগিত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানান, তিন মাস আগে বেরাইদ মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ‘বেরাইদ নাগরিক কমিটি’র ব্যানারে ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের অপসারণ চেয়ে গণসমাবেশ করেছিল এমপি সমর্থকরা। ওই গণসমাবেশ আয়োজনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন ফারুক আহমেদ। এমনকি তিনি ওই সমাবেশের প্রধান অতিথি ছিলেন। ওই সমাবেশে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে লুটপাট, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির অভিযোগ করা হয়। ওই গণসমাবেশের পরই মূলত দুই পক্ষের বিরোধ চরমে পৌঁছায়। এর জেরে বেরাইদ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ হোসেন মানবজমিনকে জানান, এমপি রহমত উল্লাহ ও ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি রহমত উল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, বেরাইদে আমার কোনো গ্রুপ নেই। সেখানে আমার গ্রুপ করার প্রয়োজন নেই। আমি সংঘর্ষের কথা শুনেছি। কারা করেছে এখনো আমি জানি না। তিনি জানান, তার বড় ছেলে  হেদায়েত উল্লাহকে বেরাইদের মানুষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে চায়। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ সংঘর্ষে জড়াতে পারে। তিনি জানান, তার ছেলে লন্ডন থেকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়িক কাজে জাপানে রয়েছেন। বেরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পরিকল্পিতভাবে এমপি রহমত উল্লাহর গ্রুপের লোকজন আমাদের লক্ষ্য করে গুলি করেছে। গুলিতে আমার ভাই নিহত হয়েছেন। আরো অনেকে আহত হয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status