এক্সক্লুসিভ
সারা দেশে চিকিৎসক ২৭
খুঁড়িয়ে চলছে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ
আল-আমিন:
২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ৮:৩৬ পূর্বাহ্ন
দেশে ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসকের সংকট কাটছে না। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এই বিভাগটি। ঢাকাসহ সারা দেশে ২৭ জন সরকারি ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসক রয়েছে। ঢাকা বিভাগে রয়েছে ৫ জন। তার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই রয়েছে ৪ জন। অথচ হাসপাতালটিতে এ বিভাগে অন্তত ১৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা। গত ৬ বছরে সারা দেশে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হয়েছেন। অথচ দেশে রয়েছে ৬৪টি হাসপাতাল এবং ৪৮৬টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ বিভাগের চিকিৎসকরা হত্যা, আত্মহত্যা, ধর্ষণের আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পিতৃত্ব নির্ণয় করে থাকেন। চিকিৎসক সংকট থাকার কারণে অনেক জেলা হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের প্রধান ও কর্মচারীগণ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। জেলাগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তির লাশের ময়নাতদন্তের জন্য উচ্চ মহলের আদেশের পর ঢাকা বা বিভাগীয় শহর থেকে একজন ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসককে ডাকা হয়। দক্ষ চিকিৎসকের সংকট থাকার কারণে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান অথবা মর্গের কর্মচারীরা মিলেমিশে টাকার বিনিময়ে ভুল তথ্যের সার্টিফিকেট দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অনেক ইন্টার্নি চিকিৎসক দুয়েক মাস ফরেনসিক বিভাগে কাজ করে অন্য কোনো বিভাগে চলে যান। এছাড়াও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা সম্মান পান না চিকিৎসা জগতেও। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সহকর্মীদের কাছেও তারা আখ্যায়িত হন মরা মানুষের ডাক্তার হিসেবে। পেশাগত ঝুঁকি, ঝুঁকি ভাতা না থাকা, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পক্ষে ও বিপক্ষে যাওয়ার ভয়, আদালতে সাক্ষী দেয়া, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে দীর্ঘ জটিলতা, বন্ধের দিন কাজ করেও অতিরিক্ত টাকা না পাওয়া, ময়নাতদন্তের জন্য উন্নত যন্ত্রপাতি না থাকা, প্রত্যেক মাসে এক জেলা থেকে অন্য জেলা যাতায়াতে খরচ না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মেডিকেল কলেজে অধ্যায়নরত নবীন শিক্ষার্থীরা ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হতে চান না। অথচ উন্নত বিশ্বে ফরেনসিক চিকিৎসকদের সম্মানের দৃষ্টিতেই দেখা হয়। কারণ, তারা ময়নাতদন্ত করে মামলার বড় প্রমাণাদি তৈরি করেন। এজন্য তাদের উন্নত নিরাপত্তা ও বিশেষ ভাতা দেয়া হয়। প্রয়োজন ভেদে তাদের পুলিশি প্রটেকশনও দেয়া হয়। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ মানবজমিনকে জানান, সারা দেশে লাশের ময়নাতদন্তকারী ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগেও বিশাল ঘাটতি রয়েছে। দেশে বর্তমানে ২৭ জন ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসক রয়েছে। নানা কারণে কোনো শিক্ষার্থী এই বিভাগে আসতে চান না। বিষয়টি বার বার কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তিনি হতাশা প্রকাশ করে জানান যে, সংকটের কারণ বার বার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হলেও এ বিষয়ে আশানুরূপ কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। একটিতেও নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক। কোথাও মেডিকেল অফিসার, কোথাও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের দিয়ে নেয়া হচ্ছে ক্লাস-পরীক্ষা। নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। দেশের সব জেলা ও উপজেলায় একই অবস্থা বিরাজ করছে। হত্যা না আত্মহত্যা, পিতৃত্ব নির্ণয় ও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়াসহ জটিল সব অপরাধের সুরাহা করতে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের ওপর নির্ভর করতে হয়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণ নির্ণয় ও বিভিন্ন পরীক্ষা করে থাকেন এর বিশেষজ্ঞরা। সঠিক তদন্ত রিপোর্ট না হওয়ার কারণে আদালতের বিচার ব্যবস্থাও বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। সূত্র জানায়, দেশে ৩২ মেডিকেল কলেজ আছে। এর মধ্যে ২৫ মেডিকেল কলেজে চালু রয়েছে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ। ২৫টি মেডিকেল কলেজসহ সারা দেশে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ হচ্ছেন ২৭ জন। এরমধ্যে মাত্র একজন সহযোগী অধ্যাপক রয়েছেন। ১ জন মাত্র অধ্যাপক ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি সদ্য অবসরে গেছেন। এরমধ্যে ২ জন উচ্চ শিক্ষার জন্য বাইরে পড়াশোনার জন্য গেছেন।
সূত্র জানায়, একটি কলেজে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ চালাতে অন্তত একজন অধ্যাপকসহ ৫ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। এই ৫ জনের একজন কম হলেই বিভিন্ন সংকট দেখা দিবে। কিন্তু, অধিকাংশগুলোতেই মাত্র একজন ফরেনসিক চিকিৎসক রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রায় দুই থেকে তিন বছর পর এই সেক্টরের চিকিৎসক খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। তখন কোর্সের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, খাতা দেখা, লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সঠিকভাবে প্রণয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া দুরূহ হবে।
সূত্র জানায়, একটি কলেজে ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ চালাতে অন্তত একজন অধ্যাপকসহ ৫ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। এই ৫ জনের একজন কম হলেই বিভিন্ন সংকট দেখা দিবে। কিন্তু, অধিকাংশগুলোতেই মাত্র একজন ফরেনসিক চিকিৎসক রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রায় দুই থেকে তিন বছর পর এই সেক্টরের চিকিৎসক খুঁজে পেতে কষ্ট হবে। তখন কোর্সের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেয়া, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, খাতা দেখা, লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সঠিকভাবে প্রণয়নসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া দুরূহ হবে।