অনলাইন

রনিকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ, পালিয়ে বেড়াচ্ছে রাশেদ!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ৩:০৬ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। কিন্তু রনির হুমকিতে প্রাণভয়ে সপরিবারে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মামলার বাদি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক মো. রাশেদ মিয়া।
 
গত বৃহস্পতিবার রাতে রাশেদ মিয়া ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
 
এর আগে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত ফি ফেরতের জন্য চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহিদ খানকে বেদম মারধর করেন নুরুল আজিম রনি। মারধরের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

এ ঘটনায় নগরীর চকবাজার থানায় চাঁদাবাজি ও প্রাণেহত্যার উদ্দেশ্যে মারধরের অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষ ড. জাহিদ খান।

এই দুই মামলায় গ্রেপ্তারের জন্য চকবাজার থানার পুলিশ এবং পাঁচলাইশ থানার পুলিশ হন্যে হয়ে খুঁজছে নুরুল আজিম রনিকে। পুলিশের ভাষ্য, কোথাও খুঁেজ পাওয়া যাচ্ছে না রনিকে।

কিন্তু ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়া বলছেন, মামলার পর রনি তাঁকে খুঁজতে সদলবলে তার বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে না পেয়ে কোচিং সেন্টারে গিয়ে খোঁজাখুঁিজ করেছেন। সেখানে না পেয়ে তারা হুমকি দিয়ে আসেন। এরপর বিভিন্ন অপরিচিত নাম্বার থেকে তাঁকে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছেন।

রাশেদ মিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, আগেই আঁচ করেছিলাম যে, মামলা হলে রনি ও তার সহযোগীরা আমাকে হত্যার চেষ্টা করবে। তাই সপরিবারে আমি বাসা ছেড়ে আতœীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি।

তিনি বলেন, নুরুল আজিম রনি সদলবলে বুক ফুলিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর দাপিয়ে বেড়ালেও পুলিশ খুঁজে পাচ্ছে না তাকে। আমাকে খুঁজতে রনি বাসা ও কোচিং সেন্টারে যাওয়া এবং মুঠোফোনে প্রাণ নাশের হুমকির বিষয়ে আমি পাঁচলাইশ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছি।

জিডিতে রনি ছাড়াও অজ্ঞাত পরিচয়ে আরও সাত-আটজন জড়িত থাকার কথা উল্লেখ করেছি। এছাড়া রনি সদলবলে দাপিয়ে বেড়ানোর বিষয় নিয়ে পুলিশকে বারবার তথ্য দেয়া সত্ত্বেও পুলিশ রনি ও তার সহযোগীদের এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

পুলিশের এই ভুমিকাকে রহস্যজনক উল্লেখ করে রাশেদ মিয়া বলেন, মারধর খেয়ে প্রাণে তো কোনোরকমে বেঁচে আছি। এবার মামলা করে পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রাণ হারানোর শঙ্কায় আমি চরম উৎকন্ঠায় মানবেতর দিন যাপন করছি।
একই কথা বলেছেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহিদ খানও। তিনি বলেন, আমাকে মারধর ও চাঁদা দাবির ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও চকবাজার থানার পুলিশ নুরুল আজিম রনিকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি। রনিকে গ্রেপ্তারে পুলিশ না কি অভিযানও চালিয়েছে। অথচ আমাকে মারধরের ঘটনার ১৬ দিন পর কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে মারধর ও চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটিয়েছে রনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল হুদা বলেন, মামলা দায়েরের পর রনিকে গ্রেপ্তারে পুলিশ একাধিক অভিযান চালিয়েছে। কিন্ত তাঁকে পাওয়া যায়নি।

একই ভাষ্য পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদের। তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে নুরুল আজিম রনি আতœগোপনে রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। রাশেদ মিয়াকে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে রাশেদ মিয়া একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যা আমরা তদন্ত করে দেখছি।   

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়া নুরুল আজিম রনি ও তার বন্ধু নোমান চৌধুরী রাকিবের নাম উল্লেখ করে ৭/৮ জনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করেন।

ওই রাতে মারধরের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যা ভাইরাল হয়ে উঠে। এতে নুরুল আজিম রনিকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে। এরপর নুরুল আজিম রনি নিজের ফেসবুক ওয়ালে ছাত্রলীগের চট্টগ্রাম মহানগর পদ থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বরাবরে অব্যাহতির জন্য আবেদন করেন।

এর দুদিন পর গত শনিবার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত করেন জাকারিয়া দস্তগীরকে।  

এর আগে গত ৩১ মার্চ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত ফি ফেরতের জন্য চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহিদ খানকে চকবাজার থানার কয়েকজন পুলিশের সামনে মারধর করে। মারধরের সিসিটিভি ভিডিও ফুটেজটিও ভাইরাল হয়ে উঠে। এ সময়ও তুমুল সমালোচিত হয় নুরুল আজিম রনি।

এ ঘটনায় নুরুল আজিম রনিসহ তার সহযোগী ছাত্রলীগের ৮/৯ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ৩০-৩২ জনের নামে একটি মামলা দায়ের করেন অধ্যক্ষ জাহিদ খান। তবে এর আগে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল হুদা নুরুল আজিম রনির এই পদক্ষেপকে যুক্তিসঙ্গত বলে সমর্থন করেন। ফলে রনিকে গ্রেপ্তারে সংশয় প্রকাশ করেন অধ্যক্ষ ড. জাহিদ খান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status