প্রথম পাতা

এবার বাস চাপায় পা গেল রোজিনার

স্টাফ রিপোর্টার

২২ এপ্রিল ২০১৮, রবিবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে বিআরটিসির বাসচাপায় পা হারিয়েছেন রোজিনা আক্তার নামের এক তরুণী। তিনি রাজধানীর বনানী এলাকায় সড়ক পার হওয়ার সময় বাসে চাপা পড়েন। কাওরান বাজার এলাকায় দুই বাসের চাপায় হাত হারানো রাজীবের মৃত্যুশোক কাটতে না কাটতেই এ ঘটনা ঘটলো। আহত রোজিনাকে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনাস্থলেই রোজিনার ডান পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে নয়টার দিকে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে দ্রুতগামী একটি বিআরটিসি দ্বিতল বাসের নিচে পড়ে যান রোজিনা। এ সময় রাস্তায় থাকা পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে ফুটপাথে নিয়ে আসেন। এ ব্যাপারে প্রত্যক্ষদর্শী শাহজালাল হোটেলের ম্যানেজার খোকন মিয়া জানান, আমি হোটেলের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। মাঝে মাঝে রাস্তার দিকে খেয়াল করছিলাম। দেখলাম মেয়েটি রাস্তার পশ্চিম পাশ থেকে পূর্ব পাশে যেতে চাইছে। তার আগে ৩-৪ জন পার হয়ে গেছেন। মেয়েটি কয়েকবার এগিয়ে আবার পেছনে ফিরে আসলো। তখন আনুমানিক রাত পৌনে নয়টা হবে। দেখলাম দুই-তিনবার চেষ্টা করেও রাস্তা পার হতে পারেনি। শেষবার যখন চেষ্টা করেছে তখনই একটি বিআরটিসির দোতলা বাস সামনে এসে পড়ে। আর মেয়েটি ওই বাসের নিচে পড়ে যায়। ওই সময়ই তার ডান পা শরীর থেকে আলাদা হয়ে যায়। আমিসহ আরো কয়েকজন ধরাধরি করে তাকে ফুটপাথে নিয়ে আসি। ততক্ষণে মেয়েটির পা থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়। আর ফুটপাথের ওপর রক্ত ছড়িয়ে যায়। তখন দুজন লোক দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। খোকন মিয়া জানান, শুক্রবার ছিল ওই এলাকার মার্কেটগুলোর সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। শাহজালাল হোটেল ও তার পাশের একটি মুদি দোকান ছাড়া বাকি দোকান সব বন্ধ থাকে। তাই ব্যস্ততাও একেবারে থাকে না বললেই চলে। আর রাতের বেলায় লোকজনের আনাগোনা ও গাড়ির সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর পর আসা গাড়িগুলো দ্রুতগতি সম্পন্ন ছিল। রোজিনা যখন রাস্তা পার হচ্ছিল তখনও যানবাহনের সংখ্যা খুব কম। সেসময় বিআরটিসি বাসটির পেছনে রাস্তায় আরো কয়েকটি প্রাইভেট কার আসছিল। বাসটি যখন রোজিনাকে ধাক্কা দেয় পেছনের গাড়িগুলো থেমে যায়। সঙ্গে লোকজন ভিড় করে বিআরটিসির দ্বিতল বাসটি আটকে ফেলে এবং চালককে ধরে মারতে মারতে পুলিশে সোপর্দ করে।
এদিকে চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকার ফুটওভার ব্রিজের নিচে একটি চায়ের দোকানে বসা কয়েকজন যুবক জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একটি মেয়েকে বিআরটিসির দ্বিতল বাস সজোরে ধাক্কা দিয়েছে। এ সময় তারাই বাসটিকে আটক করে এবং যাত্রীদের নামিয়ে বাসের চালককে ধরে ফেলেন। পরে ঘাতক চালককে পুলিশের হাতে তুলে দেন। এদের মধ্যে নাসির নামের এক যুবক জানান, আমি তখন হোটেলে শাহজালাল হোটেলের সামনে দাঁড়ানো ছিলাম। দেখলাম হঠাৎ করে একটি মেয়ে বাসের ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। মেয়েটির চিৎকার শুনে চারদিক থেকে লোকজন ছুটে আসে। পরে হোটেলের কয়েকজন কর্মচারী আর রাস্তায় থাকা অন্য পথচারীরা মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালের অর্থোপেডিকস বিভাগের সিডি ওয়ার্ডের জি-৮০ নাম্বার কক্ষে চিকিৎসাধীন রোজিনার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঘোষগাঁও গ্রামে। তার বাবার নাম রসুল মিয়া, মা রাবেয়া বেগম। রোজিনার বাবা মো. রসুল মিয়া বলেন, রোজিনা নিকেতনের ১২ নম্বর সড়কে সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজার বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে গত ৫ থেকে ৬ বছর ধরে কাজ করছে। ৬ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রোজিনা দ্বিতীয়। নিজের সামান্য কৃষিজমি থাকলেও বর্গা জমি চাষাবাদ করে ৮ সদস্যের সংসার চালাতে হয়। এছাড়া রোজিনার গৃহকর্তা তাকে প্রতিমাসে যে ৬ হাজার টাকা পাঠাতেন সেটা দিয়ে সংসার খরচ চলতো। ঘটনার পরপরই রাত ৯টায় রোজিনার গৃহকর্তা তাকে ফোন দিয়ে মেয়ের দুর্ঘটনার কথা জানান। হাসপাতালের বেডে মৃদুকণ্ঠে রোজিনা জানান, ছুটির দিন তিনি তার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে মহাখালীর আমতলীতে গিয়েছিলেন। ফেরার সময় চেয়ারম্যানবাড়ীর কাছে দাঁড়িয়েছিলেন। আরো ৭-৮ জন পথচারীর সঙ্গে রাস্তা পার হতে গিয়ে রোজিনা একটু সামনে এগিয়ে যান। এসময় বিআরটিসির একটি বাস দেখে সে বাসটিকে থামানোর জন্য একাধিকবার সিগন্যাল দেন। হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. মো. মিরাজউদ্দিন মোল্লা বলেন, যখন রোজিনাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় তখন তার পা প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। শুক্রবার রাতেই তার পায়ের একটি জরুরি অপারেশন করা হয়েছে। শনিবার আর একটি অপারেশন করা হয়। এবং পর্যায়ক্রমে তাকে আরো ৩-৪টি অপারেশন করা হবে। এই ধরনের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রোগীর মাথা এবং পেটে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এর থেকে কিডনিতেও প্রভাব পড়তে পারে। ইতিমধ্যে তার বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হয়েছে। রোজিনা মানসিকভাবে আতঙ্কের মধ্যে আছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল নয়। ৭২ ঘণ্টা না গেলে তার সার্বিক পরিস্থিতি বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজানুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় বিআরটিসির বাসটি জব্দ এবং চালক শফিকুল ইসলাম (৩২)কে আটক করা হয়েছে।
এদিকে আহত রোজিনার চিবিৎসা খরচ বহন করার কথা জানিয়েছে বিআরটিসি। গতকাল বিআরটিসির কর্মকর্তারা রোজিনাকে দেখতে হাসপাতালে যান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status