বিশ্বজমিন

বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা

মানবজমিন ডেস্ক

২১ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশের মানবাধিকারের তীব্র সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে যেসব খাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। ২০১৭ সালের ওপর প্রণীত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বর যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটেছে তার মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, নির্যাতন, খেয়ালখুশিমতো ও বৈআইনিভাবে আটকে রাখা, নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে জোর করে গুম করা, নাগরিক স্বাধীনতা সীমাবদ্ধতা। রয়েছে সংবাদ মাধ্যম, মত প্রকাশের স্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা। সীমাবদ্ধতা রয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের স্বাধীনতা নেই। রয়েছে দুর্নীতি, সহিংসতা, লিঙ্গগত বৈষম্য, রয়েছে যৌনতা বিষয়ক অপরাধ, ধর্মীয় বিষয়। আর রয়েছে জবাবদিহিতার অভাব। এখনও মানব পাচার একটি গুরুত্বর সমস্যা হয়ে আছে। রয়েছে শ্রমিকদের অধিকারের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা। শিশু শ্রমের অবস্থা একেবারে বাজে। এ ছাড়া রয়েছে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে নির্যাতনের অভিযোগ থেকে তাদেরকে দায়মুক্তি দেয়ার ব্যাপকতা। নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যেসব নির্যাতন বা হত্যাকা- ঘটায় তা তদন্তে বা বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার সীমিত পদক্ষেপ নিয়েছে। পুলিশ ও নিরাপত্তামুলক সেবাখাতগুলোতে জনগণের রয়েছে অনাস্থা। এ জন্য তারা ফৌজদারি কোন ঘটনা রিপোর্ট করতে বা সরকারি বাহিনীর সহায়তা নেয়া থেকে বিরত থাকেন। শুক্রবার এ রিপোর্ট প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন জে সুলিভান। ওই রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধান সংবাদ মাধ্যম সং মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েঢছে। কিন্তু এই অধিকারের প্রতি মাছে মাঝেই সম্মান দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সংবিধানে সংবিধানের সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহের সমান করে দেখানো হয়েছে। এমন রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে কেউ অভিযুক্ত হলে তাকে তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৬ সালে বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাংবাদিক কনক সারওয়ার সহ উচ্চ পর্যায়ের অনেক ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে মান্না ও কনক সারোয়ারের বিচার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হয় নি সরকার। ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ে এমন বক্তব্যকে সীমাবদ্ধ করেছে আইন। কিন্তু ঘৃণামুলক বক্তব্যের সংজ্ঞা কি তা পরিষ্কার করে বর্ণনা করা হয় নি। এর ফলে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে সরকার বড় শক্তি ব্যবহার করার সুযোগ পায়। রাষ্ট্রের নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যায়, বিদেশী বন্ধুপ্রতীম দেশের বিরুদ্ধে যায়, আইন শৃংখলার বিরুদ্ধে যায়, নৈতিকতার বিরুদ্ধে যায়, আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়ে, মানহানি হয় অথবা অপরাধকে উসকে দেয় এমন সব বক্তব্য সীমিত করতে পারে সরকার। বাংলাদেশে প্রিন্ট ও অনলাইন নিরপেক্ষ মিডিয়া সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে। যেসব মিডিয়া সরকারের সমালোচনা করেছে তারা সরকারের নেতিবাচক চাপের মুখে পড়েছে। মাখে মাঝে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সহ কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শন করেন। এতে গত অক্টোবরে একটি অনলাইন নিউজ আউটলেটের একজন সাংবাদিক উৎপল দাসের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। বলা হয়, অক্টোবরে উৎপল নিখোঁজ হলেও ডিসেম্বরে তাকে ফিরে পাওয়া যায়। তার পর উৎপল দাস যে বক্তব্য দিয়েছেন তার ফিরে আসা নিয়ে তাতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে পর্যবেক্ষকদের অভিযোগ ভীতি প্রদর্শনের পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে জোর করে গুম করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর ও সামাজিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুবাশ্বের হাসান গত বছর ৪৪ দিন নিখোঁজ ছিলেন। দ্য ওয়্যার নামে একটি সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট অভিযোগ করে যে, একটি বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থা এই নিখোঁজের জন্য দায়ী। এর ফলে ওই ওয়েবসাইটটি ব্লক করে দেয় সরকার। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের মতে, ১৭ই মে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিদেশের দূতবাসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়। বাংলাদেশী কোন সাংবাদিক বিদেশ সফরে গেলে তাদের ওপর নজরদারি করতে নির্দেশনা দেয়া হয় ওই চিঠিতে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status