শেষের পাতা

সিটি নির্বাচন পরিচালনায় ৫ ধাপের কমিটি বিএনপির

কাফি কামাল

২১ এপ্রিল ২০১৮, শনিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর ও খুলনা সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনায় ৫ ধাপের কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির অধীনে দায়িত্ব পালন করবে জেলা ও মহানগরের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গঠিত নির্বাচন পরিচালনা ও জোট সমন্বয় কমিটি। নির্বাচনী কৌশল প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, প্রচারণা ও তৃণমূল কমিটিগুলো পরিচালনা করবে এই দুই কমিটি। পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রচারণা ও কেন্দ্রভিত্তিক দায়িত্ব পালন করবে জোনাল, ওয়ার্ড, থানা ও কেন্দ্র কমিটি। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রথমেই দল ও জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল ও দূরত্ব নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হয়।

দফায়  দফায় বৈঠক করে দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব নিরসনের পাশাপাশি সবার মতামতের মাধ্যমে গঠন করা হয় জোট সমন্বয় ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তারপর ধারাবাহিকভাবে তৃণমূল কমিটিগুলো গঠনের কাজ চলছে। সবার সক্রিয়ভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি ও সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর শুরু হবে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণার ডামাডোল। তার আগেই ওয়ার্ড, থানাসহ তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সাংগঠনিক ও মতবিনিময় সভা করছেন সিনিয়র নেতারা। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বুধবার মতবিনিময় করেছেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দুয়েকদিনের মধ্যেই খুলনা যাবেন খুলনা সিটি নির্বাচনে দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। দুই সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয়ভাবেও জোটের দুইটি সমন্বয় কমিটি করেছে বিএনপি। গাজীপুরে জাতীয় পার্টি (জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার আহ্বায়ক ও এলডিপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম সদস্য সচিব এবং খুলনার এনপিপি সভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আহবায়ক ও এনডিপি মহাসচিব মঞ্জুর হোসেন ঈসাকে সদস্য সচিব করে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত জোটের সভায় কমিটি দুটি গঠিত হয়। আগামী ২৪শে এপ্রিলের আগেই প্রথম ধাপের সাংগঠনিক ও মতবিনিময় সভাগুলো সম্পন্ন হবে। সেই সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক প্রচারণাও চালানো হচ্ছে সমানে। খুলনা ও গাজীপুর জেলা এবং মহানগর বিএনপি নেতারা এসব তথ্য জানিয়েছেন। খুলনা সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনায় কৌশল প্রণয়ন ও প্রচারণায় গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ কমিটিতে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি খুলনা জেলা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতাও রয়েছেন।

পাশাপাশি খুলনা সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নির্বাচন পরিচালনায় মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি শাহারুজ্জামান মর্তুজাকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি। জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতারা এ কমিটিতে রয়েছেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অধীনে গঠন করা হয়েছে ২১ সদস্যবিশিষ্ট ১২টি বিষয়ভিত্তিক সাব-কমিটি। যার মধ্যে রয়েছে- সাংগঠনিক, প্রচার, আইন সহায়তা, সমন্বয়, অভ্যর্থনা, নির্বাচনী উপকরণ সরবরাহ, স্বাস্থ্য সহায়তা ইত্যাদি। অন্যদিকে খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনাকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয় কমিটি। এ কমিটিতে বিএনপি নেতাদের পাশাপাশি জোটের শরিক দলের নেতাদের সংযুক্ত করা হয়েছে। খুলনা মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফখরুল আলম জানান, সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জোটের নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বিধাদ্বন্দ্ব, ক্ষোভ-বিক্ষোভ ও দূরত্ব নিরসনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে জেলা ও মহানগর বিএনপির মধ্যে কিছুটা দূরত্ব ছিল। কয়েকদিন আগে একটি জরুরি বৈঠকের মাধ্যমে সেটা নিরসন করা হয়েছে। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলাম মনার নেতৃত্বে ২০দলীয় জোটের সমন্বয় কমিটি ও মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহারুজ্জামান মর্তুজাকে প্রধান করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া খুলনা সিটির ৩১টি ওয়ার্ডসহ সংশ্লিষ্ট থানা কমিটিগুলোর সভাপতি আহ্বায়ক হিসেবে নির্বাচনে দলের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা ও নির্বাচন পরিচালনা করবে।

তাদের অধীনে আড়াইশ’র বেশি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি কাজ করবে। ফখরুল আলম বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন ৩-৪টি করে ওয়ার্ডে বিএনপিসহ অঙ্গ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা সাংগঠনিক সভা করে যাচ্ছি। নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর আমাদের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে। খুলনা সিটিতে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান শাহারুজ্জামান মতুর্জা বলেন, আমরা এখন নেতাকর্মীদের নিয়ে সাংগঠনিক সভা করছি। সাব কমিটি গঠনের কাজ চলছে। অনানুষ্ঠানিক প্রচারণাসহ সবধরনের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন যদি শান্তিপূর্ণ হয়, ভোটারদের লাইন লম্বা হয় ও ভোটাররা ভোট দিতে পারে তাহলে বিএনপি প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত। কিন্তু এখন নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখানোর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের নিষ্ক্রিয় ও গুজব ছড়ানোর মাধ্যমে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার ব্যাপারে অনাগ্রহী করে তোলার চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার কৌশল প্রণয়ন ও প্রচারণায় গঠিত কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ কমিটিতেও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি গাজীপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির সিনিয়র কিছু নেতাও রয়েছেন। পাশাপাশি গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন এ কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন। জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের এ কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

অন্যদিকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির তত্ত্বাবধানে গাজীপুর সিটি করপোরেশনকে আটটি জোনে ভাগ করে ৮টি জোনাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব জোনাল কমিটির মধ্যে- টঙ্গী সাবেক পৌর জোনে শ্রমিক দলের কার্যকর সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, গাজীপুর সাবেক পৌর জোনে মীর হালিমুজ্জামান ননী, কাশিমপুর ইউনিয়নে শওকত হোসেন সরকার, বাসনে সুরুজ আহমেদ, পুবাইলে সোলাইমান খান, গাছায় মোশাররফ হোসেন খান, কাউলতিয়ায় নাজিমউদ্দিন, কোনাবাড়িতে হুমায়ুন কবির খান প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে বিএনপি’র নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন বলেন, নির্বাচনে ৮টি জোনাল কমিটির প্রতিটির কার্যক্রম দেখভাল করবেন একজন করে কেন্দ্রীয় ও জেলার সিনিয়র নেতা। নির্বাচনের মাঠে দলের অভ্যন্তরে যে কোনো ধরনের ভুল বুঝাবুঝি এড়াতে বর্তমান মেয়র এমএ মান্নানসহ জেলার সিনিয়র নেতাদের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং তাদের অনুসারী নেতাদের সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রতিটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. মাজহারুল আলম বলেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের প্রথম ধাপে জোনাল কমিটি গঠন হয়েছে। এখন কেন্দ্রওয়ারী কমিটি গঠনের কাজ চলছে। কমিটিগুলো গঠনে জেলা বিএনপির সকল সিনিয়র নেতার অনুসারীদের সমন্বয়কে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও জেলার সিনিয়র নেতারা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন। কাশিমপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার বলেন, কেন্দ্রীয় সমন্বয় ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ্যে কাশিমপুরের প্রতিটি ওয়ার্ড ও কেন্দ্র কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলে আমরা ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাবো। ওদিকে খুলনায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জোটের সমন্বয় কমিটি গঠন হলেও জোটের শরিক দল জামায়াতের একজন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় সে কমিটি গঠন হয়নি গাজীপুরে। জোটের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। বৃহস্পতিবার জোটের বেঠক শেষে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন। জামায়াতের সে নেতা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে গাজীপুরেও সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে সবাই একযোগে প্রচারণায় নামবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status