অনলাইন

রেলের জমি দখলে দুই শিল্পগ্রুপ মুখোমুখি, সুরাহায় চট্টগ্রাম চেম্বার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৬:০৭ পূর্বাহ্ন

রেলওয়ের বিপুল পরিমান জমি দখলে মুখোমুখি চট্টগ্রামের দুই শিল্পগ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলি ও কেএসআরএম (কবির স্টিল রি-রোলিং মিল) লিমিটেড। আর বিষয়টির সুরাহার চেস্টা চালাচ্ছেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স। এতে মূখ্য ভুমিকা পালন করছেন চট্টগ্রামের রাউজান আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও বন্দর পতেঙ্গা আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। এমএ লতিফ চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও চেম্বারের ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে পরিচিত।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, আমরা দুই পক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। আমরা চেষ্টা করছি উভয় পক্ষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে যাতে আর কোনো ঝামেলার সৃষ্টি না হয়।
 
সংসদ সদস্য এম এ লতিফ বলেন, বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। এখনো উল্লেখযোগ্য কিছু হয়নি। উভয়পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসব চট্টগ্রাম চেম্বারে। শনিবার এ বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা এবং বক্তব্য শুনে গ্রহণযোগ্য ও আইনগত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
 
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ডে পিএইচপি ফোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা। এর পেছনে রেললাইন। এরপর প্রায় ১৬০ একর জমির উপর পিএইচপির গড়ে তোলা বনায়ন প্রকল্প। ওই জমি রেলওয়ের। আর এই বনায়নের প্রবেশপথে রেলওয়ের ১ দশমিক ৬৪ একর জমি আছে। যা দখলে নেয় কেমসআরএম। খবর পেয়ে পিএইচপির লোকজন এসে আবার সেটি ভেঙে দেয়। কেএসআরএমর আবার বেড়া দেয়। এভাবেই চলে দখল আর পাল্টা দখল।

এ নিয়ে কেএসআরএম দু‘দফা সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে কেএসআরএম দাবী করে, ২০১৭ সালের প্রথম থেকে ওই জায়গা তাদের দখলে ছিল। এখনো তাদের দখলে আছে। জোরপূর্বক কারো কোনো জায়গা দখল করেনি কেএসআরএম। একটি পক্ষ তাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে। এ সময় রেলভূমির পূর্বের লাইসেন্স গ্রহীতা নুরুল আলমও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে ৯ই এপ্রিল পিএইচপির পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় বাড়বকু-ে। এতে অভিযোগ করা হয়, কেএসআরএম সন্ত্রাসী কায়দায় বহিরাগতদের নিয়ে তাদের চলাচলের পথ বন্ধ করে বনায়নের বিশাল জায়গা অবরুদ্ধ করে দিয়েছে।
 
তারও আগে ৩১শে মার্চ উভয় পক্ষ সীতাকু- থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করেছে। ১৮ই এপ্রিল বাড়বকু- এলাকায় পৃথক দুইটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। এলাকাবাসীর একটি ব্যানারে অভিযোগ করা হয় বনায়নের নামে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে পিএইচপি। অন্যদিকে একই ব্যানারে কেএসআরএমসহ অন্যান্য শিল্পগোষ্ঠীর পাহাড় নিধন অনতিবিলম্বে বন্ধ করার দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।
 
রেলওয়ের তথ্যানুসারে, ওই জায়গার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি হচ্ছে নুরুল আলমসহ চারজন। তারা কৃষির জন্য লাইসেন্স নেন। কিন্তু ২০০৫ সালে ওই চার ব্যক্তি কাছ থেকে ১ দশমিক ৬৪ একর জায়গার ‘দখল স্বত্ত্ব হস্তান্তর নামা’ মূলে ২০ হাজার টাকায় কিনে নেয় পিএইচপি ফ্যামিলি। পরবর্তীতে কেএসআরএম লিমিটেড ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ‘দখল স্বত্ত্ব হস্তান্তরের না দাবী মুক্তিনামা’ মূলে তিন লাখ টাকায় কিনে নেন নুরুল আলমসহ চার ব্যক্তির কাছ থেকে। কিন্তু ওই জায়গার প্রকৃত মালিক রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
 
পরে রেলওয়ের কাছে এসব জমির লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে পিএইচপি ও কেএসআরএম। রেলওয়ে পিএইচপি, কেএসআরএম ও নুরুল আলমকে নিয়ে ত্রিপক্ষিয় শুনানী করে। শুনানী শেষে ১ দশমিক ৬৪ একর জায়গা কেএসআরএমের পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দীনের অনুকূলে কৃষি লাইসেন্স দেয় রেলওয়ে। মূলত সেই থেকে দুই শিল্প গ্রুপের মধ্যে বিরোধের শুরু।
 
তবে এতদিন বিষয়টি ছিল নিজেদের মধ্যে। পরবর্তীতে তা জটিল আকার ধারণ করলে চেম্বারে নালিশ দেওয়া হয়। এরইমধ্যে ঘটে দখল বেদলের ঘটনা। রেলের জমি নিয়ে উভয় শিল্পগ্রুপ নেয় মারমুখি অবস্থান। শুরু হয় একে অপর পক্ষের প্রতি কাঁদা ছোড়াছুড়ি।
 
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষও বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে। গত ৪ঠা এপ্রিল মাঠ পর্যায় থেকে সদর কাচারি আমিন একটি প্রতিবেদন দেয়। প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে লাইসেন্সকৃত ভূমি হতে কংক্রিটের খুঁটি ও কাঁটা তারের বেড়া অপসারণপূর্বক জবাব দিতে কেএসআরএম লিমিটেডের পরিচালক মো. সেলিম উদ্দীনকে চিঠি দেওয়া হয়।
 
কেএসআরএম লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিভাগীয় ভূ-সম্পক্তি কর্মকর্তার চিঠিতেই জায়গাটি কেএসআরএমের বলে সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। সুতরাং ওই জায়গা অন্যকারো দাবী মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আমরা রেলওয়ের নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। পিএইচপি গ্রুপ যে জমি দখলের কথা বলছে তা ২০১৭ সাল থেকে কেএসআরএমের দখলে আছে। কেএসআরএম অন্যের কোনো জমি দখল করেনি।
পিএইচপি ফ্যামিলির মহাব্যবস্থাপক (এস্টেট) আমির হোসেন বলেন, ২০০৫ সালে থেকে ইজারা হস্তান্তর মূলে রেলওয়ের এ জায়গার দখলস্বত্ব পিএইচপির। কেএসআরএম ওই জায়গা দখল করে সীমানা খুঁটি ও বেড়া স্থাপনের পর পিএইচপির বনায়ন প্রকল্পে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। কেএসআরএম এখানে ক্ষমতা দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status