প্রথম পাতা

র‌্যাফেল ড্রয়ে পুরস্কার নারী মডেল

রুদ্র মিজান

২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

‘হাই, শুভ সকাল, কেমন আছেন। আশা করি ভালো। আর যাদের মন খারাপ কিংবা একাকিত্বে ভুগছেন তাদের একটু আনন্দ দিতে আমি আমার টিম নিয়ে হাজির হয়েছি। আমার আজকের টিমে রয়েছে বেশ কিছু অসাধারণ সুন্দরী, স্মার্ট, ভদ্র, শিক্ষিত মেয়ে ও ভাবি বয়সের...। যাদের দেখে আপনি হবেন মুগ্ধ। আপনাকে কিছু সময়ের মধ্যে সুখের সাগরে ভাসাবে।... কল দিয়ে চলে আসুন গুলশানে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, কোলাহলমুক্ত পরিবেশ।’
সূত্রে জানা গেছে, এভাবেই অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিয়ে এসকর্ট সার্ভিস দেয়া হয়। এই এসকর্ট প্রোভাইডারদের মধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রয়েছে। আরো ভয়াবহ তথ্য হচ্ছে, এসকর্টদের মধ্যে রয়েছে, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যাললের ছাত্রী, ব্যাংকার, মডেল, প্রেজেন্টার, ডিজে। রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারা এলাকায় বিভিন্ন ফ্ল্যাট বাসায় অবাধে চলতো এসকর্ট সার্ভিস। নয় জন এসকর্ট প্রোভাইটারকে গ্রেপ্তারের পর জানা গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু দেশে না, বিদেশেও এসকর্ট সার্ভিস দিতো এই চক্র। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়াতে যৌনকাজের জন্য পাঠানো হতো নারীদের। চক্রটি প্রাপ্ত বয়স্কদের পাশাপাশি কম বয়সী মেয়েদের যৌনকর্মে ব্যবহার করতো। এই চক্রের হোতাদের অন্যতম মাহতাব রফিক। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের এই ব্যবসায়ী দেশেব্যাপী গড়ে তুলেছে অনলাইনভিত্তিক এসকর্ট সার্ভিস।
ইন্টারন্যাশনাল সেক্স গাইডে ঢাকার যেসব তথ্য রয়েছে সেখানে পাওয়া গেছে, এই চক্রের রিকন খানের নাম। সেইসঙ্গে এসকর্ট সার্ভিস এজেন্সির ঠিকানা। তথ্যটি জানার পর তদন্ত শুরু করে সাইবার ক্রাইম ইউনিট। এই সূত্র ধরেই অনলাইনে খদ্দের সেজে রিকন খানের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশ। জানানো হয়, প্রয়োজন কম বয়সী মেয়ে। রিকন খান জানায়, তাদের কাছে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সের বেশ কয়েকজন মেয়ে রয়েছে। গত ১৫ই এপ্রিল রাতে পার্টিতে এনজয় করা যাবে তাদের সঙ্গে। নিকেতনের একটি বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে পার্টি। এ উপলক্ষে বিক্রি করা হয় টিকিট। প্রতিটি টিকিটের মূল্য আট হাজার টাকা। রাতভর অনুষ্ঠানে থাকবে ডিজে পার্টি, নুড ড্যান্স ও র‌্যাফেল ড্র। র‌্যাফেল ড্র’তে বিজয়ী পাবেন এক রাতের জন্য একজন নারী মডেল। দুটি টিকিট সংগ্রহ করে পুলিশ। এর মধ্যেই রেকি করা হয় নিকেতনের ওই গেস্ট হাউজ। কিন্তু ওই দিন পার্টিটি হয়নি। তারপরও থেমে থাকেনি পুলিশ। সিটিটিসি’র সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে শুরু হয় অভিযান। খদ্দের হিসেবে যোগাযোগ করা হয় ‘পাশা ভাই’ নামে এই চক্রের এসকর্ট প্রোভাইটারের সঙ্গে। তার কথামতো গুলশানের ১১৩ নম্বর সড়কে গেলে সাক্ষাত হয় তার সঙ্গে। সেখানেই গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। তারপর তার দেয়া তথ্যমতে নিকেতন, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক দিনে গ্রেপ্তার করা হয় নয় জনকে। গতকাল ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এসকর্ট প্রোভাইটারদের হোতা মাহতাব রফিক চট্টগ্রামে লালাপাড়ার বাসিন্দা। লন্ডনের কিংস্টোন ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল বিভাগে লেখাপড়া করেছে সে। ক্রিসমাস নামে চট্টগ্রামে তার একটি পোশাক কারখানা রয়েছে। এসকর্ট সার্ভিসের সাইটগুলোর এডমিন হচ্ছে মাহতাব রফিক। এই চক্রের প্রত্যেকের ছদ্ম নামে ফেসবুকে রয়েছে বিভিন্ন আইডি, পেইজ। এগুলো থেকে মূলত এসকর্ট সার্ভিসের প্রচারণা চালানো হতো। তারা এসকর্ট এজেন্সির নামে বিশেষ অ্যাপস তৈরি করেছিল। বিশ্বস্ত খদ্দের ও নিজেদের মধ্যে এই অ্যাপসের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হতো।
তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুলপড়ুয়া মেয়েদের বায়োটাডা পাওয়া গেছে। এসব মেয়েরা এসকর্ট হিসেবে সার্ভিস দিতে তাদের কাছে ছবিসহ বায়োডাটা জমা দিতো। এই ছবিগুলো মুখ ঢেকে প্রকাশ করা হতো অনলাইনে। স্বল্প বসনা এসব ছবিতে সহজেই আকৃষ্ট হন খদ্দেররা। এসকর্ট সার্ভিসের জন্য ইউটিওব চ্যানেল ও ফেসবুকে নানা ধরনের বিজ্ঞাপন দিতো এই চক্র। যেখানে হাই প্রোফাইল এসকর্ট, মিডিল ক্লাস ও রিজিনেবল এসকর্ট, স্পা সার্ভিসের কথা উল্লেখ রয়েছে। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, বিভিন্ন পর্যায়ের পরিচিত মুখ যেমন এসকর্ট হিসেবে সার্ভিস দিয়ে থাকে তেমনি তাদের এজেন্সির সেবা নিয়ে থাকেন দেশের অনেক পরিচিত মুখ। মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের তথ্য দিয়েছে চক্রটি। যারা এই এসকর্ট সার্ভিসের সঙ্গে জড়িত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা ছদ্মনাম ব্যবহার করে।
এ বিষয়ে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের উপ-কমিশনার আলিমুজ্জামান বলেন, একাধিক অভিযোগে  ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। দেশে-বিদেশে এই চক্রটি এসকর্ট সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছিল। তারা নানাভাবে অল্প বয়সী মেয়েদের বিপথগামী করছিল।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছে- চট্টগ্রামের মাহতাব রফিক, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার মাহবুব, জামালপুরের আসিফ হাসান তুষার, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মোস্তাফা মোশাররফ, চাঁপাই নবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কাদের নেওয়াজ, চুয়াডাংগার আলমডাঙ্গার রেজয়ানুল হায়দার, বাগেরহাটের সৈয়দ বিপ্লব হাসান, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার নুরুন নাহার নুরী, রাজশাহী নয়ন নূর রহমান, সিরাজগঞ্জের আবদুল হাকিম, ঢাকা মোহাম্মদপুরের মোর্শেদুল আলম, নওগাঁর মাহফুজুল আলম প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status