শেষের পাতা

এবার কোচিং সেন্টারের মালিককে পেটালেন রনি

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩৪ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকায় বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর নিয়ে সমালোচনার রেশ না কাটতেই এবার এক কোচিং সেন্টারের মালিককে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সমপাদক নুরুল আজিম রনির বিরুদ্ধে। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকার ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক মোহাম্মদ রাশেদ মিয়া নগরীর পাঁচলাইশ থানায় এই বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এতে ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও তার বন্ধু নোমানের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে, এ মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় সমালোচনার মুখে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন রনি।
ওদিকে, লিখিত অভিযোগে রাশেদ জানান, গত প্রায় আট বছর যাবৎ তিনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের জিইসি মোড় শাখার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগ নেতা নুরুল আজিম রনি ও তার অনুসারীরা তার প্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া করতো এবং চাঁদা নিতো। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি রনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের অফিসে এসে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এসময় রাশেদ এতগুলো টাকা কোথা থেকে দেবে বলতেই নুরুল আজিম রনি তাকে মারধর শুরু করেন।
ইউনিএইড কোচিং সেন্টার অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, প্রথমে ইউনিএইড কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে আঙ্গুল তুলে শাসাতে ও পরে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায় নগর ছাত্রলীগ সাধারণ সমপাদক নুরুল আজিম রনিকে। এর একপর্যায়ে রাশেদের গালে থাপ্পড় মারতে দেখা যায় রনিকে। পরে চুলের মুঠি ধরে টানাহেঁচড়া করে বারবার রাশেদের গালে থাপ্পড় মারতে থাকেন রনি। এর মধ্যে মাঝে মধ্যে চলতে থাকে তার শাসন। এভাবে প্রায় আড়াই মিনিট চলার পর রুম ছেড়ে বেরিয়ে যান রনি। কয়েক মুহূর্ত পর আবারো ফিরে এসে তর্কে জড়ান রনি। পরে দীর্ঘ সময় কারো সঙ্গে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। পুরো ঘটনায় রাশেদকে করজোড়ে চেয়ারে বসে থাকতে দেখা গেছে।
ঘটনার শেষ এখানেই নয়, মারধরের এ ঘটনার প্রায় দুইমাস পর আবারো রনির নির্মমভাবে মারধরের শিকার হন রাশেদ মিয়া। গত ১৩ই এপ্রিল সুগন্ধার বাসা থেকে মুরাদপুর যাওয়ার পথে মোহাম্মদপুর মাজার এলাকায় আবারো রনি ও তার সঙ্গীদের আক্রমণের শিকার হন রাশেদ।
সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে এজাহারে তিনি লিখেছেন, আসামিগণ আমাকে একা পেয়ে টানাহেঁচড়া করে মুরাদপুর বুড়িপুকুর পাড় এলাকায় নিয়ে যায়। এসময় তারা আগের মতোই ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমি বলি, এতগুলো টাকা আমি কেমনে দেব? সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে নুরুল আজিম রনি অফিসে থাকা হকিস্টিক দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় আঘাত করলে আমি মাথা সরিয়ে নিলে আঘাতটি আমার বাম কানে লাগে। মারাত্মকভাবে জখমপ্রাপ্ত হয়ে আমার বামকানের শ্রবণশক্তি এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।
এরপর ২ নম্বর আসামি হকিস্টিক দিয়ে আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এসময় রনি আমাকে ২০ লাখ টাকা না পেলে জানে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ পর্যায়ে অনেক বুঝিয়ে বাসা থেকে ৪০ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলি। এসময় ১ নম্বর আসামি বাকি টাকা না দেয়া পর্যন্ত আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্ট জমা দিতে বলে। পরে রনির এক সহযোগী আমাকে সুগন্ধার বাসায় নিয়ে আসে। এসময় বাসায় ৩৫ হাজার টাকা পাই এবং সঙ্গে সঙ্গে তা হামলাকারীদের হাতে তুলে দেই। সেই সঙ্গে রনির কথা মেনে আমার এবং আমার স্ত্রীর পাসপোর্টও দেই। পরে তারা আমাকে মোটরসাইকেলে করে চট্টগ্রাম কলেজের গেটে ফেলে দিয়ে চলে যায়।
একাধিক সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় রনি ইউনিএইড কোচিং সেন্টারে তার মালিকানা আছে বলে দাবি করতেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ার পরেও এ কোচিং সেন্টারকে রনি নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কোচিং সেন্টারের মালিক রাশেদ মিয়াকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে নুরুল আজিম রনি বলেন, রাশেদ মিয়া আমার পার্টনার। কোচিং সেন্টারে আমার শেয়ার আছে। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি ব্যবসায়িক হিসাব দিচ্ছিলেন না। আমার কাছ থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছিলেন না। এসব বিষয়ে তার সঙ্গে আমার দূরত্ব হয়। তার কাছ থেকে কোনোরকম চাঁদা দাবি করা হয়নি।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, একটি কোচিং সেন্টারের মালিককে মারধরের বিষয়ে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সঙ্গে প্রমাণ হিসেবে কিছু ছবি এবং একটি ভিডিও ফুটেজ আমরা পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status