শেষের পাতা

ফেসবুক লাইভে যুবকের আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার

২০ এপ্রিল ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

‘হার্ট করা খুব খারাপ একটা জিনিস। মানুষ থাকতে পারে না হার্ট করলে। মানুষের অনেক কষ্ট হয়।’ ফেসবুক লাইভে বন্ধুদের সঙ্গে নিজের কষ্টের কথা বলতে বলতেই ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেছেন এক তরুণ। নিহত তরুণ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের ছাত্র আরিফ জাহান সায়েম। তার স্বজনরা দাবি করেছেন, প্রেমিকার কাছ থেকে মানসিক আঘাত পেয়ে আত্মহত্যা করেছেন এই তরুণ। মৃত্যুর আগে লাইভে কথা বলতে বলতে বারবার কান্না করেছেন তিনি। দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তার মা মোছাম্মদ শানু।
গত ১৭ই এপ্রিল পৌনে ৩টার দিকে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানের আশকোনায় ঘটনাটি ঘটে। আত্মহত্যার আগে ফেসবুক লাইভে আসেন সায়েম। দর্শন অপশনে ওনলি ফ্রেন্ড করা থাকায় ভিডিওটি সবার নজরে পড়েনি। তবে ফেসবুকের লাইভের ১৭ মিনিটের ওই ভিডিওটি এসেছে এই প্রতিবেদকের হাতে। এতে দেখা গেছে, টিশার্ট, জলপাই রঙের প্যান্ট পরনে সায়েম একটি চেয়ারে বসেছেন। তার মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। বিমর্ষ চেহারা। বারবার মাথায় হাত দিয়ে চুল টানছিলেন তিনি। ঘরের ভেতরে রয়েছে সূর্যের আবছা আলো। ইয়েস বলেই কথা শুরু করেন সায়েম। ফোনে তখন ক্ষুদেবার্তার টুসটাস শব্দ। এক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে সায়েম বলছেন, ‘আরাফাত, মেসেজটা না দেয়া বেটার। আর একটা কথা কী, মানুষ... মানুষতো মানুষই। মানুষতো আল্লাহ তৈরি করছে। সবারতো একটু আধটু মন আছে। সবার লাইফে একটা স্টোরি থাকে। সেটা হলো টাইম পাস করা। তবে টাইম পাস করা কারও উচিত না। কারণ সবারই একটা ফিলিংস আছে। ইমোশন আছে। এটা হার্ট করে মানুষকে। কথা হচ্ছে কি যে, আমরা মানুষ সবারই একটা ফিলিংস আছে। কেউ কাউরে ভালোবাসি, কেউ কাউরে ভালোবাসি না। তবে কাউকে হার্ট করা উচিত না। হার্ট করা খুব খারাপ একটা জিনিস। মানুষ থাকতে পারে না হার্ট করলে। মানুষের অনেক কষ্ট হয়...।’
বলতে বলতে কাঁদতে থাকেন সায়েম। চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল। আরেক বন্ধুর নাম ধরে আবার বলেন, ‘এইহানে জীবন আছস না, একটা কথা কই ভাই আরাফাত, জীবন- সবাই একটু কষ্ট কইরা বাসায় আসিস। আমার যত ভাই। যা দেখার দেখবা, আল্লাহ দিলে চলে যাব।’ তারপর নিজেকে গালি দিয়ে সায়েম বলেন, ‘ভালো হইতে পারলাম না কারও কাছে।’ আবার কাঁদতে থাকেন।
চোখের পানি মুছতে মুছতে সায়েম বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বাসায় আসিস একবার। আর একটা কথা কী- তোরা ভালো থাকিস। তগো লগেতো অনেক কিছু করছি, গায়ে হাত দিছি। আর কত কমু ক। আমি পোলাপান দেইখা যে আমার মন নাই- তাতো না, আমার মন আছে। মন থাকা সত্ত্বেও অনেকেরই পাই না।’ এ সময় লাইভে যোগ দেয়া আরেক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে সায়েম বলেন, ‘হৃদয় আইয়া পড়ছে। কি অবস্থা। একবার আইস ভাই আমারে দেখতে। আমিও মানুষরে ভাই। ঠিক আছে ভাই, ভালো থাকবি তোরা।’
এটাই ছিল তার শেষ কথা। তারপর চোখ মুছতে মুছতে খাটের ওপরে আগে থেকে রাখা একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে উঠেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, আগে থেকেই ফ্যানের সঙ্গে রশি বেঁধে রেখেছিলেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই চেয়ারটি পা দিয়ে সরিয়ে ঝুলে যান সায়েম। প্রায় ১১ মিনিট পরে দরজা খোলা ও কান্নার শব্দ, চিৎকার শোনা যায়।
এ বিষয়ে সায়েমের মা শানু জানান, লাইভে সায়েমের এসব কথা শুনে তার বন্ধুরা শানুর ফোনে বারবার কল দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তখন ঘুমে ছিলেন। একপর্যায়ে বন্ধুরা সায়েমের বাসায় ছুটে গেলে তার মা শানুসহ বন্ধুরা মিলে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে যান। এ সময় তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। শানু বলেন, আফসানা মিমি নামে উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের একটি মেয়ের সঙ্গে কয়েক মাস যাবৎ  প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল সায়েমের। তাদের সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ঠ। মিমি তাদের বাসায়ও এসেছিল সায়েমের সঙ্গে। ওই মেয়েটির কারণেই তার ছেলেটি আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেন শানু। তবে আফসানা মিমির বিস্তারিত পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।
সায়েমের ফেসবুক আইডিতে দেখা গেছে, ৯ই এপ্রিল ফাঁসির দড়ির ছবি কাভার করা হয়েছে। তার আইডিতে বিভিন্ন ছবি পোস্ট করে বিচার দাবি করেছেন সায়েমের বন্ধুরা। এসব বিষয়ে সায়েমের মা শানু বলেন, ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় আমি মামলা করব। আমি বিচার চাই।
সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী সায়েম মা ও একমাত্র বোনের সঙ্গে থাকতেন আশকোনার মসজিদ সংলগ্ন বাড়িতে। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status