প্রথম পাতা
সিটি নির্বাচনে সেনা চায় বিএনপি ইসির না
স্টাফ রিপোর্টার:
১৮ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন
গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। দুই সিটিতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের স্বার্থে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া বাতিল ও ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবিও করেছে দলটি। গতকাল নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল এসব দাবি জানায়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ইসির সঙ্গে বিএনপি প্রতিনিধিদলের বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপি সেনা মোতায়েন, গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে প্রত্যাহারসহ ছয় দফা দাবি জানায়। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়ার মুক্ত থাকার ওপর জোর দেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এর আগেসিইসি ৮ই এপ্রিল সেনা মোতায়েন নিয়ে কথা বলেন। ওই দিন এক বৈঠকে অংশ নেয়া শেষে সিইসি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, অতীতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী নির্বাচনেও সেনা মোতায়েন হতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা উচিত। তবে স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন আমরা একেবারেই চাই না। বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনা নেই ইসির। আর গাজীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশনকে সামনে রেখে কমিশনের সঙ্গে বিএনপি বৈঠক করেছে। দলের মূল দাবি, দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সাত দিন আগে যেন সেনা মোতায়েন করা হয়। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচনের ওপর ভোটারদের আস্থা নেই। সেনা মোতায়েন হলে এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে। এই নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানানো হয়েছে কমিশনকে। ইভিএম প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৈঠকে দুই নির্বাচনকে সামনে রেখে কমিশনের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনারদের নেতৃত্বে দুটি সমন্বয় কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিএনপি। মোশাররফ হোসেন জানান, আইনের কোন ধারায় কোন এখতিয়ারে ইসি এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। কারণ, অতীতে এ ধরনের কমিটি গঠনের উদাহরণ নেই। সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না, এ দুটি নির্বাচনে তার ইঙ্গিত থাকবে। মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্ত থাকতে হবে। বিএনপি ও ২০ দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা অংশগ্রহণমূলক হবে না। প্রতিনিধিদলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ ও যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার ছিলেন। এর আগে সিইসির সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধি দলের বৈঠকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে কিছু লিখিত দাবি পেশ করা হয়। দলটির অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে, সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের চিহ্নিত দলবাজ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বদলি করে নিরপেক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না; বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বাদ দিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল তৈরি করা; রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ করে গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি প্রদান করা; প্রচার-প্রচারণার ক্ষেত্রে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে; জেলা নির্বাচন অফিসে অভিযোগ কেন্দ্র চালু করে অভিযোগ দায়েরের ১২ ঘণ্টার মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হবে; ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে; কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে আনসার-ভিডিপি হিসেবে ভোটকেন্দ্রে নিয়োগ দেয়া যাবে না; কমিউনিটি পুলিশের কোনো সদস্যকে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব দেয়া যাবে না; পরীক্ষামূলক বা অন্য কোনো অজুহাতে ভোটগ্রহণে ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না।