দেশ বিদেশ
সম্প্রীতির লক্ষ্যে কলকাতায় মঙ্গল শোভাযাত্রায় বর্ষবরণ
কলকাতা প্রতিনিধি
১৭ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:২০ পূর্বাহ্ন
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান জানিয়ে কলকাতায় একাধিক মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নিয়েছেন এপারের মানুষ। বাংলাদেশের অনুকরণে গত বছর থেকে কলকাতায় শুরু হয়েছে পথ রাঙিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা। এবারও কলকাতায় তিনটি মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন ছিল। প্রতিটি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন বিশিষ্ট জনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ। কলকাতার বাইরে বিভিন্ন জেলাতেও মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। দক্ষিণ কলকাতায় ‘বাংলা নববর্ষ উদযাপন পরিষদ’ আয়োজিত দুটি শোভাযাত্রায় সকলের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে, নববর্ষে এই হোক আমাদের প্রত্যাশা, আমরা দেশ গড়বো সামপ্রদায়িক সমপ্রীতিতে। এই শোভাযাত্রায় অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকেও এসেছিলেন শিল্পী, সাংবাদিক সহ অনেক মানুষ। রোববার সকাল আটটায় দক্ষিণ কলকাতার গাঙ্গুলিবাগান থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই মঙ্গল শোভাযাত্রার সূচনা হয়েছিল এক নজর আলি নামের এক রিকশাচালকের হাতে। শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছিলেন অধ্যাপক পবিত্র সরকার, চিত্র পরিচালক রাজা সেন, সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়, অধ্যাপক সুমন পাল ভিক্ষু প্রমুখ। শোভাযাত্রায় ছিল কাঠি নাচ, সাঁওতালি নাচ, রণপা নৃত্য, ঐতিহ্যের গান, লোকগীতি, ঢাকি দলের ঢাকের বাজনা আর শ্রুতি নাটক। এবারও এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় ছিল বিক্রমপুরের ঘোড়া, সুন্দরবনের বাঘ, বাঁকুড়ার প্যাঁচা। ছিল দুই বাংলার শিল্পীদের তৈরি মুখোশ। শিশুরা সেজেছিল সাত ভাই চম্পা, হাট্টিমাটিম টিম, লাল কমল, নীল কমল আরো নানা রূপকথার সাজে। ছিল সুন্দরবনের মানিক পীরের গান, গাজী পীরের গান আর দুই বাংলার অতীত দিনের লোকগান। ছিল রাস্তাজুড়ে আলপনা। আরেকটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার সুকান্ত সেতু থেকে ঢাকুরিয়া পর্যন্ত। এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অমিয় বাগচী। উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তী, কলকাতার সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য, আজিজুল হক, সাংবাদিক ঊর্মি রহমান প্রমুখ। এদিন ভাষা ও চেতনা সমিতিও শোভাযাত্রা এবং সারাদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ষবরণ করেছে। সমিতির উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রা কলকাতার জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু করে শেষ হয় রবীন্দ্র সদনে। এই মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, মন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, কলকাতার সাবেক মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য, কবি সুবোধ সরকার, অধ্যাপক ইমানুল হক প্রমুখ। আকাদেমী অব ফাইন আর্টসের সামনে সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাঙালি পান্তা-শুঁটকির স্বাদ নিয়েছেন। এদিকে নববর্ষ উপলক্ষে জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ভোলাপাড়া সীমান্তে দুই বাংলা এক হয়ে গিয়েছিল স্বজনদের মিলনের আকাঙ্ক্ষায়। প্রতি বছর চৈত্রের শেষে ভোলাপাড়ায় কাঁটাতারের বেড়ার দু’পাশে জড়ো হতে দেয়া হয় বাসিন্দাদের। ভিনদেশে থাকা আত্মীয় পরিজনদের দেখতে ভিড় জমান দু’দেশের মানুষই। চার ঘণ্টা ধরে খোলা থাকে সেটি। এ দিনও এপারে থাকা হাত কুড়িয়ে নেন ওপার থেকে ছুড়ে দেয়া উপহার। কেউ কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকে হাত গলিয়ে দিয়ে স্বজনদের স্পর্শ করে আত্মীয়তা অনুভব করার চেষ্টা করেন।