এক্সক্লুসিভ

ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে চেয়েছিল ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা

দীন ইসলাম:

১৭ এপ্রিল ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

নির্ধারিত ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে চেয়েছিল ৫৩ হাজার রোহিঙ্গা। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের বিভিন্ন চেকপোস্টে আটক করে তাদেরকে ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কড়াকড়ির পরও বিভিন্ন জেলায় অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে তিন হাজার ২০ জন রোহিঙ্গাকে কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়েছে। গত ১০ই এপ্রিল চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের (রোহিঙ্গা) ত্রাণ কার্যক্রম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ অন্যান্য কার্যক্রম নিয়ে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসারের সমন্বয়ে আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারের সহায়তায় চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। এসব ভ্রাম্যমাণ আদালত এরই মধ্যে ৬২৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিয়েছে। বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এক হাজার পুলিশ সদস্য, ২২০ জন ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে এবং সেনাবাহিনীতে এক হাজার সাতশ’ জন সদস্য ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সহায়তা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত সব মিলিয়ে রোহিঙ্গার সংখ্যা আট লাখ ৯৬ হাজার ১৫৬ জন। এর মধ্যে দুই লাখ তিন হাজার ৪৩১ জন আগে থেকেই ছিল। গত বছরের ২৫শে আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখ ৯২ হাজার ৭২৫ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। এর বিপরীতে এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া, মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ইরান, সৌদি আরব, সুইজারল্যান্ড, জাপান, চীন, ইংল্যান্ড, নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, ইতালি, সিঙ্গাপুর, আরব আমিরাত ও স্লোভাকিয়াসহ ১৬টি দেশ থেকে ত্রাণ সহায়তা পেয়েছে সরকার। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রথমে অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় দেয়া হয়।
ওই সব আশ্রয় ক্যাম্পে সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন দাতা সংস্থার দেয়া ত্রাণসামগ্রী পান। এদের মধ্যে কিছু লোক দেশের বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যাচ্ছেন। কারণ হিসেবে জানা গেছে, যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমারে সচ্ছল জীবনযাপন করতেন এরাই মূলত ক্যাম্প ত্যাগ করে বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া নিয়ে স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার সুযোগ খুঁজছেন। আবার অনেকের ছেলেমেয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকায় সেখান থেকে সব কাগজপত্র তৈরি করে জাল ভিসার মাধ্যমে পরিবার-পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন। তারা মনে করছেন, মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন চুক্তি আদতে কোনো ফল বয়ে আনবে না। ওই চুক্তি অনুযায়ী মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া যাবে না। তাই দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ছেন তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৫ শতাংশ পরিবার ধনাঢ্য। তাদের ছেলেমেয়েরা মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। বাকি ৭৫ শতাংশ পরিবারের মধ্যে ২০ শতাংশ পরিবার সচ্ছল। যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে উন্নত জীবনযাপনের জন্য গোপনে দালালের মাধ্যমে ক্যাম্প ত্যাগ করছেন। আর বাকি ৫৫ শতাংশ পরিবার হতদরিদ্র। যারা মিয়ানমারের চাইতে এখানে ভালো রয়েছেন বলে স্বীকার করেছেন। এসব রোহিঙ্গার দাবি, তাদের বসতভিটা ফিরে পাওয়ার নিশ্চয়তা ও স্বাধীন চলাফেরার সুযোগ নিশ্চিত করলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন। এরই মধ্যে কুতুপালং ক্যাম্প থেকে প্রায় শতাধিক পরিবার বিদেশে চলে গেছে। আরো কিছু পরিবার চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status