অনলাইন

‘হঠাৎ বদলে গেল দু’ভাইয়ের ঠিকানা, রয়ে গেল কাঁটাতার’

১৬ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ১:৪৯ পূর্বাহ্ন

কাঁটাতার ছুঁয়ে মুষড়ে বসেছিলেন এক বৃদ্ধ। কাঁটাতার পেরিয়ে চেনা কাউকে খুঁজে বেরাচ্ছিল তাঁর চোখ। দেখা পেতেই বাঁধ ভেঙে জল এল বৃদ্ধের চোখে। কথা বললেন কী, রুমাল বের করে তা সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন তিনি। কখনও বেড়া ডিঙিয়ে উড়ে এল ইলিশ, বিস্কুট, চানাচুর। ওই তালিকায় ছিল প্রিয়জনের জন্য কেনা তাঁতের শাড়ি, নতুন সালোয়ারও। এমনই কত কত ছবি উঠে এল জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের ভোলাপাড়ায়।

বাংলা নববর্ষের দিনে ভোলাপাড়া যেন ছিল মিলন মেলা। প্রতি বছর চৈত্রের শেষে ভোলাপাড়ায় কাঁটাতারের বেড়ার দু’পাশে জড়ো হতে দেওয়া হয় বাসিন্দাদের। ভিনদেশে থাকা আত্মীয় পরিজনদের দেখতে ভিড় জমান দু’দেশের মানুষই। চার ঘণ্টা ধরে খোলা থাকে সেটি।

এ দিনও এপারে থাকা হাত কুড়িয়ে নিল ওপার থেকে ছুঁড়ে দেওয়া উপহার। কেউ কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকে হাত গলিয়ে দিয়ে ছুঁলেন ওপার থেকে এগিয়ে আসা হাত। দু’পারেই নামল চোখের জল।

ফুলবাড়ি থেকে পারুল রায় স্বামী ইন্দ্রজিৎকে নিয়ে এসেছিলেন ভোলাপাড়ায়। ওপারে বাংলাদেশের পঞ্চগড়ে থাকেন তাঁর বোন। প্রায় দশ বছর ধরে দেখা নেই দু’বোনের। কিন্তু মন তো টানে। পাসপোর্ট-ভিসা করে বাংলাদেশে যাওয়ার সাধ্যও তাঁদের নেই বলে জানান তাঁরা। মিলন মেলার কথা শুনেছেন বোনের কাছেই। বললেন, ‘‘গতকাল রাতে বোন বলল মেলা হবে। একবারটি আয়। তারপরে না এসে পারিনি।’’

ছোটবেলায় একই জামা পাল্টাপাল্টি করে পরতেন দু’জনে। এতদিন বাদে দেখা, তাই বোনের জন্য এনেছিলেন তাঁতের শাড়ি এনেছিলেন। বেড়ার এপার দিয়ে ছুড়লেন সেটি। ওপার থেকে বোন ছুড়লেন ইলিশ।

সীমান্তের নিয়ম অনুযায়ী কাঁটাতারের বেড়া থেকে দেড়শো মিটার পর্যন্ত যাতায়াত নিষেধ। শুধু শেষ চৈত্রের এক দিনে কয়েক ঘণ্টার জন্য বিধি শিথিল হয়। সে দিনই হয় মিলন মেলা। এ বছর পয়লা বৈশাখে পড়েছে সেই দিন। এ বার ভোটের ছোঁয়া লেগেছে মিলন মেলাতেও। তৃণমূল বিধায়ক খগেশ্বর রায় দলের জেলা পরিষদ প্রার্থীকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন। মেলাতেই প্রচার সারলেন। খগেশ্বরবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মেলা দেখতে এসেছিলাম। প্রচার করতে নয়।’’ শুধু উপহার নয়। দেদার বেচাকেনাও চলে।

দুপুর গড়াতেই বেড়ার সামনে থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিল বিএসএফ। তখনও পাট খেতের আলে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ নিয়ামত হোসেন। ও পারে আল পেরিয়ে ফিরছেন আলিকত আলি এবং তাঁর স্ত্রী। চোখ মুছলেন নিয়ামত। বললেন, ‘‘দু’ভাই একসঙ্গেই বড় হয়েছি। হঠাৎ ঠিকানা বদলে গেল। তারপরে কত কি বদলে গেল, শুধু কাঁটাতারটাই থেকে গেল।’’
সুত্র - 
আনন্দবাজার 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status