অনলাইন

বাংলাদেশের নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা এবার দিল্লিতে

১৬ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

ঢাকায় বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য পহেলা বৈশাখ যেরকম মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয় - সেই অভিনব আয়োজন এবার এই প্রথমবারের আয়োজিত হল ভারতের রাজধানী দিল্লির বুকেও।

শনিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশে হাই কমিশনের উদ্যোগে দিল্লির 'প্রবাসী ভারতীয় কেন্দ্রে'র সুপ্রশস্ত চত্ত্বরে রংবেরংয়ের মুখোশ আর মাঙ্গলিকী নিয়ে এই হাঁটল সেই শোভাযাত্রা - তুমুল করতালিতে তাদের অভিবাদন জানালেন উপস্থিত বেশ কয়েকশো অতিথি।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের নিজেরও থাকার কথা ছিল সেই অনুষ্ঠানে - যদিও শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততায় তার আর আসা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু বার্তা পাঠিয়ে তিনি জানালেন, "দুই দেশের সংস্কৃতি, শিল্প-সঙ্গীতে অনেক মিল আর অভিন্নতা - তার উদযাপন আমাদের দুই দেশকেই সব সময় উদ্বেলিত করে।"

বাংলাদেশের খুব গর্বের এক পরম্পরা এই 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' - যা ২০১৬তে জাতিসংঘের সংস্থা ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যেরও স্বীকৃতি পেয়েছে।

দিল্লিতেও সেই শোভাযাত্রার ছোট সংস্করণের আয়োজন করে বাংলাদেশ দূতাবাস ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা তাদের সংস্কৃতির ধর্মনিরপেক্ষ, উদার ও সহিষ্ণু মুখটিকেই তুলে ধরতে চায়।

লালন শাহ্-র বিখ্যাত গান 'মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি' ছিল দিল্লিতে আয়োজিত এই মঙ্গল শোভাযাত্রার 'থিম'।

মঙ্গল শোভাযাত্রা ইসলামসম্মত কি না তা নিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক বিতর্ক তৈরির চেষ্টা হয়েছে।

অনেক কট্টর ইসলামপন্থী দলই অতীতে বলার চেষ্টা করেছে, এই উৎসবে হিন্দুয়ানির প্রভাব খুব প্রকট - আর তাই ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের শোভাযাত্রা বর্জন করা উচিত। খুব সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের নেতারা বা চরমোনাই পীরের মতো ধর্মীয় নেতাও এই ধরনের মন্তব্য করেছেন।
কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার এই সব সমালোচনা তেমন একটা গায়ে মাখছে না।

দূতাবাসের আয়োজিত নববর্ষ উদযাপনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলি কথা দিয়েছেন, আগামী বছরের বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে আরও অনেক বেশি ধূমধাম করে - সেই মিছিল পায়ে পায়ে হাঁটবে রাধাকৃষ্ণন মার্গের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মাইলখানেক দূরে রিজল মার্গের প্রবাসী ভারতীয় কেন্দ্র পর্যন্ত।

এবারেও ঠিক ছিল, ১৪ এপ্রিল নববর্ষের দিন দিল্লির কূটনৈতিক মহল্লা চাণক্যপুরীর অভিজাত রাস্তা শান্তিপথ ধরে যাবে এই শোভাযাত্রা। অংশ নেবেন দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সব স্তরের কর্মীরা ও তাদের পরিবার-পরিজন।

আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দিল্লিতে আরও নানা বন্ধুপ্রতিম দেশের কূটনীতিকদেরও। তবে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কারণে ও আরও নানা ছোটখাটো সমস্যার জন্য চাণক্যপুরীর রাজপথ দিয়ে সেই শোভাযাত্রা করা এবার সম্ভব হয়নি - কিন্তু এবারে ছোট পরিসরে হলেও আগামীতে সেই ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া হবে বলেও দূতাবাস কর্তৃপক্ষ কথা দিয়েছেন।

দিল্লির বুকে প্রথমবারের মতো এই মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজনের নেপথ্যে ছিলেন ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলির স্ত্রী তূহফা জামান আলি। তিনিই দূতাবাসের সব স্তরের কর্মীদের পরিবার-পরিজনকে নিয়ে এই শোভাযাত্রার পরিকল্পনা করেছেন, ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছেন রকমারি মুখোশ ও আরও নানা মাঙ্গলিকী।

মিসেস আলি ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতির বিজ্ঞাপনের জন্য গত বেশ কয়েক বছর ধরেই সদা সক্রিয়।

দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের নামী সঙ্গীতশিল্পীদের ঘরোয়া গানের আসর বসানোই হোক কিংবা ঢাকার বিখ্যাত বাবুর্চি ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানি দিল্লিবাসীকে খাওয়ানো - সবেতেই তার অফুরন্ত উৎসাহ। কিন্তু জেএনইউ বা জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির এই প্রাক্তন ছাত্রী এবার দিল্লিকে একরকম চমকে দিয়েছেন এই 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'র আয়োজন করে।

বিবিসিকে মিসেস আলি বলছিলেন, "মঙ্গল শোভাযাত্রা সম্ভবত বাংলাদেশের সেকুলার ভাবধারার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। তার সঙ্গে দিল্লির পরিচয় করিয়ে দিতে পেরে আমরা সত্যিই অত্যন্ত গর্বিত বোধ করছি। একাত্তরের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িকতার বাণী প্রচারই এই মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল উদ্দেশ্য।"

সুত্র-বিবিসি বাংলা
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status