বই থেকে নেয়া
বই থেকে নেয়া
ত্রিশ লাখ শহীদের দেশ বায়াফ্রা (পর্ব-১)
নিজস্ব প্রতিনিধি
১২ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন
নাইজেরিয়া সম্প্রতি লোয়ার মিডল ইনকামের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। নাইজেরিয়ার পূর্বাংশ হলো বায়াফ্রা, ত্রিশ লাখ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হলেও তারা স্বাধীনতা লাভ করেনি। ১৯৭০ সালে তাদের গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু করেছিল। সেকারণে তখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কথায় কথায় বায়াফ্রার উদাহারণ টানতেন। বরেণ্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর তালুকদার মনিরুজ্জামানও তার বইয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বায়াফ্রার উদাহরণ টেনেছেন।
এই বায়াফ্রা কেন ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পায়নি সেকথা নাইজেরিয়ার সব থেকে খ্যাতিমান সাহিত্যিক চিনোয়া আচিবি তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন। বিশ্বের নামকরা ৩০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডিগ্রিধারী চিনোয়া আচিবি সম্পর্কে নেলসন মেন্ডেলা লিখেছেন, তার উপন্যাস পড়ে কারাগারের দেয়াল তার কাছে ধসে পড়েছিল, তিনি অফুরন্ত অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। চলতি বছরের জুনে তার একটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’, যেটি ৫৭টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়ে তিন কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়েছে, সেটি প্রকাশনার ৬০ বছর পূর্তি পালিত হবে। চিনোয়ার ওই উপন্যাসে তিনি রূপক অর্থে দেখিয়েছেন, উপন্যাসের নায়ক শক্তি ও ক্ষমতার উন্মত্ততায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। তার হঠকারীতার কারণেই তিনি তার নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে দাবিয়ে রাখতে বহিরাগাত শ্বেতাঙ্গদের ব্যবহার করেছিলেন। তাদের মাথায় তুলেছিলেন। কিন্তু একসময় তিনি দেখলেন, শ্বেতাঙ্গরা নিজদের স্বার্থ রক্ষায় বিভোর। তার পাশে আর নেই। কিন্তু কুফল হলো, ‘ইগবো’ জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে গিয়ে নায়কের যখন দরকার পড়ল শ্বেতাঙ্গ ঠেকানোর, তখন দেখা গেল সমাজটি ভেঙ্গে পড়েছে। নিজস্বতা বলতে তাদের আর কিছু বাকি নেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আফ্রিকা কবিতায় আফ্রিকার পশ্চাপদতা সম্পর্কে লিখেছিলেন। এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে/ নখ যাদের তীক্ষ্ম তোমার নেকড়ের চেয়ে,/এল মানুষ-ধরার দল/গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।/সভ্যের বর্বর লোভ/নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।/ তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে/ পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে;/দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়/বীভৎস কাদার পিন্ড/চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।
সেই আফ্রিকান সাহিত্যের সব থেকে নন্দিত লেখক আচিবির উপন্যাস প্রকাশনার ৬০ বছর পূর্তিতে আমরা তার উপন্যাসের চরিত্রগুলো এবং কি প্রেক্ষাপটে বায়াফ্রা তার স্বাধীনতা পেল না, সে বিষয়ে আমরা আচিবিরই লেখা স্মৃতিকথা অবলম্বনে বোঝার চেষ্টা করবো। আচিবি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এমনকি তিনি ছিলেন প্রবাসী সরকারের তথ্যমন্ত্রী।
এই বায়াফ্রা কেন ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পায়নি সেকথা নাইজেরিয়ার সব থেকে খ্যাতিমান সাহিত্যিক চিনোয়া আচিবি তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন। বিশ্বের নামকরা ৩০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি ডিগ্রিধারী চিনোয়া আচিবি সম্পর্কে নেলসন মেন্ডেলা লিখেছেন, তার উপন্যাস পড়ে কারাগারের দেয়াল তার কাছে ধসে পড়েছিল, তিনি অফুরন্ত অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন। চলতি বছরের জুনে তার একটি বিখ্যাত উপন্যাস ‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’, যেটি ৫৭টির বেশি ভাষায় অনূদিত হয়ে তিন কোটির বেশি কপি বিক্রি হয়েছে, সেটি প্রকাশনার ৬০ বছর পূর্তি পালিত হবে। চিনোয়ার ওই উপন্যাসে তিনি রূপক অর্থে দেখিয়েছেন, উপন্যাসের নায়ক শক্তি ও ক্ষমতার উন্মত্ততায় হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। তার হঠকারীতার কারণেই তিনি তার নিজ সম্প্রদায়ের মানুষকে দাবিয়ে রাখতে বহিরাগাত শ্বেতাঙ্গদের ব্যবহার করেছিলেন। তাদের মাথায় তুলেছিলেন। কিন্তু একসময় তিনি দেখলেন, শ্বেতাঙ্গরা নিজদের স্বার্থ রক্ষায় বিভোর। তার পাশে আর নেই। কিন্তু কুফল হলো, ‘ইগবো’ জনগোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে গিয়ে নায়কের যখন দরকার পড়ল শ্বেতাঙ্গ ঠেকানোর, তখন দেখা গেল সমাজটি ভেঙ্গে পড়েছে। নিজস্বতা বলতে তাদের আর কিছু বাকি নেই।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার আফ্রিকা কবিতায় আফ্রিকার পশ্চাপদতা সম্পর্কে লিখেছিলেন। এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে/ নখ যাদের তীক্ষ্ম তোমার নেকড়ের চেয়ে,/এল মানুষ-ধরার দল/গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে।/সভ্যের বর্বর লোভ/নগ্ন করল আপন নির্লজ্জ অমানুষতা।/ তোমার ভাষাহীন ক্রন্দনে বাষ্পাকুল অরণ্যপথে/ পঙ্কিল হল ধূলি তোমার রক্তে অশ্রুতে মিশে;/দস্যু-পায়ের কাঁটা-মারা জুতোর তলায়/বীভৎস কাদার পিন্ড/চিরচিহ্ন দিয়ে গেল তোমার অপমানিত ইতিহাসে।
সেই আফ্রিকান সাহিত্যের সব থেকে নন্দিত লেখক আচিবির উপন্যাস প্রকাশনার ৬০ বছর পূর্তিতে আমরা তার উপন্যাসের চরিত্রগুলো এবং কি প্রেক্ষাপটে বায়াফ্রা তার স্বাধীনতা পেল না, সে বিষয়ে আমরা আচিবিরই লেখা স্মৃতিকথা অবলম্বনে বোঝার চেষ্টা করবো। আচিবি নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এমনকি তিনি ছিলেন প্রবাসী সরকারের তথ্যমন্ত্রী।
আজ থেকে শুরু হলো ধারাবাহিক
ত্রিশ লাখ শহীদের দেশ বায়াফ্রা (পর্ব-১)
ত্রিশ লাখ শহীদের দেশ বায়াফ্রা (পর্ব-১)
নাইজেরিয়ান লেখক চিনোয়া আচিবির জন্ম ১৯৩০ সালে তিনি তার প্রথম উপন্যাস ‘থিংস ফল আ্যপার্ট’ প্রথম প্রকাশ করেছিলেন ১৯৫৮ সালে। তিনি যখন উপন্যাস লিখেছেন তখন তিনি উপন্যাস নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তিনি এটি পাঠিয়ে ছিলেন লন্ডনের গিল্ডবার্ড ফেলস-এর সুপারিশের ভিত্তিতে। অনেকগুলো প্রকাশনার এটা পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু কেউ এটা ছাপতে রাজি হয়নি। তারা তাচ্ছিল্যের সুরে বলেছিল, কোনো আফ্রিকান লেখকের কাছ থেকে ফিকশন পড়ার জন্য পাঠকরা প্রস্তুত নয়। শেষ পর্যন্ত পা-ুলিপিটা পেয়েছিল বিখ্যাত প্রকাশনা সংস্থা হ্যানিম্যান। সেখানে নির্বাহী কর্মকর্তারা পাণ্ডুলিপিটি নিয়ে কি করবেন, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। শেষ পর্যন্ত এর একটি রফা হয় যখন পাণ্ডুলিপিটি সংস্থাটির শিক্ষা উপদেষ্টা ডোনাল্ড ম্যাকরের হাতে পরে। তিনি সবে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ইংলান্ডে ফিরেছেন। তিনি গোগ্রাসে পাণ্ডুলিপিটি পড়লেন এবং জোড় সুপারিশ করে লিখলেন যুদ্ধের পর থেকে এর থেকে ভালো উপন্যাস তিনি আর কখনো পড়েননি।১৯৫৮ সালের ১৭ই জুন হানিম্যান ২০০০ হার্ডকপি বাজারে প্রকাশ করেছিল।
উপন্যাসটির বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল নাইজেরিয়ায়। পশ্চিম আফ্রিকায় এ্যালম হিল বইটি যখন বাজারজাত করতে শুরু করেছিলেন, তখন তিনি তীর্যক মন্তব্যের শিকার হয়েছিলেন। বিম্ময় প্রকাশ করেছিল ইবাদান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কারণ উপন্যাসটি তাদের একজন প্রাক্তন ছাত্রের লেখা। নাইজেরিও ম্যাগাজিন ব্লাক ওরফিয়েস মন্তব্য করেছিল বইটিতে ইগবোদের জীবন ভালোভাবেই ফুটে উঠেছে।
উপন্যাসটির কুশলীবরা একটি সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করেছিল। এর প্রধান চরিত্র ওকোনকো। তিনি এমন একজন পিতার সন্তান, যিনি শৈশব থেকে দেখেছেন তার বাবা নানাভাবে ঋণে জর্জরিত, বাঁশি বাজাতে পছন্দ করতেন। আর কোনো একটি দিনে হঠাৎ গ্রামবাসী দেখলেন তাদের গ্রামে শ্বেতাঙ্গ মানুষের দল ভিড় করেছেন। যদিও তারা তাদের এই উপজাতি ঐতিহ্যম্ডিত গ্রামে ধর্ম প্রচারের জন্য এসেছে। এই শেতাঙ্গ মিশনারিরা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন তাদের মূল্যবোধ ও তাদের সংস্কৃতি। স্থানীয় জনগণ ধীরে ধীরে অনুভব করতে শুরু করলেন খ্রিষ্টিও শিক্ষা-দীক্ষার মধ্যে ইগবো সংস্কৃতির সংঘাত লুকিয়ে আছে।
‘থিংস ফল অ্যাপার্ট’ আফ্রিকান সাহিত্যে অন্যতম বই হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। আর সারা বিশ্বে ২০ মিলিয়নের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। ৫৭টি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। আর আচিবি সর্বকালের সবচেয়ে সেরা লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। নাইজেরিও নোবেল বিজয়ী আফ্রিকান লেখক ওলে সোয়েনকা মন্তব্য করেছেন এটি ইংরেজিতে লেখা প্রথম উপন্যাস যেখানে আফ্রিকান সমাজের চরিত্রগুলোকে অত্যন্ত ভেতর থেকে তুলে নেয়া হয়েছে। তাদেরকে অদ্ভুত বা বিচিত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। শেতাঙ্গ মানুষেরা সাধারণত তাদেরকে যা চিহ্নিত করে থাকেন।
(চলবে)