ভারত

পশ্চিমবঙ্গে আচমকা পঞ্চায়েত নির্বাচনের ঘোষণায় বিরোধীরা দিশাহারা

কলকাতা প্রতিনিধি

২ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

মাত্র তিন দিন আগে ডাকা সর্বদল বৈঠকে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার তিন স্তরের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন তারিখের কোনো ইঙ্গিত দিতে পারেন নি। অথচ শনিবার নির্বাচন কমিশনার তড়িঘড়ি নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছেন। আর এই আচমকা ঘোষণায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি প্রকৃতপক্ষে দিশাহারা অবস্থা। তারা আশা করেছিলেন, নির্বাচনের আগে আরো কিছুটা সময় পাওয়া যাবে। সর্বদল বৈঠকে মে মাসে নির্বাচন করা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। এপ্রিল মাস জুড়ে চলবে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। কিন্তু নির্বাচন কমিশন যে নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছে তাতে মে মাসের শুরুতেই তিন দফায় ভোট হবে। প্রতিটি দফার ক্ষেত্রে ব্যবধান রাখা হয়েছে মাত্র একদিন। আগামী ১লা মে ভোট নেয়া হবে রাজ্যের ১২ জেলায়। দ্বিতীয দফায় ৩রা মে ভোট হবে দুটি জেলায়। আর ৫ই মে তৃতীয় দফায় ভোট হবে উত্তরবঙ্গের ৬টি জেলায়। ফল ঘোষণা করা হবে ৮ই মে। অথচ বর্তমান পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বোর্ডের মেয়াদ রয়েছে আগস্ট পর্যন্ত। বিরোধীদের অভিযোগ রাজ্য সরকারের বশ্যতা স্বীকার করে নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিং এই নির্ঘণ্ট ঘোষণা করেছেন। এমনকি বিরোধীদের দাবি মেনে এই নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রীয বাহিনী থাকবে কিনা সেকথাও নির্বাচন কমিশনার জানাতে অস্বীকার করেছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের কাছে ৩ লাখ ভোটকর্মী, ৩৫০ জন পর্যবেক্ষক ও ৪৫ হাজার পুলিশ চেয়েছে। নজিরবিহীনভাবে এবারই প্রথম ১লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হওয়া সত্ত্বেও সেদিন নির্বাচন করা হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নগুলি এ ব্যাপারে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। বিজেপি থেকে সিপিএম, কংগ্রেস সকলেই অভিযোগ করেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেই এখন নির্বাচন কমিশন চলছে। তাই এভাবে বিরোধীদের আপত্তি উড়িয়ে ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা করা হযেছে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। আমরা তা করি না। তিনি আরো বলেছেন, গণতন্ত্র রক্ষা গণতন্ত্র দিয়েই হয়। স্বৈরতন্ত্র দিয়ে হয় না। নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হোক এটাই চাই। কিন্তু রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল তড়িঘড়ি নির্বাচনের ঘোষণাকে রাজ্যের শাসক দলের রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন। রাজ্য সরকারের সুপারিশের ভিত্তিতেই নির্বাচনের ঘোষণা হয়েছে। একটি সূত্রের খবর, রাজ্য সরকার মুসলমানদের রমজান মাস শুরুর আগেই নির্বাচন শেষ করতে চেয়েছেন বলেই মে মাসের শুরুতেই নির্ঘণ্ট ঘোষণার সুপারিশ করেছে। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এত অল্প সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণার ফলে বিরোধীরা সব আসনে প্রার্থী দিতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এই নির্বাচনে ৫ কোটি ৮ লাখ ভোটার ২০টি জেলার ৫৮ হাজার ৪৬৭টি বুথে ভোট দেবেন।
যদিও শাসক শিবির একথা মানতে নারাজ? নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার কমিশনের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। আর তা করা উচিতও নয়। তৃণমূলও যে শান্তিপূর্ণ ভোট চায়, তাও জানিয়েছেন দলের সর্বোচ্চ নেত্রী। তাঁর মতে বিরোধীদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই লড়াই করা উচিত।
কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে একেবারেই আমল দিতে নারাজ বিরোধীরা। প্রত্যেকেরই বক্তব্য, রাজ্য সরকারের নির্দেশে এই ভোট ঘোষণা। কারণ, বৃহস্পতিবার সর্বদলীয় বৈঠক হয়েছিল। সেখানে কোনো তারিখ নির্দিষ্ট করে জানানো হয়নি। তার উপর মে মাসে ভোট নিয়ে সমস্ত বিরোধী নেতাই ওই বৈঠকে আপত্তি তুলেছিলে। অথচ দু’দিনের মধ্যেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়ে গেল। তাই বিজেপি নেতা সায়ন্ত বসু সরাসরি জানিয়েছেন, ‘নির্বাচন কমিশন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে।’
আরও পডুন: ভোট আসে ভোট যায়, জঙ্গলমহলের গ্রাম থাকে অন্ধকারেই
যদিও এতে পিছিয়ে যেতে নারাজ বিরোধীরা। তারা ভোটে লড়তে প্রস্তুত। সেই লড়াইয়ে বাংলার মানুষ শাসক দলের এই স্বেচ্ছাচারিতার জবাব দেবেন বলেই বিশ্বাস সিপিএমের? অন্যদিকে বিজেপিও লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়ে দিয়েছে।॥

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status