অনলাইন

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান

৫ জন নারী জয়িতা নির্বাচিত

সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি

২৪ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৭:১৬ পূর্বাহ্ন

অভাব অনটন ও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে জীবন যুদ্ধে সফলতা অর্জন করে জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পরিশ্রমী ৫জন নারী। জয়িতা খেতাব অর্জনকারী ও জীবন যুদ্ধে সফলতা অর্জনকারী নারীরা হচ্ছেন, উপজেলার ভিওইল গ্রামের হত দরিদ্র বর্গাচাষী রেজাউল ইসলামের স্ত্রী রিনা বেগম, তিলনা বারদোয়াস গ্রামের শামসুল আলমের কন্যা ছানোয়ারা বেগম, দিঘীর হাট মীরাপাড়ার আব্দুল ওয়াহেদ আলীর স্ত্রী হাসিনা বানু, বাসুল ডাঙ্গা গ্রামের দরিদ্র ভ্যান চালক সাদেকুল ইসলামের স্ত্রী মমেজান বেগম এবং গোয়ালা শিয়ালমারী গ্রামের হত দরিদ্র ইউসুফ আলীর স্ত্রী রোজিনা বেগম।

রিনা বেগম: সংসারে সব সময় অভাব লেগেই থাকত স্বামী একাই যে আয় করতেন তা দিয়ে তাদের সংসারের অভাব ঘুচত না। সকল প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিকভাবে সফলতা অর্জন করার জন্য সর্বপ্রথম ২০১৩ সালে এনজিও সংস্থা ব্র্যাক হতে ১০ হাজার টাকা লোন গ্রহণ করে হাঁস মুরগী পালনের কাজ শুরু করেন। এতে তার জীবনে কিছুটা সফলতা আসলে তিনি হাঁস মুরগী পালনের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। সেখানেও তিনি সফলতা অর্জন করে সংসারে বেশ স্বচ্ছলতা লাভ করেন। বর্তমানে সংসার পরিচালনা করেও তার প্রায় দুই থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পুঁজি বা মুলধন রয়েছে। বর্তমানে রিনা বেগম এখন ওই গ্রামের রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন।

ছানোয়ারা বেগম: তার স্কুল জীবন থেকেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকার শিকার হন। অর্থাভাবে লেখাপড়া যখন বন্ধের উপক্রম হয়ে পড়ে তখন তার বিভিন্ন আতœীয় স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিরা ছানোয়ারা বেগমকে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগেন। সংসারে পিতার অস্বচ্ছলতা তার লেখাপড়ার প্রধান অন্তরায় হলেও ছানোয়ারা কারো কথায় কোন কর্ণপাত ও বিবাহ না করে লেখাপড়া শেষ করেন এবং উপজেলার দোয়াশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষিকা হিসাবে যোগ দেন। এলাকায় এখন ছানোয়ারাকে অনেকেই অনুসরণ করে জীবন যুদ্ধে এগিয়ে চলেছেন।

হাসিনা বানু: দরিদ্র কৃষিজীবি পরিবার, আর্থিক অস্বচ্ছল পরিবারটির ঘরে রয়েছে ৩ ছেলে। কিন্তু যে সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের লেখা পড়ার বিষয়টি যেন স্বপ্নের মত। তাই তার স্বামী ওয়াহেদ আলী সন্তানদের লেখাপড়া না শিখিয়ে তার সঙ্গে মানুষের ক্ষেত খামারে কাজের জন্য নিয়ে যেতেন। কিন্তু আতœপ্রতয়ী হাসিনা বানু স্বামীর সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে লড়াই করে চালিয়ে যান সন্তানদের লেখাপড়া। কষ্টের ফল স্বরূপ ১ম ও ৩য় ছেলেদেরকে ¯œাতকোত্তর ও ২য় ছেলেকে ডিগ্রী পাশ করান। বর্তমানে ১ম ছেলে দিঘীর হাট ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক, ২য় ছেলে মিরাপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং ৩য় ছেলে সাপাহার চৌধুরী চাঁন মোহাম্মাদ মহিলা ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক হিসাবে কর্মরত আছেন। তাই রতœগর্ভা হাসিনা বানু নির্বাচিত হয়েছেন জয়িতা।

মমেজান বেগম: অতি দরিদ্র সাদেকুল ইসলামের সঙ্গে উপজেলার তুলসিপাড়ার মমেজানের বিয়ে হয় বেশ কয়েক বছর আগেই। স্বামী তাকে প্রায়শই যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকেন। দরিদ্র পিতার পক্ষে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তার উপর নেমে আসে শারিরীক নির্যাতন। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে মানুষের বাড়িতে কাজ করা শুরু করেন এবং একটি গরু বর্গা নেন। বর্তমানে কঠোর পরিশ্রমী মমেজান কয়েকটি গরুর মালিক ও স্বামীকে একটি ব্যাটারী চালিত ভ্যান গাড়ী নিয়ে দিয়েছেন। সংসারের বেহাল দশা ফিরিয়ে অর্জন করেছেন জয়িতা পুরস্কার।

রোজিনা বেগম: দিন মজুর ইউসুফ আলীর স্ত্রী রোজিনা বেগম দারিদ্রতার করণে সংসার জীবনে অর্থনৈতিক প্রতিকুলতা, একাধিক সামাজিক কুসংস্কারের শিকার হন। সব বাধা পিছু ফেলে কয়েকটি গ্রামে গড়ে তোলেন বেশ কয়েকটি নারী সংগঠন। বর্তমানে তিনি বাল্য বিবাহ, বহুবিবাহ, যৌতুক সহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপুর্ন ভূমিকা রেখে চলেছেন। এছাড়া এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠির মধ্যে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করণেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। রোজিনা বেগম গ্রামে এখন এক রোল মডেলের নাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status