বাংলারজমিন

চিরনিন্দ্রায় মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ও আলিফ, পিয়াস রায়ের মরদেহ সৎকার

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ও গোমস্তাপুর প্রতিনিধি

২৪ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলামকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজশাহীতে তার স্ত্রীর কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। শুক্রবার জুমার নামাজের পর নগরীর উপশহর কেন্দ্রীয় মসজিদ মাঠে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে গোরহাঙ্গা কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজার আগে তার কফিন জাতীয় পতাকা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং মহানগর পুলিশের একটি দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে জেলা প্রশাসন ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষ থেকে তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এ সময় নিহতের দুই কন্যা সন্তান ও পরিবারের সদস্য ছাড়াও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, জেলা প্রশাসক আব্দুল কাদের, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে শুক্রবার ভোরে নিহত মুক্তিযোদ্ধা নজরুলের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে। সেখানে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ রাজশাহীর উপশহর নিজ বাড়িতে নেয়া হয়। নিহত নজরুল ইসলাম নগরীর উপশহর এলাকার বাসিন্দা। বিমান দুর্ঘটনায় তার স্ত্রী আক্তারা বেগমও নিহত হয়েছেন। মরদেহ দেশে আসার পর গত মঙ্গলবার দাফন করা হয়। তবে মরদেহ শনাক্তে জটিলতার কারণে নেপাল থেকে নজরুল ইসলামের মরদেহ এলো পরে।
বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যে ২৩ জনের মরদেহ গত সোমবার দেশে আসে। এরপর বৃহস্পতিবার বিকালে নিহত নজরুল ইসলাম, অলিফউজ্জামান ও পিয়াস রায়ের মরদেহ  দেশে আসে। বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণ করে স্বজনরা বাড়ির পথে রওনা হয়। নিহত মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তার স্ত্রী আক্তারা বেগম ছিলেন রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হাসান ইমাম ও নজরুল ইসলাম দুই বন্ধু ছিলেন।
স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে: নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত পিয়াস রায়ের মরদেহ গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটায় বরিশাল নগরীর এমএ গফুর সড়কের বাসায় আনা হয়েছে। এরপর সকালে শ্মশানে তাকে দাহ করা হয়। এর আগে ঢাকা থেকে রওয়ানা হয়ে রাত সাড়ে ১২টায় পিয়াসের সর্বশেষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গোপালগঞ্জের সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজে নেয়া হয়। সেখানে শ্রদ্ধাঞ্জলি শেষে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে রাত সোয়া তিনটায় এসে পৌঁছে। শুক্রবার সকাল ৮টায় পিয়াসের মরদেহ জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে নেয়া হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর বরিশাল মহাশ্মশানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, পিয়াস রায়ের বাড়ি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দাড়িয়াল ইউনিয়নের মধুকাঠি গ্রামে। পিয়াসের বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় নলছিটি উপজেলার চন্দ্রকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা পূর্ণিমা রায় বরিশাল নগরীর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। পিয়াস গোপালগঞ্জের সাহেরা খাতুন মেডিকেল কলেজ থেকে ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এবছরের ৫ই মার্চ তার পরীক্ষা শেষ হয়। ১২ই মার্চ সে নেপালের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। সর্বশেষ প্লেনে ওঠার আগে ওইদিন সোয়া এগারোটার দিকে মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এরপর থেকে পিয়াসের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। দুর্ঘটনার ১২ দিন পর  ডিএনএ পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীতে পিয়াসের মরদেহ তার বাবা সুখেন্দু বিকাশ রায় গ্রহণ করেন। এরপর বরিশালের উদ্দেশে রওনা হন।  দুই ভাই-বোনের মধ্যে পিয়াস রায় ছিল বড়। ওর বোন শুভ্রা রায় রাজধানীর নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে: নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত আলিফুজ্জামান আলিফের লাশ দাফন করা হয়েছে। গতকাল খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার সেনের বাজার ইউছুফিয়া মাদরাসা কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে রূপসা উপজেলার বেলফুলিয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আলিফের জানাজার নামাজে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। রাজনৈতিক ব্যক্তি, প্রশাসনের কর্মকর্তা, আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষী, প্রতিবেশীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার কয়েক হাজার মানুষ এতে অংশ নেন। এ সময় শোকাবহ হয়ে ওঠে এলাকার পরিবেশ।

নামাজে জানাজায় উপস্থিত ছিলেন- খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু, খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আরাফাত হোসেন পল্টু, বর্তমান সভাপতি পারভেজ হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আবু সাঈদ খান প্রমুখ।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে আলিফের লাশ হস্তান্তর করা হয়। আলিফের ছোট ভাই ইয়াসিন আরাফাত ও ছোট খালু শাহাবুর রহমান এ লাশ গ্রহণ করেন। এ সময় আলিফের বড় ভাই আশিকুর রহমান হামিম, খালা ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

নিহত আলিফুজ্জামানের বড় ভাই মো. আশিকুর রহমান হামীম বলেন, বিমানবন্দর থেকে বিকাল সাড়ে ৫টায় বের হয়ে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে মাগরিববাদ দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর সেখান থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেই। রাত ৩টার দিকে খুলনায় এসে পৌঁছাই।

এদিকে আলিফকে শেষ বিদায় দিয়ে মুহ্যমান হয়ে রূপসা পাড়ের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আলিফের বন্ধু আত্মীয় সহপাঠীসহ পরিচিতজনেরা তার সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতির কথা আওড়াচ্ছেন।

আলিফের ভগ্নিপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ছয় মাস আগে আলিফের বড় ভাই বিয়ে করেছেন। আলিফের বিয়েরও কথা চলছিল।’
উল্লেখ্য, গত ১২ই মার্চ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ৫১ জনের মধ্যে বাংলাদেশি ২৬ জনের মধ্যে আলিফ একজন। আলিফের বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতি গ্রামে। আইচগাতির একটি পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার মোল্লা মো. আসাদুজ্জামানের তিন ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় আলিফুজ্জামান। পাঁচ বছর আগে সৌদি আবর থেকে ফিরে এসে ঠিকাদারী করতেন। বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সভাপতি আলিফুজ্জামান মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড খুলনা জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক ছিলেন তিনি। প্রবাস ফেরত আলিফউজ্জামান ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। এবারো নেপাল ভ্রমণের জন্য বেরিয়ে ছিলেন তিনি। তিনি খুলনা জেলা ছাত্রলীগের বিদায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। গত ১২ই মার্চ সকালে বিমানে উঠার পূর্বে যশোর বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে কয়েকটি সেলফি তুলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন আলিফুজ্জামান। সেখানে তিনি লেখেন ‘বাই বাই খুলনা, ওয়েলকাম ঢাকা ১২/০৩/২০১৮’।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status