বাংলারজমিন

চট্টগ্রাম ফিশারীঘাট যেন ‘জাটকার মাঠ’

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

২৩ মার্চ ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

দেশের বৃহৎ মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলোর অন্যতম চট্টগ্রাম ফিশারীঘাট। যেখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক টন মাছ বিক্রয় হয়। আকার ভেদে কোনো কোনো মাছ মণপ্রতি ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়। এখানে ৫০ থেকে ৬০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছসহ প্রায় ৮০-৮৫ প্রজাতির মাছ বেচাকেনা হয়। কিন্তু এর মাঝে এখন সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হচ্ছে জাটকা। বৃহস্পতিবার সকালে সরজমিনে দেখা গেছে দেড়লাখ বর্গফুট বিস্তৃত ফিশারীঘাট যেন জাটকার মাঠ। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির যেদিকে চোখ যায় সেদিকে দেখা যায় শুধু জাটকা আর জাটকা। এ ঘাটের ১১০টি আড়তেও এখন জাটকার মজুত। শেডগুলোতে দেদার বেচাকেনা হচ্ছে জাটকা। জাটকার মজুতে অন্য মাছ চোখেই পড়ছে না। অথচ জাটকা মাছ ধরা ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার কারও চোখেই যেন পড়ছে না এসব।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও সমিতির সংঘবদ্ধ গুটিকয়েক নেতার যোগসাজশে এসব জাটকা মাছ অবাধে বেচাকেনা হচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা ইলিশ সাগর থেকে ধরে এনে আসে মাছ ধরার ট্রলারগুলো। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কোনো রকম জাটকা ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে না বলে দাবি করেন সোনালি যান্ত্রিক মৎস্য শিল্প সমবায় সমিতির নেতারা। সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, সরকারি নিয়ম মেনেই আমরা মাছ বিক্রি করছি। এখানে যা বিক্রি হচ্ছে তার একটিও জাটকা নয়। চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এবিএম মহসিন বলেন, লম্বায় ২৫ সেন্টিমিটারের কম এবং ওজনে ২৫০ গ্রামের কম হয়ে থাকলে সেটাকে জাটকা হিসেবে ধরে নিতে হবে। মৌসুমের এ সময় এরচেয়ে বড় ইলিশ ধরা পড়ার কথা নয়। বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে সব জাটকা। তিনি বলেন, নভেম্বর থেকে মে পর্যন্ত ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে জাটকা নিধন বন্ধে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। এরপরও ইলিশের জোগান দিতে নির্বিচারে জাটকা নিধন করে বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস হচ্ছে। জাটকা নিধন বন্ধ করা গেলে এসবই অল্প কিছুদিন পর বড় সাইজের সুস্বাদু ইলিশে পরিণত হবে। এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। তবে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাও নিতে হবে। তিনি আরো বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের জাটকা সংরক্ষণ, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং গবেষণা প্রকল্পের জাটকা নিধন প্রতিরোধ প্রতিবেদন অনুযায়ী উপকূলীয় এলাকা চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, বরিশালসহ ২৩টি জেলা থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত শতাধিক টন জাটকা জব্দ করা হয়েছে। র‌্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মিমতানুর রহমান বলেন, গত ১২ই ডিসেম্বর একটি জাহাজ থেকে অভিযান চালিয়ে ২০ টন জাটকা আটক করা হয়। এ সময় ২ ব্যক্তিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ও ১১ই মার্চ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ জাটকা জব্দ করা হয়। জাটকা নিধন ও বিক্রি বন্ধে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি বলেন, নিধন হয়েছে অথচ জব্দ করা যায়নি এমন জাটকার পরিমাণ হবে আরো শতগুণ বেশি হবে। এসব জাটকা বড় হলে সোনালী ইলিশ হতো। তখন জাটকার চেয়েও অনেকগুণ বেশি টাকা আয় হতো। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর বহদ্দারহাট, চকবাজার, কাজীর দেউরি, পাহাড়তলী, ঝাউতলাসহ সবকটি বাজারে বিভিন্ন আকৃতির জাটকা বিক্রয় হচ্ছে। প্রতি কেজি জাটকা ৩৫০-৪৫০ টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে।
এরমধ্যে পেটে ডিমভর্তি মা মাছও রয়েছে। বহদ্দারহাট মাছ বাজারে জসিম উদ্দিন (৪২) নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, বিত্তবানরা বড় সাইজের ইলিশ কিনে। এসব ইলিশের দাম নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। তারা কম টাকায় জাটকা কিনে। ক্রেতা থাকায় নগরীর ফিশারীঘাট থেকে জাটকা কিনে এনে বিক্রয় করা হচ্ছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status