বিনোদন

ভালো নেই চলচ্চিত্রের ‘জুনিয়র’ শিল্পীরা

কামরুজ্জামান মিলু

২২ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:০৫ পূর্বাহ্ন

নায়ক, নায়িকা, খলনায়ক বা প্রধান চরিত্রের বাইরেও কিছু অভিনয়শিল্পী চলচ্চিত্রে অল্প সময়ের জন্য কোনো কোনো দৃশ্যে অভিনয় করেন। তাদের ‘জুনিয়র’ শিল্পী বলা হয়ে থাকে। একটা সময় প্রায় প্রতিদিনই তারা বিভিন্ন ছবিতে কাজ করতেন। বলা যায়, প্রতিদিনই অভিনয় নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তারা। তবে চলচ্চিত্রের আগের জোয়ার এখন আর নেই। তাই চলচ্চিত্রের এই ‘জুনিয়র’ শিল্পীদের বেশ খারাপ সময় কাটছে এখন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এফডিসির আমগাছতলায় বসে দিনের পর দিন পার করছে চলচ্চিত্রপ্রেমী এই ‘জুনিয়র’ শিল্পীরা। এই আমগাছতলা ‘জুনিয়র’ শিল্পীদের নির্দিষ্ট ঠিকানা এখন। গত শুক্রবার এফডিসিতে কথা হলো নাসির, বৃষ্টি, শেফালী, মরজিনা, মিনার নামে কয়েকজনের সঙ্গে। তারা সকলেই ‘জুনিয়র’ শিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এদের মধ্যে অনেকেই দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে এ পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মরজিনা বলেন, আমি যখন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি তখন আমার বয়স ছিল ১৬ বছর। অনেক ছবিতে আমি কাজ করেছি। নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে কাজ শুরু করি। প্রথমে এক দৃশ্য, এরপর দুই দৃশ্য এভাবেই দিনের পর দিন বিভিন্ন চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। তখন বেশ ভালো সময় কেটেছে। প্রায় প্রতিদিনই কাজ থাকত। টাকা-পয়সার টেনশন করতে হতো না। আর এখন শুধুই হতাশা। কাজে কেউ ডাকে না। নাসির বলেন, আমরা অনেকে এখন পেট ভরে খেতে পারি না। মুড়ি খেয়ে দিন কেটে যাচ্ছে আমাদের অনেকের। আমার গ্রামের বাড়ি বরিশালে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে কাজের খোঁজে ঢাকায় আসা আমার। এরপর একটা সময় এফডিসিতে ‘জুনিয়র’ শিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করি। ক্যারিয়ারের শুরুতে দিনে এক হাজার কিংবা তার কিছু বেশি টাকা পেলেও মোটামুটিভাবেই সপ্তাহ পার করা যেত। বর্তমানে তো কোনো কাজই পাচ্ছি না। গত বছর দুটি ছবিতে কাজ করেছি। যেখানে বছরে ২০-৩০টি ছবিতে আগে কাজ করতাম। তাই এফডিসির তিন নাম্বার আর চার নাম্বার ফ্লোরের মাঝের জায়গাটায় পান, সিগারেট, বিড়ি, পটেটো চিপস, চকলেট বিক্রি করি। মাঝে মাঝে বিক্রি না হলে দোকানেই না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন নাসির। এফডিসি’র মায়া এখনো ছাড়তে পারেননি তিনি। জীবিকার তাগিদে অসহ্য গরমের মধ্যেও সকলে একসঙ্গে সব ‘জুনিয়র’ শিল্পী উপস্থিত হন এফডিসি’র আমতলায়। শুধু দু’মুঠো ভাত খাওয়ার টাকা আয়ের আশায়। এদের মধ্যে অনেকেই চলচ্চিত্রে শুরুর দিকে দৈনিক ১০০০ কিংবা ১৫০০ টাকাও পেয়েছেন। সেই টাকা দিয়ে বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল তাদের জীবন। কিন্তু শেষ কয়েক বছরে দেশীয় চলচ্চিত্রের হাল খারাপ হওয়ায় এখন খুব কঠিন সময় পার করছেন তারা। আলেয়া বুড়ি, দিলবাহারী, কল্পনাসহ আরো অনেক ‘জুনিয়র’ শিল্পী এফডিসিতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। ষাট বছরের বেশি বয়স শেফালীর। তিনি বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে অভিনয় করছি। অসংখ্য চলচ্চিত্রে ডাক্তার, দাইমাসহ বেশকিছু চরিত্রে অভিনয় করেছি। ছোট্ট একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিল। চলচ্চিত্রে অভিনয় করে একটা সময় দিনে ১৫০০ টাকাও আয় হতো। এখন তেমন কোনো কাজ নেই। তাই বস্তিতে ছোট্ট একটা ঘরে থাকি। সেই হাজার-পনেরশ’ টাকা এসে ঠেকল এখন ২০০-৩০০ টাকায়। এই টাকা দিয়ে কি আর জীবন চলে। অনিশ্চয়তা কিংবা শঙ্কায় কাটছে এখন এসব এক্সট্রা শিল্পীদের জীবন। এফডিসি প্রতিষ্ঠার পর থেকে নায়ক-নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অনেকের আগমন হয় এই রূপালী অঙ্গনে। এদের মধ্যে কারো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আবার কারো সেই আশায় হয়েছে গুড়েবালি। এখনকার জীবন্ত কিংবদন্তি অভিনেত্রী শাবানা জীবিকার তাগিদে নয়, রূপালী পর্দাকে ভালোবেসেই ‘জুনিয়র’ হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয়ে এসেছিলেন। পরে ১৯৬৭ সালে ‘চকোরি’ ছবির মাধ্যমে নায়িকা হিসেবে অভিনয় শুরু করেন। ভক্তদের মন জয় করে এক নম্বর আসনে জায়গা করে নেন তিনি। এছাড়া প্রয়াত নায়করাজ রাজ্জাকও ক্যারিয়ারের প্রথমে ‘১৩ নাম্বার ফেকু ওস্তাগার লেন’সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে ‘জুনিয়র’ শিল্পী হিসেবেই অভিনয় করেন। ‘জুনিয়র’ শিল্পী থেকে যারা সফল হয়েছেন, তাদের কথা আলাদা। কিন্তু ‘জুনিয়র’ চরিত্রে অভিনয় করেও যারা স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে পারতেন, এখন তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের খোঁজ নেয়ার কেউ নেই
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status