বিশ্বজমিন

বিশ্বের ৭ দেশে সরাসরি সামরিক অভিযানে জড়িত যুক্তরাষ্ট্র

মানবজমিন ডেস্ক

২০ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের প্রায় ১৮০টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের দুই লাখ সামরিক কর্মকর্তা নিযুক্ত আছেন। তারা বিভিন্ন রকম কাজে লিপ্ত। তবে কিছু দেশে তাদের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। তারা সবাই সামরিক তৎপরতায় জড়িত নয়। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, মাত্র সাতটি দেশ আছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী সরাসরি সামরিক অভিযানের সঙ্গে জড়িত। এ দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতির বিষয় ও তাদের তৎপরতা সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো:
আফগানিস্তান: আফগানিস্তানে মোতায়েন মার্কিন সেনা সংখ্যা ১৩,৩২৯। ২০১১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসির ওপর হামলার পর তালেবানের সাথে লড়াই করার জন্য এদের পাঠানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি হচ্ছে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অফিস থেকে কংগ্রেসের জন্য তৈরি করা এক রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘মার্কিন বাহিনী আফগানিস্তানে মোতায়েন থাকার প্রয়োজন এই কারণে যে, সেই দেশকে নিরাপদ আশ্রয় বানিয়ে সন্ত্রাসীরা যেন আবার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলা চালাতে না পারে।’ আমেরিকান সেনারা আফগানিস্তানে আল-কায়েদা, তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠী, তালেবান এবং তার বিভিন্ন উপগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে।
ইরাক: ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করার সামরিক সাফল্যের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের মূল লক্ষ্যে পরিবর্তন আনছে। লড়াই থেকে সরে এসে তারা তাদের সাফল্যকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। কংগ্রেসে মার্কিন সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র আইএস-এর উপগোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা অব্যাহত রাখবে। এর কারণ হচ্ছে প্রাণঘাতী হামলা চালানোর ক্ষমতা এই দলগুলোর রয়েছে। এরা ইরাকের বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে বড় হুমকি। ইরাকে লড়াইয়ের পাশাপাশি মার্কিন সামরিক বাহিনী ইরাকি বাহিনী, কুর্দি পেশমার্গা বাহিনীকেও অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
সিরিয়া: যুক্তরাষ্ট্র তার অনুগত সামরিক জোটকে নিয়ে ২০১৭ সালে ইরাকে অভিযান চালিয়ে আইএস-এর কবল থেকে ৪৫ লাখ মানুষকে মুক্ত করে। এর পর থেকে আইএস ইরাক এবং সিরিয়ায় তার দখলে থাকা শতকরা ৯৮ ভাগ ভূখ-ের নিয়ন্ত্রণ হারায়। সিরিয়ায় এখন ১৫০০ মার্কিন সেনা তৎপর রয়েছে। এরা সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স, এসডিএফ-কে নানা ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে, এসব সাহায্যের মধ্যে রয়েছে বোমা বর্ষণ, স্থানীয় বাহিনীগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা, অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা।
ইয়েমেন: মার্কিন বাহিনী ইয়েমেনে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বোমা বর্ষণ করছে। আল কায়েদা ইন দ্য আরব পেনিনসুলা বা অ্যাকাপের বিরুদ্ধে তারা কিছু লড়াই চালিয়েছে। মার্কিন সরকার স্বীকার করেছে, ইয়েমেনের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আব্দুল্লাহ সালেহর বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে তারা সীমিত পর্যায়ে সামরিক সমর্থন দিয়েছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনে লড়াই চালাচ্ছে। ‘সীমিত সমর্থন’ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই সাহায্যের মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা তথ্য প্রদান করা এবং জোটের বাহিনীগুলিকে সামরিক সরঞ্জাম প্রদান করা। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে না।
সোমালিয়া: সোমালিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর সেনা সংখ্যা প্রায় ৩০০। ওই দেশে তাদের লক্ষ্য হচ্ছে ইসলামিক স্টেট এবং আল-কায়েদার মতো গোষ্ঠীগুলির ‘সন্ত্রাসী হুমকি’ মোকাবেলা করা। এই দেশেই ১৯৯৩ সালে মার্কিন সেনারা এক চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। মার্কিন স্পেশাল ফোর্সেস সে সময় যুদ্ধবাজ নেতা মোহামেদ ফারাহ্ আইদিদের একজন ডান হাতকে পাকড়াও করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়। অভিযানে ১৮ জন মার্কিন সেনা নিহত, ৭০ জন আহত এবং দুটি ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়। বর্তমানে মার্কিন সামরিক কর্মকর্তারা সোমালিয়ায় সন্ত্রাস-বিরোধী তৎপরতায় পরামর্শ দিচ্ছে।
লিবিয়া: সরকারিভাবে লিবিয়ায় মার্কিন সেনা সংখ্যা সীমিত। কিন্তু সেনা সংখ্যা কম থাকার মানে যে লিবিয়ার ভেতরে তাদের তৎপরতা কম, তা কিন্তু নয়। কংগ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন বাহিনী লিবিয়ার মরুভূমিতে লুকিয়ে থাকা ইসলামিক স্টেট-এর অনুসারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে বিমান হামলা চালায়। তারা সেখানে ড্রোন ব্যবহারও করে থাকে।
নাইজার: নাইজারে ৫০০ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু তাদের কথা ২০১৭ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বিশ্ববাসীর অজানা ছিল। ওই সময়ে ইসলামিক স্টেটের অনুগত এক বাহিনী মার্কিন সেনাদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালায়। এতে চার জন মার্কিন সেনা নিহত হয়। সে সময় এই ঘটনা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়েছিল। নাইজারে নিহত এক সেনার স্ত্রী দাবি করেন, ওই ঘটনার পর তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে এক বিতর্কিত শোকবার্তা পেয়েছিলেন। তাতে লেখা ছিল: ‘সে (সৈন্য) জানতো, সে কিসের মধ্যে ঢুকছে।’ ওই ঘটনার দু’মাস পরে নাইজেরিয়ান সেনাদের সাথে টহল দেয়ার সময় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, এইসব ঘটনার বাইরেও ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে আফ্রিকা মহাদেশে মার্কিন বাহিনী আরও ১০টি সামরিক সংঘাতে জড়িত হয়েছে।
(বিবিসি অবলম্বনে)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status