শেষের পাতা

নি র্বা চ নী হা ল চা ল (ময়মনসিংহ-৩)

বড় দুই দলেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি

মতিউল আলম, ময়মনসিংহ থেকে

২০ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

গৌরীপুর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত ময়মনসিংহ-৩ আসন। ইতিমধ্যে এ আসনে লড়তে বড় দু’দলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। এ আসনে  দু’দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা দুই ডজনের বেশি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। গণসংযোগ করছেন উপজেলা থেকে গ্রাম পর্যন্ত। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়েও চলছে লবিং-গ্রুপিং। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চলছে সমানতালে। ২-১ জন ছাড়া আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সবাই নতুন মুখ। নিজের অবস্থান মজবুত করতে তৃণমূল থেকে হাইকমান্ড পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষা করছেন তারা। এ আসনে মোট ভোটার দুই লাখ ২৬ হাজার ৭২৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ১৪ হাজার ১৬৪ জন এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৫৬১ জন। অবশ্য প্রার্থী নির্বাচনে দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ভোটাররাও।

১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের হাতেম আলী এমসিএ নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি নির্বাচিত হলেও ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাডভোকেট এএফএম নাজমুল হুদার কাছে পরাজিত হন তিনি। ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন খান পাঠান বিজয়ী হন। ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম আসনটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে তিনি মারা যান। পরে তার স্ত্রী রওশন আরা নজরুল উপনির্বাচনে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি এবং ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচনে বিএনপির অ্যাডভোকেট এএফএম নাজমুল হুদা আসনটি পুনরুদ্ধার করেন। ২০০১ সালে ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির আসনটি দখলে নেয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগের হাতেই বাঁধা পড়ে এ আসনটি। ২০০৮ সাল ও ২০১৪ সালেও ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির তৃতীয়বারের মতো বিজয় ধরে রাখেন। বিজয়ের ধারা অব্যাহত রাখার পুরস্কার স্বরূপ তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ২০১৬ সালে ২রা মে তাঁর মৃত্যুর পর আসনটি শূন্য হলে উপনির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধকালীন ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নাজিমউদ্দিন আহমেদ নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

তিনি ছাড়াও আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন প্রায় দেড় ডজন নেতা। এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৬৬ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করি। আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে কারাবরণ করি। ১৯৬৯ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৬ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং দুবার ময়মনসিংহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের জেলা কমান্ডার ছিলাম। বর্তমানে ময়মনসিংহ নতুন বিভাগে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডের আহ্বায়ক। তিনি ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলন ও সংগ্রাম পরিষদ, ময়মনসিংহ বিভাগ বাস্তবায়ন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা উপদেষ্টা। এমপি হওয়ার পর গৌরীপুরে ব্যাপক উন্নয়নকাজ করে চলেছেন। যোগ্যতার বিবেচনায় আবারো তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে বিশ্বাস করেন।

অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাবেক সহসম্পাদক এবং শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি কৃষিবিদ ড. সামিউল আলম লিটন ২০০১, ২০০৯, ও ২০১৪ সালে তিনবার ও সর্বশেষ ২০১৬ উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন চান তিনি। সামিউল আলম লিটন বলেন, আগামী নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে গৌরীপুরের আসনটি নৌকাকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিসহ নির্বাচনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঝে আরো যারা রয়েছেন তারা হলেন, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মতিউর রহমান, গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলী আহম্মদ খান পাঠান সেলভী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক মোর্শেদুজ্জামান সেলিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ হাসান অণু, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের অধ্যক্ষ একেএম আবদুর রফিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ, জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ভিপি বাবুল, পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. শফিকুল ইসলাম হবি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেত্রী নাজনীন আলম, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সানাউল হক, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক রাবেয়া ইসলাম ডলি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য আবু কাউছার চৌধুরী রন্টি ও শিল্পপতি এমএ মামুন। এসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এলাকায় সরকারের সাফল্যের খণ্ডচিত্র বিলবোর্ড আকারে নির্বাচনী এলাকায় তুলে ধরছেন। অনেকেই নৌকা মার্কাসহ পোস্টারিং করেছেন।

অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যাও কম নয়। দলীয় কোন্দল ও মামলার বেড়াজালে দিশেহারা নেতাকর্মীরাও এখন বহু ভাগে বিভক্ত। তিন বছর ধরে গৌরীপুর উপজেলা বিএনপি চলছে দু’টি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। কোন্দলের কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশায় আছেন। ফলে সাংগঠনিকভাবে ঝিমিয়ে পড়েছে নেতাকর্মীরাও। বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহের নামে গ্রুপে গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রমের পাশাপাশি অতি সর্তকর্তার সঙ্গে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। আগামী নির্বাচনে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা এখন আশায় বুক বেঁধে আছেন।

আগামী নির্বাচনে এই আসনে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে পরাজিত হন। দীর্ঘ ৯ বছরে সেই কোন্দল নিরসন হয়নি। এবারও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সবাইকে তাক লাগান উপজেলা বিএনপির একাংশের আহ্বায়ক আহম্মেদ তায়েবুর রহমান হিরণ। তিনি ৫১ হাজার ৬৫০ ভোট পেয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। তৃণমূল থেকে এলাকার সব শ্রেণীর মানুষের কাছেও তিনি সমান জনপ্রিয়। তাই এ আসনে তিনিও শক্ত প্রার্থী। আগামীদিনে ধানের শীষের মনোনয়ন পেতে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।  এছাড়া জেলা  জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির দুবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল হক বিএনপির মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। তিনি নিয়মিত তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা ও গণসংযোগ করছেন। উপজেলা কৃষকদলের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী তানজিন চৌধুরী লিলি, উপজেলা কৃষকদলের সভাপতি ফয়সাল আমিন খান পাঠান ডায়মন্ড, শিল্পপতি শহীদুল আরেফিন খোকন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ, পৌর বিএনপির সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মুন্সিও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দণ্ডিত হয়ে কারাগারে গেলে বিএনপি নেতারা নড়েচড়ে বসেছেন। তারা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি দ্বন্দ্ব ঘুচিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। এমনটা হলে বিএনপি এগিয়ে যেতে পারবে বলে মনে করেন ভোটাররা।

আগামীকাল: বরিশাল-৫
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status