খেলা

স্পিনেই কেন অসহায় বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার

২০ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে দারুণ শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। তামিম ইকবাল ও লিটন দাস তিন ওভারে তোলেন ২৬ রান। কিন্তু এ দু’জন ঝড়ের গতি বাড়ানোর আগেই আঘাত হানেন ভারতের স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর। লিটনকে ফিরিয়ে দেন। এরপর তামিম, সৌম্য ও মুশফিক স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেলের শিকার। বলতে গেলে দুই স্পিনার মিলে শুরুতে যে ধাক্কা দেয় তা সামলে উঠলেও শেষ পর্যন্ত ১৬৬ রানের বেশি করতে পারেনি। যদিও জবাব দিতে শেষ বলে জয় পেয়েছে ভারত। ব্যাট হাতে টাইগার ব্যাটসম্যানরা স্পিনারদের কাছে উইকেট বিলিয়ে না দিলে তাহলে হয়তো রানের অংকটা বড় হতেই পারতো। শুধু তাই নয়, সিরিজে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচে ভারতের দুই স্পিনারই নিয়েছেন ৯ উইকেট। কিন্তু দু’জন মিলে ২৪ ওভারে রান দিয়েছেন ১২৩ রান। অন্যদিকে পেসাররা উইকেট পেয়েছেন ১০টি। তবে যেখানে ভারতীয় ৪ পেসার তিন ম্যাচে ৩৬ ওভার বল করে খরচ করেছেন ৩৩৬ রান। বলতে গেলে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচে হারের পেছনে টাইগারদের স্পিন খেলার দুর্বলতা ফুটে উঠেছে প্রকটভাবে। তাহলে কি স্পিনারদের খেলতেই ভুলে গেছে দলের ব্যাটসম্যানরা! নাকি অতি আত্মবিশ্বাস?  এ বিষয়ে বিসিবির প্রথিতযশা কোচ নাজমুল আবেদিন ফাহিম বলেন, ‘কারণটা হলো কোয়ালিটি স্পিন ও স্পিনার। ভারতের যারা স্পিনার তারা অসাধারণ বল করে। আমরা কিন্তু এমন স্পিনারদের খেলি না। যে কারণে ওদের স্পিনের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে।’  
তবে শ্রীলঙ্কার পেস ও স্পিন বোলারদের দারুণভাবেই সামলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ২ ম্যাচে টাইগারদের ৫ উইকেট নিয়েছে লঙ্কান স্পিনাররা। খরচ করেছে ১৮৭ রান। লঙ্কান পেসাররা একই সমান উইকেট পেলেও খরচ করেছেন ১৮৫ রান। যে কারণে লঙ্কার বিপক্ষে দুটি ম্যাচ জিতে নিদাহাস ট্রফিতে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল সাকিব আল হাসানের দল। অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশের অন্যতম শক্তি স্পিন। এ স্পিনেই নাকাল হয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড টাইগারদের কাছে টেস্ট হেরেছে। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবে রাজত্ব করছেন স্পিনার সাকিব আল হাসান। দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে একটা সময় পেসাররা দলে সুযোগ পেতেন না খুব একটা। তাই বলার অপেক্ষা রাখে না এখনকার ব্যাটসম্যানরা স্পিনেই খেলতে পটু। বিদেশের মাটিতেই নয়, তাদের দেশের মাটিতেও পেস বোলিংয়ে অসহায় দেখা গেছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা আয়োজিত নিদাহাস ট্রফিতে এই বাংলাদেশ দল স্পিনেই কাবু হয়েছে। বিশেষ করে ভারতের স্পিনারদের সামনে টাইগার ব্যাটসম্যানরা ছিলেন অনেকটাই অসহায়। দুটি ম্যাচে জয়ের সুযোগ ক্ষীণ হয়েছে এ স্পিনে অসহায়ত্বের কারণে। তাহলে ঘরোয়া ক্রিকেটে এত স্পিন বোলারদের খেলেও কেন স্পিনে এমন অদক্ষতা।
নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘বিষয়টা হলো আমাদের উইকেটগুলো স্পিন সহায়ক। যে কারণে সাধারণ মানের স্পিনারও দারুণ সুফল পায়। এটির সুযোগে আমাদের স্পিনাররা মনোযোগী হয় না। নিজের শতভাগ সক্ষমতার ব্যবহার করে না। আর অন্য দেশে যারা স্পিনার তারা কিন্তু পেস সহায়ক বা বেশির ভাগ স্পোটিং উইকেটে বল করে, যে কারণে তারা জানে যে তাদের ভালো বল করতে হবে। এই কারণে যখন আমরা ঘরের স্পিনারদের খেলে বিদেশি কোয়ালিটি স্পিনারদের মুখোমুখি হই তখন বুঝতে পারি কতটা কঠিন হয়। আমরা যে স্পিনারদের খেলি ঘরের মাঠে তাদের কোয়ালিটি বা মান নিয়ে বেশ প্রশ্ন রয়েছে।’   
ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা টাইগারদের বিপক্ষে ব্যবহার করেছেন শুধু দুই স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর ও যুজবেন্দ্র চেহেলকে। এর মধ্যে ৩ ম্যাচে চেহেল ১২ ওভার বল করে মাত্র ৫৮ রান খরচ করে নিয়েছেন ৫ উইকেট। ফাইনালেই তার শিকার ৩ উইকেট মাত্র  ১৮ রান খরচ করে। সুন্দর নিয়েছেন চার উইকেট। তিন ম্যাচে খরচ করেছেন ৬৫ রান। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে তার শিকার ৩ উইকেট ২২ রান খরচ করে। সেই ম্যাচেও বাংলাদেশ দল ১৭৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দেখেছিল জয়ের সম্ভাবনা। কিন্তু শুরুতেই তামিম, লিটন ও সৌম্য সরকারকে আউট করে টাইগারদের জয়ের পথ কঠিন করে তুলেছিলেন সুন্দর। যে কারণে মিডল অর্ডারে ব্যাটসম্যানরা লড়াই করলেও ১৭ রান দূরে থাকতেই হেরে যায় দল। এ ম্যাচে আরেক স্পিনার চেহেল ১ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে খরচ করেন মাত্র ২১ রান। বলতে গেলে ভারতের বিপক্ষে যে দুটি ম্যাচে জয়ের সম্ভাবনা জেগেছিল সেই খানেই স্পিনারদের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল বাংলাদেশ দল। তাই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের স্পিন খেলার সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে কোয়ালিটি স্পিনার তৈরি ও ভালো স্পিনে খেলার জন্য নিজেদের কিভাবে বদলানো সম্ভব? নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘অবশ্য উইকেট নিয়ে ভাবতে হবে। যারা স্পিনার আছে তাদেরকে উইকেটের সুবিধা কমিয়ে দিতে হবে। তাহলে তারা ভালো বল করার চেষ্টা করবে। আর আমাদের ব্যাটসম্যানরাও ভালো স্পিনারদের খেলে আরো মজবুত হবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status