বিনোদন

টিভি নাটকে গল্প সংকট

এন আই বুলবুল

২০ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

দেশীয় চ্যানেলগুলোতে প্রতিদিনই একাধিক ধারাবাহিক ও একক নাটক প্রচার হচ্ছে। বর্তমানে চ্যানেল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নাটক নির্মাণের সংখ্যা ও প্রচারের সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে- প্রচার ও নির্মাণের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি দর্শক বেড়েছে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর ‘না’। বরং টিভি নাটকের দর্শক কমেছে। গেল কয়েক বছর টিভি নাটকের দর্শক কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে চ্যানেলগুলোর মাত্রাতিরিক্ত বিজ্ঞাপন। সত্যি কি শুধু বিজ্ঞাপনের যন্ত্রণায় দর্শক টিভি নাটক দেখছেন না? যদি বিষয়টি এমন হয়ে থাকে তাহলে ভারতীয় সিরিয়ালগুলোতেও বিজ্ঞাপন প্রচার হয়ে থাকে। দর্শক কেন এবং কি কারণে সেগুলো দেখছেন? শহর থেকে শুরু করে আজকাল গ্রামের দর্শকেরাও ভারতীয় চ্যানেল স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলার সিরিয়ালে আসক্ত। অনেকে মন্তব্য করেন বিজ্ঞাপনের অজুহাত দেখিয়ে দেশীয় নির্মাতারা নিজেদের দায়মুক্ত রাখেন। প্রকৃতপক্ষে দেশীয় নাটকে এখন গল্পের দারুণ সংকট চলছে। একটি নাটকের প্রাণ হলো গল্প। একটি গল্পই পারে দর্শক ধরে রাখতে। এই সময়ে বেশির ভাগ নাটকের গল্পই গতানুগতিক। চ্যানেলগুলোও এর জন্য কম দায়ী নয়। বেশির ভাগ চ্যানেল এখন কমেডি নাটকে ভরপুর। জানা যায়, তারা নির্মাতাদের কাছে কমেডি নাটকের জন্য বেশি আগ্রহ দেখায়। ফলে নির্মাতারা এই ধরনের নাটক নির্মাণের প্রতিযোগিতায় ছুটছেন। এই সুযোগে অদক্ষ নির্মাতাদের সংখ্যাও বাড়ছে। ভালো কোনো পরিচালকের সঙ্গে কয়েক মাস সহকারী হিসেবে থেকে নিজেই নেমে পড়ছেন নির্মাণে। কেউ কেউ কয়েকটি মিউজিক ভিডিওর নির্দেশনা দেওয়ার পরেই নাটক নির্মাণের দুঃসাহস দেখাচ্ছে। এসব নির্মাতা তোষামোদ করেই চ্যানেলে তাদের নাটক প্রচার করছে বলে বিজ্ঞজনদের অভিমত। টিভি চ্যানেল ও দেশীয় নির্মাতারা হয়তো ভুলেই গেছেন, দর্শকরা এখনও ‘আজ রোববার’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘রূপনগর’, ‘রঙ্গের মানুষ’, ও ‘আমাদের নুরুল হুদা’ -এর মতো ভিন্ন ভিন্ন আইডিয়া বা গল্পের নাটকগুলোই আশা করেন। দর্শকের সেই আশায় গুড়েবালি। সবাই দর্শকের কথা মুখেই বলছেন। বাস্তবে তার বিপরীত। এই প্রসঙ্গে টিভি পর্দার শক্তিমান নির্মাতা-অভিনেতা গাজী রাকায়েত বলেন, এখন ধারাবাহিকগুলোতে গল্প নেই বললেই চলে। একই পরিস্থিতি খণ্ড নাটকেও। আমি মনে করি এখনকার বেশির ভাগ নির্মাতা নাটক নিয়ে গবেষণা করে না। এক সময় আমাদের অনেক জনপ্রিয় নাটক নির্মাণ হয়েছে। এগুলোর কিছু সাহিত্যনির্ভর, কিছু সমসাময়িক গল্পেরও ছিল। সেই সময় কিছু কিছু নাটকের সংলাপ মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত। আর এখন দর্শক নাটক দেখাই প্রায় বন্ধ করে দিচ্ছে। দু’-একটি ছাড়া অধিকাংশ ধারাবাহিকে শিল্পীদের ছোটাছুটি, লাফালাফি করতে দেখা যায়। টিভি নাটকের দর্শক ধরে রাখার জন্য ধারাবাহিকের বিকল্প নেই। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা নিজেরাই দর্শকদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। সত্যি বলতে আমাদের এখন ভালো গল্পকারের সংকট রয়েছে। সেই কারণে নাটকে ভালো গল্প পাচ্ছি না। তিনি আরো বলেন, এখন অনেকে বাজেট স্বল্পতার কথাও বলছেন। এটিকেও অস্বীকার করা যাবে না। আমাদের কয়েক বছর আগেও নাটকে যে বাজেট ছিল এখন সেটি নেই। একটি ভালো কাজের জন্য সঠিক বাজেট না থাকলে কাজটি করা সম্ভব নয়। চ্যানেল ও নির্মাতাদের এই বিষয়গুলো নিয়ে বসা প্রয়োজন। টিভি নাটক থেকে দর্শকদের দূরে থাকার কারণগুলো বের করে সমাধানের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। বরেণ্য অভিনেতা আবুল হায়াত বলেন, দর্শক সব সময় নাটকে গল্প খোঁজে। গল্পহীন কোনো নাটক কোনোকালেও দর্শকের কাছে সমাদৃত হয়নি। আমি মনে করি আগের মতো এখন সেই ধরনের আকর্ষণীয় গল্প আমরা নাটকে দর্শকদের দেখাতে পারছি না। দশটি কাজের মধ্যে যদি দু’-চারটি ভালো হয় সেটিকে কখনো ভালো বলা যায় না। ভালোর জন্য অবশ্যই ভালোর সংখ্যা বেশি হতে হবে। বিদেশি সিরিয়ালগুলোর নির্মাণশৈলী ও গল্পের গাঁথুনি সব কিছুতে চমক থাকে। শিল্পীদের চরিত্রের মধ্যে থাকে বৈচিত্র্য। দর্শক সেই মোহে নাটকটি দেখতে বাধ্য হয়। আমাদের যেমন গল্পের অভাব রয়েছে তেমনি নির্মাণশৈলীও দুর্বল। এদিকে আজকাল অনেক নির্মাতাকে শুটিং স্পটে গিয়ে স্ক্রিপ্ট করতে দেখা যায়। এভাবে তো কখনো একটি ভালো নাটক নির্মাণ সম্ভব নয়। একটি ভালো নাটকের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। দেশীয় টিভি মাধ্যমে যতগুলো নাটক এ পর্যন্ত দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছে তার সবক’টির গল্পের গভীরতা অনেক বেশি। নাটক সংশ্লিষ্টদের মতে, এভাবে গল্পহীন নাটক নির্মাণ ও বৈচিত্র্য না থাকার কারণেই দর্শক নাটকবিমুখ হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশীয় নাটকে নির্মাতাদের ভালো গল্প ও সাহিত্যনির্ভর নাটক নির্মাণের মধ্য দিয়ে আবারো দর্শকদের নাটকমুখী করতে হবে। দেশ-সমাজের সমসাময়িক বিভিন্ন অসঙ্গতিও নাটকের গল্পে দেখাতে হবে। পাশাপাশি সময়ের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। না হয় টিভি নাটকের বিপর্যয় সন্নিকটে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status