এক্সক্লুসিভ

সারা দেশে বিএনপির বিক্ষোভ আজ

খালেদা জিয়া ন্যায় বিচার পাননি: ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার

২০ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:০৮ পূর্বাহ্ন

খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত করে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া আদেশে ‘সরকারের ইচ্ছাই প্রতিফলিত’ হয়েছে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্ষোভের সঙ্গে বলছি, এই আদেশে সরকারের যে ইচ্ছা- সেই ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার স্থল সর্বোচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছেন খালেদা জিয়া। সর্বোচ্চ আদালতে জামিন স্থগিতের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে বিএনপি। সেই সঙ্গে পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় পূর্ব-ঘোষিত ১৯শে মার্চ সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাটি আগামী ২৯শে মার্চ আয়োজনের ঘোষণাও দিয়েছে দলটি। হাইকোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের আদেশ দেয়ার পর দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত তাৎক্ষণিক ব্রিফিংয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, সর্বোচ্চ আদালত মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার শেষ ভরসাস্থল। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। কিন্তু সরকারের মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে দেশে সাংবিধানিক কোনো প্রতিষ্ঠানই    স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। যদি কেউ ন্যায়সঙ্গত উদ্যোগ নেন তাহলে তার পরিণতি হবে সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার মতো। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলার রায় হয়েছে। আর ৫ বছরের কম রায়ের ক্ষেত্রে আপিল করলেই সঙ্গে সঙ্গে জামিন হয়ে যায়। আর খালেদা জিয়া তো মামলার সঙ্গে কোনভাবেই সম্পৃক্ত নন, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে আলোচনা হচ্ছিল এবং এটর্নি জেনারেলসহ সরকার পক্ষের লোকেরা বলছিল- দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়া হয়নি। তার সাজা হয়েছে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগে। এছাড়া হাইকোর্ট খালেদা জিয়াকে ৪ কারণে জামিন দিয়েছে আপিল বিভাগ সে ৪টি কারণও খণ্ডন করেনি। সেই মামলায় জামিন পাওয়াটা তো স্বাভাবিক ও তার আইনগত অধিকার। কিন্তু খালেদা জিয়ার জামিন ও তার কারামুক্তির আইনি প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত সচেতনভাবে পদে পদে বাধা দিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, আপিল বিভাগের এমন আদেশে প্রবীণ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক হতভম্ব হয়েছেন। সবাই হতভম্ব হয়েছেন। আসলে খালেদা জিয়াকে এভাবে বন্দি করে রাখার উদ্দেশ্য গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে কবর দেয়া। জামিন স্থগিতের মাধ্যমে কফিনে শেষ পেরেকটি মেরে দেয়া হলো। বিচারবিভাগের উপর ভর করে আওয়ামী লীগ সরকার মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করে নিচ্ছে। মির্জা আলমগীর বলেন, গণতন্ত্র বিরোধী বর্তমান সরকার এই অনৈতিকভাবে নিজেদেরকে নির্বাচিত ঘোষণা করা সরকার দেশ থেকে গণতন্ত্র ও মানুষের মৌলিক অধিকারকে পুরোপুরি হরণ করে ফেলেছে। আপনারা যারা গতকাল (সোমবার) আদালতে গেছেন তারা দেখেছন কিভাবে আদালতের ভেতরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে পুরোপুরি ঘিরে রেখেছে। আগে দেখতাম তারা অবস্থান করতো বাইরে, এখন দেখছি ভেতরে। এমনকি প্রধান বিচারপতির এজলাসের বাইরে পর্যন্ত। কিছু কিছু লোককে ভেতরে ঢুকতে দেখেছি আর্মসসহ, বেল্টসহ। পৃথিবীর কোনো দেশে এ রকম নজির রয়েছে বলে আমরা জানি না। খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, খুব কৌশলে যাচ্ছে কিন্তু সরকার। কৌশলটা হচ্ছে জামিন স্থগিত করে দিয়েছে, জামিন নাকচ করেনি। এরপর লিভ টু হিয়ারিং হবে লিভ টু আপিলের। অর্থাৎ এভাবে ক্রমান্বয়ে যেতে থাকবে এবং খালেদা জিয়াকে আটকিয়ে রাখা হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার দাবি করার জন্যই খালেদা জিয়াকে নিষ্ঠুর নির্যাতন সইতে হচ্ছে। নাৎসী নির্যাতনের নতুন দৃষ্টান্ত এখন বাংলাদেশ। প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ হুমকি দিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। সরকারের অভিপ্রায়েরই ফলাফল ফুটে উঠছে একের পর এক বিচারিক সিদ্ধান্তে। সরকারের অন্যায়, অত্যাচার এবং বিচার বিভাগকে ব্যবহার করার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সমস্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার মনে হয়- সরকার আমাদের ভিন্নপথে পরিচালিত করতে চাইছে। আমরা সহজে ভিন্ন পথে পরিচালিত হবো না। এ ব্যাপারে নিশ্চিত ও নিশ্চয়তা দিতে চাই। মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়াকে ঘিরে মনে হয় সরকার এক ভয়াল চক্রান্তজাল বুনছে। সরকারের অভিপ্রায় তাঁর জামিন নিয়ে গড়িমসি করার মাধ্যমে তাকে জরাজীর্ণ ও পরিত্যক্ত কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি করে রাখার অশুভ নীল-নকশার আলামত দেখা যাচ্ছে। বহুত্ববাদ দেশ থেকে ঝেঁটিয়ে একক কর্তৃত্বের শাসন প্রলম্বিত করার জন্যই গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে সমাহিত করে ফেলতেই বিএনপি চেয়ারপারসনকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। জামিন দিতে বিচারের ইতিহাসে নজিরবিহীন বিলম্ব ঘটানো হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠিত করে শুধুমাত্র ক্ষমতাসীনরাই পুনরায় ক্ষমতার মসনদে বসার স্কিম বাস্তবায়নে খালেদা জিয়াকে প্রধান অন্তরায় ভাবে। তাই রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে তাঁকে বন্দি করে এখন কারাবাসকে দীর্ঘায়িত করার চক্রান্তে মেতে উঠেছে। গণবিচ্ছিন্ন সরকার বন্ধুদের দেয়া পথনকশা অনুযায়ী আগামী ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার এজেন্ডা নিয়ে এখন মাঠে নেমেছে। আর এই কারণেই দেশনেত্রীর কারামুক্তি নিয়ে ছলচাতুরী শুরু করেছে। দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ব্যাপক ক্র্যাকডাউন চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন মামলা দেয়া হচ্ছে। তাদের একটি প্রো-ফর্মা তৈরি আছে। সে অনুযায়ীই সবখানে মামলা হচ্ছে। কেবল নামগুলো বদলে দেয়া হচ্ছে। সারা দেশে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আজ এই অবস্থা। খুলনায় দলের ধর্মবিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুকে তিনদিন আগ তুলে নেয়ার পর এখনো তার খোঁজ নেই। কিছুদিন আগে তেজগাঁও ছাত্রদলের নেতা জাকির হোসেন মিলন যে মারা গেল একটি বিদেশি গণমাধ্যম তার সাক্ষাৎকার নেয়ার চেষ্টা করলে অল্পক্ষণের মধ্যে সেখানে পুলিশ ঘিরে ফেলে। মিলনের পরিবারের সদস্যরা আর সেখানে থাকতে পারেনি। এছাড়া দেশের নিম্ন আদালতগুলো জামিন দিচ্ছে না। আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কতদিন আগে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার জামিনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। কারণ নিম্ন আদালতকে বলে দিয়েছে শুনানি পরে হবে। তিনি বলেন, নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে নয়, সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়েই তো সাবেক এসকে সিনহাকে (সাবেক প্রধান বিচারপতি) চলে যেতে হলো। সেজন্য বিধিবিধান পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। সেটা সরকার করতে দেয়নি। এরফলে কী হয়েছে? এখন আইন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশে নিম্ন আদালত চলছে। আইন মন্ত্রণালয় বলে দিচ্ছে জামিন শুনানি হবে একমাস/দুই মাস পরে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি দেশের মানুষ, সকল রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনকে অনুরোধ করবো, এই সংকট থেকে উদ্ধার পেতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঢাকা মহানগরের প্রতি থানায় থানায়, জেলা ও মহানগরে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। মির্জা আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তির দাবিতে আজকে(সোমবার) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি পাইনি। আমাদের প্রতিনিধি দলকেও তারা সাক্ষাৎ দেননি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাটি আয়োজনের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব জায়গায় আবেদন ও অবহিত করেছি। ব্যক্তিগতভাবে আমি ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কথা বলতে পারিনি। তিনি বলেন, আগামী ২৯শে মার্চ আমরা আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাটি করবো। সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, আমাদেরকে এই জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন উপস্থিত ছিলেন।

জামিন স্থগিতের প্রতিবাদে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতের প্রতিবাদে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের নেতৃত্বে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিলে সহ-সভাপতি আলমগীর হাসান সোহান, ইখতিয়ার রহমান কবির, জয়দেব জয়, হুমায়ুন কবির, যুগ্ম সম্পাদক মিয়া মো. রাসেল, মিজানুর রহমান সোহাগ, আবুল হাসান, কাজী মোখতার হোসাইন, এসএম কবিরসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এদিকে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদকে ঢাকার মতিঝিল থেকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status