বাংলারজমিন

পরিশ্রমই বদলে দিলো আত্মবিশ্বাসী লাইজুর ভাগ্য

জালাল উদ্দিন আহমেদ, পটুয়াখালী থেকে

১৯ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ৮:৪৩ পূর্বাহ্ন

পরিশ্রমই বদলে দিতে পারে মানুষের ভাগ্য, এমনটি বললেন কর্মযজ্ঞে বিশ্বাসী অর্ধশিক্ষিত হাস্যোজ্জ্বল সদালাপী তিন সন্তানের জননী লাইজু। পটুয়াখালী পৌর শহরের কাজীপাড়া নিবাসী লঞ্চঘাটের আলোচিত সিরাজ হোটেল মালিক মো. সিরাজ খানের পাঁচ সন্তানের দ্বিতীয় সন্তান লাইজু। সে বাবার অভাব-অনটনের মধ্যে কোনোরকম লেখাপড়া করে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেও ইংরেজি বিষয় অকৃতকার্য হয়ে অর্থাভাবে আর এসএসসি পাস করা হয়নি। ২০ বছর বয়সের সময় বাবা ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের মো. মালেক মৃধার বেকার ছেলে কবির মৃধার সঙ্গে বিয়ে দেন। লাইজু বাবার বাসায় স্বামীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। স্বামী বেকার কি করবে, বাবার টানা-পোড়নের সংসারে কতদিন বোঝা হয়ে থাকবে। এ ভাবনা-চিন্তার একপর্যায়ে ১০ বছর আগে স্থানীয় আশা নামক এনজিও থেকে ১০ হাজার টাকা লোন নিয়ে বাবার বাড়ির পিছনে ছোট জায়গায় লোনকৃত ১০ হাজার টাকা দিয়ে মুরগির বাচ্চা কিনে লালন পালন করা শুরু করেন লাইজু। কিছুদিন পর দুইশ’ মুরগি বিক্রি করে ২০ হাজার টাকা মুনাফার ১৩ হাজার টাকা দিয়ে একটি গাভী কিনে লালন-পালন করেন এবং বাকি টাকা দিয়ে মুরগির বাচ্চা কিনেন। পাশাপাশি তিতাস সিনেমা হলের পূর্বপাশে ছোট একটি চায়ের দোকান শুরু করেন স্বামী কবির মৃধাকে নিয়ে। দুইবছর পর ১৩ হাজার টাকায় কেনা গাভী গরুটি দুইটি বাচ্চাসহ ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন । এ বিক্রীত টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে সবুজবাগস্থ ভিপি দুলাল চেয়ারম্যানের কাছ থেকে একটি অস্ট্রেলিয়ান গাভী কেনেন। বর্তমানে তার ৬টি গাভী গরু ও দুইটি বাচ্চা রয়েছে যার মূল্য হবে ৬ লক্ষাধিক টাকা বলে লাইজু জানান। এছাড়াও লাইজু তার লভ্যাংশ টাকা দিয়ে ২টি ভেড়া কিনে লালন-পালন করেন। বর্তমানে ১টি বাচ্চাসহ ১০টি ভেড়া রয়েছে যার মূল্য হবে লক্ষাধিক টাকা। সেলাই মেশিন চালানোসহ মুরগি, গরু ও ভেড়া লালন-পালনের পাশাপাশি তিতাস সিনেমা হলের মোড়ে ঘরোয়া পরিবেশে কবির মৃধা নামে একটি ভাতের হোটেল ব্যবসা করেন। তিনি এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। এ সব ব্যবসা পরিচালনা করে লাইজু তার তিন ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে আসছেন। তার বড় ছেলে সাজিন করিম মৃধা কলেজে এইচএসসি প্রথমবর্ষে, দ্বিতীয় ছেলে সিয়াম পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে শাওন সবুজবাগস্থ দারুল কুরআন মাদ্‌রাসায় কেজিতে পড়াশুনা করে। তার এ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী পরিচালিত ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’- শীর্ষক বিশেষ কার্যক্রমের আওতায় ‘অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে সর্বশ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মানে ভূষিত করেছে জেলা প্রশাসন। ২০১৭ সালের ৯ই ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস পালন উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের দরবার হলে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে কর্মে আত্মবিশ্বাসী লাইজুকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ জয়িতা’র সম্মানে ভূষিত করে ক্রেস্ট ও সম্মাননা পত্র প্রদান করেন জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মাছুমুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা দিলারা খানমসহ সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ। জেলার সর্বশ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মানে ভূষিত লাইজু তার অনুভূতি প্রকাশে বলেন, আমি জীবনে অনেক কষ্ট করেছি, আমি কষ্ট করে আমার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পেরেছি, সরকার আমাকে যে সম্মান দিয়েছে, তাতে আমি অনেক গর্বিত ও অনেক খুশি। আমার স্বপ্ন ছেলে তিনটিকে মানুষ করে সরকারি চাকরিতে দেবো। আমি চেষ্টা করছি, আগামী পৌর নির্বাচনে ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে গরিব-দুঃখী মানুষের সেবা করা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status