দেশ বিদেশ
রোহিঙ্গা সংকট
মিয়ানমার হিটলারের মতো প্রচারণা কৌশল নিয়েছে- পররাষ্ট্র সচিব
কূটনৈতিক রিপোর্টার
১৮ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১২:৩৫ অপরাহ্ন
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকাতে মিয়ানমার হিটলারের মতো প্রচারণা কৌশল ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন লন্ডন সফরে থাকা পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসের দক্ষিণ এশিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি বলেন, মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায় না। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রশ্নে মিয়ানমারের আচরণকে নাৎসী বাহিনীর আচরণের সঙ্গে তুলনা করেন তিনি। এই সংকট আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে পারে বলেও সতর্ক করেন বাংলাদেশী জ্যেষ্ঠ ওই কূটনীতিক। গত ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলাকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা বিরোধী ব্যাপক অভিযান শুরু করে মিয়ানমার। সাঁড়াশি ওই অভিযানে বাছ-বিচারহীনভাবে হত্যা করা হয় রোহিঙ্গাদের। বর্মীদের বর্বর নির্যাতন থেকে প্রাণে বাঁচতে ১০ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের তাড়িয়ে দেয়ার ফেরার পথে মাইন পুঁতে রাখা এবং সীমান্তে সেনা মোতায়েনসহ তাদের ফিরে যাওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওই অভিযান বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেÑ ‘রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক প্রচারণা সেখানকার সমাজকে বিদ্বেষী করে তুলেছে।’ ওই সামরিক প্রচারণাকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন হিটলারের প্রচারণা কৌশলের সঙ্গে তুলনা করেছেন পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক। ‘দ্য রোহিঙ্গা হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস: বাংলাদেশ রেসপন্স’ শীষক লন্ডনের সেমিনারে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, ‘মনে হচ্ছে নিজেদের দেশ থেকে সব রোহিঙ্গাকে বের করে দিতে চায় মিয়ানমার। আর তা অর্জন করতে তার সব ধরণের প্রক্রিয়া ও উপকরণ ব্যবহার করছে। আপনি যদি তাদের আচরণ দেখেন তাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানির আচরনের মতো মনে হবে। তাদের প্রচারণা কৌশল বিষয়ে তিনি বলেন, হিটলার আম যেভাবে প্রচারণা কৌশল ব্যবহার করতো সেভাবেই মিয়ানমার প্রশিক্ষিত হয়েছে।’ শহীদুল হক বলেন, সম্ভবত সেখানে আর মাত্র এক লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে আর বাকিদের তাড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে তারা। দেশটির বর্তমান নীতি হলো স্থিতাবস্থা বজায় রেখে রোহিঙ্গাদেরফেরত না নেয়া। সচিব বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের শর্ত পূর্ণ হলেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বৈশ্বিক চাপ অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তিনি। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বৃটেনের সমর্থনকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে অভিহিত করে সচিব বলেন, বৃটিশ সরকার আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর তা শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, মানবিক সহায়তার বিবেচনাতেও তাদেরও অঙ্গীকার রয়েছে। এ সংকট বহুমাত্রিক ও বহুস্তর বিশিষ্ট বলেও উল্লেখ করেন বাস্তুচ্যুত লোকজনকে নিয়ে দুনিয়ার দেশে দেশে কাজ করা শহীদুল হক।