খেলা

দায় শোধ, চাই আর ৪ রান

স্পোর্টস ডেস্ক

১৮ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

মাহমুদুল্লাহর এ চারের মারেই ঘুরে যায় খেলা

এবার গর্বের মাইলফলকের সামনে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ১০০০ রান পূর্ণ হতে পারে তার আজই। এ ল্যান্ডমার্ক থেকে মাত্র ৪ রানে দূরে রয়েছেন তিনি। ৬৬ ম্যাচের ক্যারিয়ারে ২১.১৯ গড়ে মাহমুদুল্লাহর সংগ্রহ ৯৯৬ রান। এতে মাহমুদুল্লাহর রয়েছে তিনটি অর্ধশতক। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ১০০০ রানের কীর্তি রয়েছে বাংলাদেশের শুধু তিন ব্যাটসম্যানের। তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের পর ভারতের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচে এ মাইলফলক স্পর্শ করেন মুশফিকুর রহীম।
শুক্রবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাট হাতে মাহমুদুল্লাহ উইকেটে যখন এলেন বাংলাদেশের জয়ের জন্য ৩০ বলে ৫০ রান প্রয়োজন। নিজের শুরুর ১০ বলে করলেন ২০ রান। আর পরের ৮ বলে ২৩। শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১২ রানের। লঙ্কান পেসার ইসুরু উদানা পরপর দুই বাউন্সার দিলে লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ৪ বলে ১২। ওভারের তৃতীয় বলে অফস্টাম্পের অনেক বাইরের ডেলিভারি অসাধারণ দক্ষতায় সীমানার বাইরে পাঠালেন মাহমুদুল্লাহ। পরের বলে দৌড়ে নিলেন দু’রান। আর ওভারের পঞ্চম বলে দারুণ ফ্লিকে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশকে এনে দেন অবিস্মরণীয় এক জয়। মাহমুদুল্লাহর নিজের জাত চিনিয়েছিলেন ২০১০ সালের  আইডিয়া কাপেই। নিজ মাটিতে ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে আয়োজিত ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ জিততে না পারলেও দলের শেষ তিন ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ করেন ৬০, ২৪ ও ৬৪ রান। তিনবারই ছিলেন অপরাজিত। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার ইনিংসটি বাংলাদেশের জন্য আলাদা তাৎপর্যের। সেদিন মাহমুদুল্লাহ যখন উইকেটে এলেন, দলীয় ৮ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত  ১০৩ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ। বিশ্বকাপে ওটা ছিল বাংলাদেশি কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম সেঞ্চুরি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঠিক পরের ম্যাচেও প্রায় একই পরিস্থিতি। ২৭ রানে নেই ২ উইকেট। এমন সময় উইকেটে এসে অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ। আর সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে রেকর্ডগড়া নৈপুণ্য। আসরে টিকে থাকতে জয় ছাড়া পথ ছিল না বাংলাদেশের। টাইগারদের ২৬৫ রানের টার্গেট দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। জবাবে মাত্র ৩৩ রানে চার উইকেট খোয়ায় বাংলাদেশ। তবে ওই শেষ। পঞ্চম উইকেটে ম্যাচজয়ী ২২৪ রানের জুটি গড়েন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। উভয়েই পূর্ণ করেন সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের যেকোনো উইকেট জুটিতে এটি সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আর ওয়ানডে ইতিহাসে পঞ্চম উইকেট জুটিতে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৬’র টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩০ রানের টার্গেটে হার না মানা ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলেন মাহমুদুল্লাহ। মিরপুর মাঠে ১৭.২তম ওভারে সাকিব আল হাসানের বিদায়ে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ১০৪/৫-এ। শেষ ১৬ বলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ছিল ২৬ রানের। ছয় নম্বরে ব্যাট হাতে ১৫ বলে ২২ রান করেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এতে তিনি হাঁকান দুই চার ও একটি ছক্কা।
বেঙ্গালুরুর দায় শোধ
বেঙ্গালুরুতে অবিশ্বাস্য এক ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৬’র টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ তিন বলে প্রয়োজন ছিল ২ রান। হাতে ছিল ৩ উইকেট। কিন্তু শেষ তিন বলে তিন উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। যেখানে দ্বিতীয় উইকেটটা ছিল মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের। মুশফিকুর রহীমের আউটের পর বিলাসী শট খেলতে গিয়ে উইকেট খুইয়ে ভিলেন হয়েছিলেন ভক্তদের কাছে। তবে শুক্রবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সেই দায় কিছুটা শোধ করলেন মাহমুদুল্লাহ। এবার ৩ বলে ১২ রান তুলে বাংলাদেশকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছেন তিনি। তাই এটাকে ক্যারিয়ারের সেরা জয় বললেন এ সাইলেন্ট কিলার। শুক্রবার ১৬০ রানের টার্গেটে দলীয় ৩৩ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর তামিম ইকবাল ও মুশফিকের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ানো। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই ছন্দপতন। ১২ রান তুলতেই নেই ৩ উইকেট। সাকিবকে নিয়ে মাহমুদুল্লাহর প্রতিরোধ। কিন্তু আবারো ছন্দপতন। এবার ১১ রান তুলতে আউট হন ৩ ব্যাটসম্যান। তখন দলের একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে ছিলেন মাহমুদুল্লাহ। দল তথা কোটি টাইগার সমর্থকরা তাকিয়ে ছিলো তার দিকেই। এর আগে ২০১২তে এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে এমন মুহূর্তে উইকেটে ছিলেন দলের শেষ ভরসা হয়ে। কিন্তু পারেননি। পরে ২ রানের হারে স্বপ্নভঙ্গ হয় টাইগারদের। আর ভারতের বিপক্ষে সে হারের স্মৃতিতো এখনো তরতাজা। কিন্তু এবার ঠিকই পেরেছেন মাহমুদুল্লাহ। শেষ চার বলে যখন প্রয়োজন ১২ রান, সেটা করে ফেললেন এক বল হাতে রেখেই। চার, দুই ও ছক্কায়। দারুণ ফিনিশিং। পরে বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতেন এ সাইলেন্ট কিলার। এদিন আর নীরবে নয় বলে কয়েই খুন করলেন লঙ্কানদের স্বপ্ন। এমন জয়ের পর মাহমুদুল্লাহ বলেন, এটা আমার ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস। সাকিবের দলে সেরাটা আমাদের কাছে প্রেরনার। খেলোয়াড়রা ভালো করার জন্য মুখিয়ে ছিল। আমার পরিকল্পনা ছিল বলটা যতটা পারি জোরে মারবো। বলটা ভালোভাবে দেখে সে অনুযায়ী মারার চেষ্টা করেছি। শেষ কয়েক ওভারে আমি কিছুটা নার্ভাস ছিলাম। যখন সাকিব এবং আমি উইকেটে ছিলাম এটা সহজ ছিল কিন্তু সাকিব আউট হওয়ার পর আমার ওপর চাপ পড়ে যায়। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল আমরা জিতবো। নিদাহাস ট্রফিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম লড়াইয়ে ব্যাঙ্গালুরুর হারের দায় মিটিয়েছিলেন মুশফিক। তার অতিমানবীয় এক ইনিংসে রেকর্ড গড়েই জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status