শেষের পাতা

ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের আধিপত্য বিস্তার

অমিত ভাণ্ডারি ও চাঁদনি জিন্দাল

১৮ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৪ পূর্বাহ্ন

এশিয়ায় ভারত ও বাকি বিশ্ব চীনের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগ প্রত্যক্ষ করছে আতঙ্ক ও উদ্বেগের মিশ্রণে। এসব বিনিয়োগ হচ্ছে অপ্রত্যাশিতহারে। তাদের এই আচরণ আঞ্চলিক ও নৌ-সীমানার দাবিকে আরো আগ্রাসী হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্বের চেয়েও তাদের এই মনোভাব বেশি প্রতিফলিত হয়েছে। তারা এসব দেশ ও অঞ্চলে রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাচ্ছে। বেশির ভাগ বিনিয়োগ হচ্ছে দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)-এর অংশ। এই পরিকল্পনা শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের পরিকল্পনায়। তিনি চাইছেন চীনকেন্দ্রিক বৈশ্বিক বাণিজ্য নেটওয়ার্ক ও চীনের 
প্রভাবের বলয় সৃষ্টি করতে। ভারতের জন্য এ বিষয়টি মজার ও উদ্বেগের। বিশেষ করে, যখন বিআরআই প্রকল্পের বড় অংশ হলো চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি)। এর মাধ্যমে পাকিস্তান হয়ে উঠতে পারে আঞ্চলিক প্রাণকেন্দ্র। মধ্য এশিয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান হারে জ্বালানিক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে পাকিস্তান। যথার্থ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাবকে পুরোপুরি বোঝা যাবে না। এ জন্য বছরব্যাপী দৃশ্যমান গবেষণা ও বিশ্লেষণ করেছে গেটওয়ে হাউস। এ সময়ে তারা প্রাথমিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রতিবেশী ছয়টি দেশে মনোযোগ দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এ থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট ও ম্যাপ থেকে গবেষণা চালানো হয়েছে। এবং তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
মূল বিষয়গুলো:
গত এক দশকে বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় ১৫০০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেছে চীন অথবা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। বর্তমানে মালদ্বীপ, মিয়ানমার, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক অর্থ বিনিয়োগকারী দেশ হলো চীন।
ভারতের একেবারে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও পাকিস্তান এই দুটি দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি দিয়েছে চীন। এসব দেশে চীনা বিনিয়োগ সরকারকে শক্তিশালী করছে, যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসের অভিযোগে আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে।
ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশের অর্থনীতি সবচেয়ে গতিশীল। তারাও চীনের ওপর ন্যূনতম হলেও নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। চীনের খেলা পরিষ্কার। তারা প্রথমে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ দেয়। তারপর সেটাকে পরিচর্যা করে। অংশীদার ও স্থানীয় অভিজাতদের নিয়ে সহায়তা দেয় আধুনিক অবকাঠামো খাতে। এক্ষেত্রে অর্থদান কিছুটা বিলম্বিত হয়। নিজেকে অবিচল করে তোলে তারা।
বড় ধরনের অবকাঠামো যেমন বিদ্যুৎ, সড়ক, রেলওয়ে, ব্রিজ, সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দরের মতো বড় অবকাঠামোয় বিনিয়োগে মনোযোগ দেয় চীন। অনেক ক্ষেত্রেই এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী কন্ট্রাক্টরও চীনা। অনেক ক্ষেত্রে এসব প্রকল্পে যে তহবিল থাকে তাও চায়না।
বড় ধরনের অবকাঠামো ছাড়াও চীন ভূ-অর্থনৈতিক বিষয় নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছে। তারা এসব দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায়ও বিনিয়োগ করছে। ঢাকা ও করাচি স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার কিনেছে বেইজিং। চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে ইউয়ান বাণিজ্য চর্চা শুরু হয়েছে। বিআরআই বিষয়ক বিরোধ মেটাতে খেয়ালখুশিমতো তারা চীনভিত্তিক একটি আদালত প্রতিষ্ঠা করছে। তাই সুস্পষ্টভাবে বলা যায়, বেইজিং নতুন আইনকানুন সৃষ্টি করছে। এ অঞ্চলে সরকারগুলোর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নতুন করে সাজাচ্ছে। এসব পরিবর্তন করা হচ্ছে যাতে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে তাদের আধিপত্য সুদৃঢ় হয়।
(অনলাইন গেটওয়ে হাউসে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status