প্রথম পাতা

সৌদি যুবরাজ

ইরান পারমাণবিক বোমা বানালে আমরাও বানাবো

মানবজমিন ডেস্ক

১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

ইরান পারমাণবিক বোমা বানালে, সৌদি আরবও বানাবে। এমন ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। মার্কিন টিভি চ্যানেল সিবিএস নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সৌদি আরবের পারমাণবিক বোমা বানানোর ইচ্ছা নেই। কিন্তু এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, যদি ইরান পারমাণবিক বোমা বানায়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরাও বানাবো।’ এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
এতে বলা হয়, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৫ শক্তিধর দেশের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে ইরান নিজের পারমাণবিক প্রকল্প সীমিত করতে সম্মত হয়। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট 
ডনাল্ড ট্রাম্প তার পূর্বসূরির আমলে হওয়া ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার হুমকি দিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিন থেকে সৌদি আরব ও ইরান একে-অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, সিরিয়া ও ইয়েমেনের যুদ্ধ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি আরবের সিংহাসনের পরবর্তী উত্তরাধিকার। এছাড়াও তিনি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সিবিএস চ্যানেলের ৬০ মিনিটস প্রোগ্রামকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি শর্তসাপেক্ষে পারমাণবিক বোমা তৈরির ইচ্ছার কথা জানান।
নভেম্বরে কেন ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ আল খামেনিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের নয়া হিটলার’ আখ্যা দিয়েছিলেন, সেই ব্যাখ্যাও দেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি বলেন, ‘তিনি [খোমেনি] মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রকল্প তৈরি করতে চান। যেটা অনেকটা হিটলারের মতো। হিটলারও তার সময়ে ক্ষমতার বিস্তার ঘটাতে চেয়েছিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব কিছু ঘটে যাওয়ার আগে বিশ্বের অনেক দেশ ও ইউরোপ বুঝে উঠতে পারেনি হিটলার কতটা বিপজ্জনক। আমি চাই না মধ্যপ্রাচ্যেও একই ঘটনা ঘটুক।’
যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র সৌদি আরব ১৯৮৮ সালে পরমাণু অস্ত্র বিস্তার-রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। এখন পর্যন্ত সৌদি আরব নিজে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কোনো চেষ্টা করেছে বলে জানা যায়নি। তবে দেশটি পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্র প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। ২০১৩ সালে ইসরাইলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান আমোস ইয়াদলিন সুইডেনে এক সম্মেলনে বলেন, যদি ইরান বোমা তৈরিতে সক্ষম হয়, তাহলে সৌদি আরব এক মাসও অপেক্ষা করবে না। তারা ইতিমধ্যে বোমার জন্য অর্থ ব্যয় করেছে। তারা পাকিস্তানে যাবে, আর তাদের যা দরকার, সেটা নিয়ে আসবে।’ ইরানও পরমাণু অস্ত্র বিস্তার-রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। তবে দেশটির দাবি, তাদের পারমাণবিক প্রকল্প কেবল শান্তিপূর্ণ কাজেই ব্যবহার হবে।
২০১৫ সালে দেশটি আন্তর্জাতিক একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান পারমাণবিক প্রকল্প সীমিত করার বিনিময়ে নিজেদের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করাতে সক্ষম হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, প্লুটোনিয়াম উৎপাদন বন্ধ করে। এছাড়া অধিকতর আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়।
ওই চুক্তিকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের জন্য বড় বিজয় হিসেবে দেখা হয়। তবে তার উত্তরাধিকারী ডনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তিকে ‘সর্বকালের সবচেয়ে খারাপ চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তার সদ্য-সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসনও ওই চুক্তি সমর্থন করতেন। কিন্তু তার বদলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন মাইক পম্পেও। তিনিও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একমত যে, ইরান চুক্তি বাতিল করা উচিত।
জানুয়ারিতে ট্রাম্প ইরানের আর্থিক নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মেয়াদ মে পর্যন্ত বাড়াতে সম্মত হন। কিন্তু ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি এই মেয়াদ আর বাড়াবেন না, যদি চুক্তি সংশোধন করা না হয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি সহ ইউরোপিয়ান দেশগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রতি চুক্তিতে রয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। দেশগুলোর যুক্তি, উদ্দেশ্য অনুযায়ী চুক্তি ঠিকভাবেই কাজ করছে।
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলকেই একমাত্র পারমাণবিক-শক্তিধর রাষ্ট্র মনে করা হয়। তবে দেশটি এই বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার করতে রাজি নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status