শেষের পাতা

নি র্বা চ নী হা ল চা ল, জামালপুর- ১

সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

গোলাম রাব্বানী নাদিম, বকশীগঞ্জ (জামালপুর) থেকে

১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

কোন পদ্ধতিতে হবে জাতীয় নির্বাচন। এ নিয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে আলোচনা তুঙ্গে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নেতারা অবস্থান করছেন দুই মেরুতে। কিন্তু নির্বাচনী রাজনীতি থেমে নেই। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ। দুই জোটের প্রার্থীরা নানা কর্মসূচির মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচারণা। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জনসম্মুখে উপস্থাপন করছেন নিজেকে। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আকর্ষণীয় ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, বিলবোর্ড টাঙিয়েছেন রাস্তার দু’পাশে বিদ্যুতের খুঁটিগুলো এসব ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে গেছে।
বর্তমান এমপি-মন্ত্রীদের নিয়ে হিসাব-নিকাশ চলছে ভোটারদের মধ্যে। তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে চলছে চুল-চেরা বিশ্লেষণ।
জামালপুর-১ আসনটি দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৮টি এবং বকশীগঞ্জ উপজেলার ৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা একবার করে এমপি’র দায়িত্ব পালন করেছেন। বাকি সময় আওয়ামী লীগ রাজত্ব করেছে। আওয়ামী লীগের দুর্গখ্যাত এ আসনটি এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলে জর্জরিত।
বক্‌শীগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৬ জন। দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৬৬,৩২৬ জন। মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২ হাজার ৭০২ জন। নির্বাচনে মূলত এ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র প্রার্থীর মধ্যে। এ আসনের মহাজোটে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি ছাড়া অন্যকোনো দলের অস্তিত্ব নেই। অপরদিকে ২০ দলীয় জোটে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্যকোনো দলের অস্তিত্ব নেই।
আগামী নির্বাচনে এ আসনটি প্রার্থীর উপর নির্ভর করছে কার দখলে যাবে। মনোনয়ন ভুলে উভয় দলের প্রার্থীরা হবেন ক্ষতিগ্রস্ত।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ নৌকা মার্কা নিয়ে জয়ী হন। বিএনপি’র সাবেক এমপি এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত আইনগত জটিলতায় প্রার্থী না হয়ে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে সাহিদা আক্তার রীতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হন আবুল কালাম আজাদ।
এ অসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ, বক্‌শীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইসতিয়াক হোসেন দিদার, ময়মনসিংহ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মোফাখ্‌খার খোকন, ব্যারিস্টার সামির সাত্তার।
গত ৯ বছর ধরে বক্‌শীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ দু’টি উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে তীব্র। গত ৯ বছরে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ঢুকতেই পারেনি এমপি আবুল কালাম আজাদ। অপর উপজেলা বক্‌শীগঞ্জেও তার অবস্থান ভালো নয়। সম্প্রতি দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচন ও বক্‌শীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন জটিলতা এ বিরোধ আরও তীব্র হয়েছে। অবশ্য এমপি আজাদ সমর্থিতদের কথা- এসবই তার প্রতিপক্ষের অপপ্রচার। আবুল কালাম আজাদ এমপি হওয়ার পর বদলে গেছে এই আসনের চেহারা। উন্নয়ন ছোঁয়া লেগেছে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত। তিনি ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে মাঠে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ।
এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ জানান, মানুষের কল্যাণে সবসময় কাজ করেছি। কিছু সুবিধাবাদী নেতা মাসোয়ারার ভিত্তিতে অন্য নেতাদের পিছনে পিছনে ঘুরেন। তারাই আমার বদনাম করে বেড়াচ্ছে। মনোনয়ন অনেকেই চাইতে পারেন। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকেই মনোনয়ন দেবেন- এটাই আমার বিশ্বাস।
৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বক্‌শীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূূর মোহাম্মদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। এর পর নূর মোহাম্মদ দল থেকে বহিষ্কার হন 

এ বিষয়ে নূর মোহাম্মদ জানান, প্রত্যেক মানুষের মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এবারও দলের মনোনয়ন চাইবো। আর আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলে শতভাগ আশাবাদী জয়ী হবো। অপর প্রার্থী সৈয়দ ইশতিয়াক হোসেন দিদারের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে না পারার কারণে তিনি রয়েছেন কিছুটা বেকায়দায়। আগামী নির্বাচনে তিনিও মনোনয়ন চাইবেন।
এ বিষয়ে ইশতিয়াক হোসেন দিদার জানান, বর্তমান এমপি আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। আমার বিরুদ্ধে বিএনপিপন্থি চেয়ারম্যানদের দিয়ে অনাস্থা আনিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে আমাকে মানোনয়ন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১০ম জাতীয় সংসদে আমাকে মনোনয়ন দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে ছেড়ে দিয়েছি। জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন আমাকেই দিতে হবে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়ন চাইবেন। কারণ ইউনিয়ন পরিষদে একবার চেয়ারম্যান, দেওয়ানগঞ্জ পৌরসভার মেয়র, বর্তমানে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তার যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েছেন। তাই তিনি আশাবাদী এবারে মনোনয়ন তার ভাগ্যে জুটবে।
এ বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান এমপি’র অনেকটা বয়স হয়ে গেছে, তিনি ৪ বার নির্বাচন করেছেন। আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। এ বয়সে তার নির্বাচন মানায় না। এছাড়া আওয়ামী লীগের দু’টি উপজেলাতেই দলীয় কোন্দল চরমে। এ অবস্থায় বর্তমান এমপিকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। কারণ ৯ বছরে ক্ষমতায় থেকে জনগণের প্রত্যাশা পূরণে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তরুণ নেতা মোফাখ্‌খার হোসেন খোকন নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এম. সাত্তারের ছেলে ব্যারিস্টার সামির সাত্তার জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ আসনের বিএনপি’র অবস্থা অত্যন্ত সুসংহত। এই আসনে বিএনপি’র একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক আইজিপি আবদুল কাইয়ুম, সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত এবং গত সংসদ নির্বাচনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী শাহিদা আক্তার রীতা।
এদের মধ্যে একটু এগিয়ে আবদুল কাইয়ুম। পুলিশ কমিশনারসহ পুলিশের শীর্ষস্থানীয় পদে আসীন থাকলেও দুর্নীতির কাদা তার গায়ে লাগেনি। তার সততা ও নিষ্ঠার কারণে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। খালেদা জিয়ার নির্দেশে পুরো জামালপুর জেলার সংগঠনকে সাজিয়েছেন নিজের মতো করে। জামালপুর জেলার রাজনীতিতে নিজের অবস্থান করেছেন অত্যন্ত মজবুত ও সুসংহত।
এ বিষয়ে আবদুল কাইয়ুম জানান, দলের দুঃসময়ে সবাই যখন পালিয়ে বেড়িয়েছেন তখন তিনি দলের হাল ধরেছেন। এ ছাড়া পুলিশ বিভাগে চাকরি করা সত্ত্বেও কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। পরিছন্ন রাজনীতির জন্যই কেবল তাকেই নমিনেশন দিতে হবে। এছাড়াও আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশানের প্রতি মানুষ চরমভাবে ক্ষুব্ধ। এ দুঃশাসনের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতেই আমাকে মনোনয়ন দেবেন নেত্রী।
সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশিদুজ্জামান মিল্লাত পোলাকান্দি সেতু, মেরুরচর সেতু ও সাজিমারা সেতু নির্মাণের ফলে ভোটারদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। স্থানীয় রাজনীতিতে অত্যন্ত জনপ্রিয় এ সাবেক এমপি এ আসন থেকে মনোনয়ন পেলে জয়ের নিশ্চয়তা থাকলেও বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রাপ্তিতে রয়েছে শক্ত বাধা। এ বিষয়ে রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, বিএনপি থেকে মনোনয়নের ব্যাপারে আমি ১০০ ভাগ আশাবাদী।
শাহিদা আক্তার রীতার অবস্থাও সুসংহত। বিএনপি’র ভরা দুঃসময়ে ৭০ হাজার ভোট পেয়ে এ আসনের বিএনপির মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার তিনি।
এছাড়াও প্রার্থী হিসেবে তরুণ ব্যবসায়ী এমদাদুল হক সরকারের নাম শোনা যাচ্ছে ।
এ আসনে অপর শক্তিশালী হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী এমএ সাত্তার। এক সময়ের প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবার নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে জানা গেছে। এমএ সাত্তার বক্‌শীগঞ্জ ইউনিয়নকে উপজেলায় রূপান্তর করার ফলে বক্‌শীগঞ্জ মানুষের হৃদয়ে অবস্থান করে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টির মতো তার জনসমর্থন হারাতে থাকে। বক্‌শীগঞ্জ উপজেলার মানুষের কাছে যতটা ভালোবাসা পেয়েছেন ঠিক তার বিপরীত অবস্থান দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায়। এ কারণে তিনি বারবার পিছিয়ে পড়েন। তিনি নির্বাচন করতে না পারলে তার পুত্র ব্যারিস্টার সামির সাত্তারকে জোট থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status