শেষের পাতা

মিরপুরে বস্তিতে আগুন

বেঁচে থাকার লড়াই

আল-আমিন

১৭ মার্চ ২০১৮, শনিবার, ৯:১৭ পূর্বাহ্ন

ঘুমানোর আগে তার ছিল স্বপ্ন, ছিল বেঁচে থাকার অবলম্বন। কিন্তু ঘুম ভাঙতেই সব শেষ। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নিঃস্ব, রিক্ত হয়ে পড়েন ৬০ বছর বয়সী ফেরিওয়ালা হাকিম ব্যাপারী। দু’চোখে এখন তার কেবল অন্ধকার। দিন পার করছেন অর্ধাহারে। পল্লবীর হারুনাবাদের পুড়ে যাওয়া কবির মোল্লার বস্তির মধ্যখানে টিনশেডের ঘর ছিল হাকিমের। সোমবার ভোররাতে তিনি ঘুমে ছিলেন। আগুনের লেলিহান শিখা যখন বস্তির চারপাশ গ্রাস করছে তখন তার ঘুম ভাঙে। জীবন বাঁচাতে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান তিনি। প্রাণ বাঁচলেও পুড়ে ছাই হয়েছে শেষ আশ্রয়টুকু। শুধু হাকিমের ঘরই নয়, আগুনের গ্রাস করেছে ওই বস্তিতে থাকা প্রায় ১০ হাজার মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই। ওইদিনের ঘটনার ভয়াবহতার রেশ কাটেনি এখানো বস্তিবাসীদের মধ্যে। আবার কবে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে সেই দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন নিম্নআয়ের অসহায় মানুষগুলো। এখনো অর্ধাহারে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তারা। গতকাল দুপুরে সরজমিন হারুনাবাদের বস্তিতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ঘরের কোন চিহ্নই নেই। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পরনের কাপড়টি নিয়ে। তারা ঘর থেকে বের হয়ে এসেছিলেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে যে আর্থিক 
অনুদান ও প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেয়ার কথা ছিল তা এখনো পর্যন্ত পায়নি। আগুনের ঘটনার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি উদঘাটনের জন্য ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ৩ দিন পার হলেও সেই তদন্ত প্রতিবেদন এখনো দেয়া হয়নি। সোমবার ভোরে পল্লবী থানাধীন হারুনাবাদের কবির মোল্লা বস্তিতে আগুন লাগে। মুহূর্তেই ওই আগুন বস্তির চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২১ টি ইউনিট সোয়া ৪ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে বস্তির প্রায় ২ হাজার ঘর পুড়ে যায়। বস্তিতে অধিকাংশ মানুষ ও নদীভাঙণের শিকার। গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বস্তির চারপাশে আগুনে পোড়া জিনিসগুলো গোছানো আছে। ভস্ম হয়ে যাওয়া বস্তিতে এখানো পোড়া গন্ধ। বস্তিতে অনেকেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। কেউ মাথার ওপর কাপড় টাঙিয়েছেন। বস্তির উত্তরপাশের বাসিন্দা বাসচালক মিলন শেখ জানান, আগুনে ঘরের মধ্য থেকে শুধু প্রাণ নিয়ে বের হয়ে এসেছি। এখন শরীরে কাপড় ছাড়া কিছুই নেই। তিনি জানান, আগুনে ভিটে পুড়ে যাওয়ার কারণে সহায় সম্বলহীন হয়ে গেছি। ঘরের মধ্যে জমানো ৪০ হাজার টাকা ছিল সেটিও পুড়ে গেছে। এই মুহূর্তে কেউ হঠাৎ ঋণ দিতে চায় না। ঘর পুড়ে যাওয়ার কারণে বস্তির খোলা আকাশের নিচেই থাকতে হচ্ছে। খাইরুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক জানান, আগুনে স্থানীয় লোকজনের পক্ষ থেকে দুপুরে ও রাতে খিচুড়ি দেয়া হচ্ছে। সকালে কোন খাবার দেয়া হয় না। সকালে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে। আগুনের ঘটনার পর থেকে এখানে অনেক সরকারি লোকজন এসেছিল। তারা অনেক কিছু দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু, এখন পর্যন্ত কোন কিছু পায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
বস্তির বাসিন্দা সোমা বেগম জানান, তাদের গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন এলাকায়। ৫ বছর আগে এলাকায় নদীভাঙনের শিকার হয়ে স্বামী ও দুই সন্তানকে নিয়ে তিনি এই বস্তিতে ঠাঁই নিয়েছিলেন। সোমবার ভোরে আগুনে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গ্রামের বাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে আর বস্তির বাড়িটি নিলো আগুনে। তার আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তিনি আরও জানান, স্বামীকে বিদেশ পাঠাবো বলে একটি এনজিও থেকে ৩ লাখ টাকা উঠিয়েছিলাম। ওই টাকা আগুনে পুড়ে গেছে। এখন ওই টাকা কিভাবে পরিশোধ করবো তা নিয়ে ভেবে কূল পাচ্ছি না।
আগুনের ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রধান ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন গতকাল মানবজমিনকে জানান, আমরা আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করছি। কী থেকে আগুন লেগেছে তা এখনো জানা যায়নি। তিনদিন পার হয়ে গেলেও কেন তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হচ্ছে না প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি নিখুঁতভাবে তদন্ত করার কারণে প্রতিবেদনটি দিতে দেরি হচ্ছে। পল্লবী থানার আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী পরিষদের সদস্য আকবর হোসেন মানবজমিনকে জানান, এলাকাটি স্থানীয় এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা ভাইয়ের। বস্তিতে আগুন লাগার পর থেকেই তিনি প্রতিদিন বস্তিবাসীর খোঁজখবর রাখছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status