শেষের পাতা

মা নেই বাবা বিদেশে বড্ড একা হিয়া

মারুফ কিবরিয়া

১৫ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

মা চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বাবা থাকেন বিদেশে। আড়াই বছরের শিশুকন্যা হিয়া এখন বড্ড একা। সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় নিহত কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলার একমাত্র মেয়ে হিয়া এখন আছে দাদীর তত্ত্বাবধানে। মা যখন বিমানে কাজ করতেন তখন বাসায় গৃহকর্মী রুনার কাছেই থাকতো ছোট্ট হিয়া। নাবিলার বিমান বিধ্বস্তের খবরের সঙ্গে সঙ্গে সোমবার বিকাল থেকে আকস্মিক রটতে থাকে তার মেয়ে হিয়ার হারিয়ে যাওয়ার খবরও। শুরু হয় তাকে খোঁজা। পরে উত্তরা পূর্ব থানার পুলিশের সহায়তায় হিয়ার হদিস মেলে। তাকে পল্লবী থেকে উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন উত্তরা পূর্ব থানার এসআই আরিফুজ্জামান। উদ্ধারের পর হিয়াকে দাদী বিবি হাজেরার কাছে হস্তান্তর করা হয় বলেও জানান তিনি। আরিফুজ্জামান বলেন,  ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের কেবিন ক্রু নাবিলার মেয়ে হিয়াকে উদ্ধারের পর তার দাদীর জিম্মায় দিয়েছি। থানায় নানী নীলা জামানও এসেছিলেন। তবে মেয়েটিকে দেখলাম দাদীর কোলে যাওয়ার পর আর কারো কাছে যেতে চাইছে না। তাই দাদীর দায়িত্বে আমরা দিয়েছি হিয়াকে। আসলে হিয়ার কি হয়েছিল? হিয়াকে কে নিয়ে গেছে?  এ প্রশ্নের উত্তরে হিয়ার ফুফু ফাতেমা আলম মানবজমিনকে বলেন, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স থেকে নাবিলার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হিয়াকে আমাদের বাসায় আনতে যাই। এরই মধ্যে ওর নানীর বাড়ির লোকজনও সেখানে গিয়ে হাজির হয়। কিন্তু দুই পরিবারের কেউই ওকে পেলাম না। গৃহকর্মী রুনা এসে বললো হিয়াকে তার খালা এসে নিয়ে গেছে। আসলে হিয়ার কোনো খালা নেই। যখন ছবি দেখালাম বুঝতে পারি এটা নাবিলার একসময়ের রুমমেট ছিল। তার নাম নুসরাত। সে সরকারি তিতুমীর কলেজে পড়ে। কিন্তু আমরা তাকে ফোন করে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। কিছুতেই হিয়ার হদিস মেলেনি। একপর্যায়ে ওই দিনই আমরা উত্তরা পূর্ব থানায় জিডি করি। পুলিশ আমাদের যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। তাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি হিয়াকে নুসরাত নাবিলার ফুফু নিলুফার নীতুর বাসায় নিয়ে রেখেছে। কিন্তু সে কেন এবং কী কারণে এ কাজ করেছে আমরা এখনো তা বুঝতে পারছি না। নাবিলার ফুফুর সে বাসায় গিয়ে দেখি হিয়া কান্নাকাটি করছে। কিন্তু ওই ফুফু আমাদের হাতে মেয়েটিকে দিতে চাইছে না। পরে পুলিশের সহায়তায় আমরা নিজেদের কাছে রাখতে পারছি।

হিয়ার ফুফু ফাতেমা আলম জানান, হিয়ার বাবা আনান আহমেদ দীর্ঘদিন ধরেই দুবাই থাকেন। নিহত নাবিলার সঙ্গে তার  প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয়। ইউএস-বাংলায় চাকরির সুবিধার্থে আমাদের নাখালপাড়ার বাসায় না থেকে উত্তরায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতেন। আলাদা থাকলেও নাবিলা শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। মাঝে মাঝে হিয়াকে দাদীর কাছে নিয়ে আসতেন নাখালপাড়ার বাসায়। ফাতেমা আলম বলেন, আমার ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের পর থেকে খুব সুন্দরভাবেই সংসার করতেন নাবিলা। খুবই ভালো একটি মেয়ে ছিল। কিন্তু এখন কষ্ট হচ্ছে এই বাচ্চা মেয়েটা মা ছাড়া হয়ে গেল। নাবিলার মরদেহ আনতে বর্তমানে নেপাল কে আছেন জানতে চাইলে ফাতেমা আলম বলেন, সেখানে আমার বড় ভাই বেলাল হোসেন গিয়েছেন। নাবিলার স্বামীও দুবাই থেকে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। গত সোমবার ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়। এতে যাত্রী, পাইলট, কেবিন ক্রুসহ ৫১ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status