অনলাইন

বিশ্ব সম্প্রদায়কে জাতিসংঘের বিশেষ উপদেষ্টা

রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনে উদ্যোগ জোরালো করুন

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও প্রভাবশালী দেশগুলোকে উদ্যোগ জোরদার আহ্বান জানিয়েছেন গণহত্যা রোধ বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা আদামা দিয়েং। মঙ্গলবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন এ আহ্বান জানান। বর্বর নির্যাতন ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সঙ্গে ফেরাতে মিয়ানমার এখনও সত্যিকারের প্রচেষ্টা দেখায়নি মন্তব্য করে জাতিসংঘ দূত এ অবস্থায় সংকট সমাধানে চীন, ভারত ও অন্যান্য প্রভাবশালী দেশকে ভূমিকা রাখা এবং নৈতিক নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানান। এ সময় আদামা দিয়েং বাংলাদেশের নৈতিক নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি উদ্বাস্তু ও স্থানীয়দের সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য আরো অধিক কিছু করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতাও চান। কোন কারণে উদ্বাস্তু ও স্থানীয়দের মাঝে যাতে ভুল বোঝাবুঝি ও উত্তেজনার সৃষ্টি না হয় সে জন্য দুই সম্প্রদায়ের মাঝে সংলাপ আয়োজন করতে বাংলাদেশ সরকারকে পরামর্শ দেন বিশ্ব সংস্থার ওই প্রতিনিধি। উদ্বাস্তুদের নিজ ইচ্ছার বাইরে প্রত্যাবাসন করা হবে না বলে বাংলাদেশের যে অঙ্গীকার রয়েছে তা স্মরণ করে তিনি বলেন, এতে আমি উৎসাহ পেয়েছি। ৪ দিনের বাংলাদেশ সফর বিশেস করে সফরের উল্লেখ্যযোগ্য সময় রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কক্সবাজার জেলায় কাটানোর প্রসঙ্গ তুলে জাতিসংঘ দূত বলেন, সেখানে গিয়ে আমি যা শুনেছি এবং দেখেছি তাতে এটা পরিষ্কার যে অধিকাংশ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চান। কিন্তু যখন শুধুমাত্র নিরাপত্তা, সম্মান ও মৌলিক অধিকার পাওয়া যাবে তখনই তারা সেটা করতে চান। তিনি আরো বলেন, এখন পর্যন্ত এসব ব্যাপারে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ কোনো সত্যিকারের প্রচেষ্টা দেখায়নি। উদ্বাস্তুরা এখনো সীমান্ত অতিক্রম করছেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিষয়ে আমরা পুনরায় ব্যর্থ হতে পারি না। তারা যা সহ্য করেছে তা কোনো মানুষের করার কথা ছিল না। জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সর্বোত্তম সমাধান রয়েছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা সেটা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপদে ঘরে ফেরানোর পরিবেশ তৈরি এবং অন্য নাগরিকদের মতো একই অধিকার দেয়ার মাধ্যমে করতে পারে। সেই সঙ্গে আরও নৃশংসতামূলক অপরাধের ঝুঁকি থেকে এই জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারে ফিরে গেলেরোহিঙ্গারা অধিকতর অপরাধের ঝুঁকিতে পারে বলে আশংকা জানান আদামা দিয়েং। গত বছরের আগস্ট থেকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে বর্বর অভিযান পরিচালনা করেছে তা ‘অনুমিত ও প্রতিরোধ যোগ্য’ ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, নৃশংসতামূলক অপরাধের ঝুঁকি নিয়ে আমি কয়েকবার সতর্ক করে দিলেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বালিতে মাথা গুঁজে ছিল। যার ফলে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে জীবন, সম্মান ও ঘর হারিয়ে মূল্য দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা পরিষ্কার: মিয়ানমারে আন্তর্জাতিক অপরাধ হয়েছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের শুধুমাত্র তারা যা, তা হওয়ার কারণে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, জীবন্ত পুড়িয়ে মারা ও অপদস্থ করা হয়েছে। আমি যেসব তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা যায়, অপরাধীদের উদ্দেশ্য ছিল উত্তর রাখাইন থেকে তাদের অস্তিত্ব মুছে দেয়া, সম্ভবত এমনকি রোহিঙ্গাদের ধ্বংস করে দেয়া। যা প্রমাণ হলে হবে গণহত্যার অপরাধ।’ বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে গত ৭ মার্চ সরকারি সফরে বাংলাদেশ আসেন বিশেষ উপদেষ্টা আদামা। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি দেখা ছিল তার সফরের উদ্দেশ্য। জাতিসংঘ মহাসচিবের গণহত্যা রোধ বিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা মূলত গণহত্যার ধরন ও কারণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির কাজ করেন। সেই সাথে তিনি গণহত্যার ঝুঁকি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে সতর্ক করে দেন এবং এবিষয়ে সহযোগিতা অর্জনের জন্য সমর্থন আদায়ে কাজ করেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status