দেশ বিদেশ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এনজিওর পাহাড় কাটা ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য

সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া থেকে

১৪ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৭:৫১ পূর্বাহ্ন

উখিয়ার বনভূমিতে প্রায় ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার আশ্রয় নিশ্চিত হওয়ার পরও পাহাড় কাটা থামেনি। রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন ছাড়াও কতিপয় এনজিও সংস্থা মানবিক সেবার নাম ভাঙিয়ে তাদের আখের গোছানোর জন্য বনভূমির জায়গায় বাসা-বাড়ি, অফিস, গুদাম, গাড়ি পার্কিংসহ নানা প্রকার স্থাপনা তৈরি করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো প্রকার অনুমতি ব্যতিরেকে নির্বিচারে পাহাড় কেটে তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলের জন্য তৈরি করা হচ্ছে রাস্তা। পরিবেশ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ যত্রতত্র পাহাড় কর্তনের ফলে জীববৈচিত্র্য, বন্য পশু-প্রাণি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি বন সম্পদ ধ্বংসের কারণে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সরজমিন উখিয়ার লম্বাশিয়া, মধুরছড়া, ময়নারঘোনা, তাজনিমারখোলা ক্যাম্প ঘুরে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারি ও বেসরকারিভাবে যাবতীয় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও তাদের জ্বালানি সরবরাহ দেওয়া হয়নি। তাই তাদের বাধ্য হয়ে বনের গাছ কেটে জ্বালানির চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। পাহাড় কাটার ব্যাপারে রোহিঙ্গারা জানান, এখানে আশ্রয় নেওয়ার মতো রোহিঙ্গা নেই। তবুও এনজিওরা তাদের প্রয়োজনীয় তাগিদের কথা বলে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে। প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের অভিযোগ পাহাড় কাটার ব্যাপারে রোহিঙ্গাদের দায় করলেও মূলত এনজিওরাই তাদের ইচ্ছামতো পাহাড় কেটে স্থাপনা ও রাস্তাঘাট তৈরি করছে। ঘটনাস্থলে গিয়ে এনজিও সংস্থার কাউকে পাওয়া যায়নি। সেখানে উপস্থিত মধুরছড়া রোহিঙ্গা মাঝি হামিদ হোসেন জানান, কারিতাসসহ বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা ইদানীং প্রত্যন্ত পাহাড়ি জনপদে পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ করে জানান, উখিয়ার ৮টি ক্যাম্পে আশ্রিত ৭ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বনভূমির শতাধিক পাহাড় কেটে বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে। যে কারণে শত শত একর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। বন্য পশুপ্রাণি বাস্তুচ্যুত হয়ে মাঝে মধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হামলা করছে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে।
নির্বিচারে পাহাড় কর্তনের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজার দক্ষিণ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আলী কবির জানান, রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য ৫ হাজার একর বনভূমি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই আরো ৫০০ একর বনভূমি চাহিদা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য বনভূমির জায়গা দেওয়া হলেও পাহাড় কাটার কোনো প্রকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু কিছু এনজিও সংস্থা কারো আদেশ নির্দেশের তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে পাহাড় কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করায় বনসম্পদ, জীববৈচিত্র্য ও বন্য পশু-প্রাণি বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে। তিনি পাহাড় কাটার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট অবহিত করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান।
কক্সাবাজর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল আশরাফ জানান, মানবিক কারণে সরকারি বনাঞ্চলে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া হলেও পাহাড় কাটার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, পাহাড়ের ওপর বসবাস করার মতো পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও এনজিও সংস্থাগুলো তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করতে মানবিক সেবার নামে পাহাড় কেটে বিরান ভূমিতে পরিণত করেছে। তিনি বলেন, এলাকার পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও বন্য পশু-প্রাণি সংরক্ষণে নির্ধারিত অভয়ারণ্যের এসব পাহাড় কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকায় সরজমিন তদন্ত করে দেখা হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানান, মানবিক কারণে সরকার রোহিঙ্গাদের বনভূমিতে আশ্রয় দিয়েছে থাকার জন্য। কিন্তু এনজিও সংস্থাগুলো কোনো প্রকার অনুমতি ব্যতিরেকে তাদের সুবিধার্থে পাহাড় কর্তন করে থাকলে সংশ্লিষ্ট এনজিওদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে রোহিঙ্গারা যাতে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে সেদিকেও সরকারের সুনজর রয়েছে।
কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, সরকার মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের সুবিধার্থে বনভূমির ক্ষতি হলেও কিছু কিছু পাহাড়ের শ্রেণি পরিবর্তন করে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, যেসব রোহিঙ্গা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে তাদেরও নিরাপদ জায়গা সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। সেই হিসেবে বৃহত্তর স্বার্থ রোহিঙ্গা সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে বনভূমির কিছুটা ক্ষতি হলেও রোহিঙ্গাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে সরকার যেকোনো কিছু ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে।



   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status