বাংলারজমিন
সুপারি বাগান করে লাখপতি
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
১৩ মার্চ ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন
সুপারি বাগান করে পঞ্চগড় জেলার অনেকে এখন লাখপতি। দিন দিন চাহিদা বাড়ার কারণে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন নতুন সুপারি বাগান। বাঙালি ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে পান-সুপারি। বিয়েসহ খাবারের অনুষ্ঠান পান ও সুপারি ছাড়া পরিপূর্ণতা পায় না। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে প্রাথমিক অতিথি আপ্যায়নের প্রধান অনুষঙ্গ পান-সুপারি। বাড়িতে মেহমান এলে পান, সুপারি, চুন, তামাক, জর্দা সাজিয়ে দেয়া হয় মেহমানের সামনে। পান খেতে খেতে চলে খোশগল্প। পান রসিকদের জন্য পঞ্চগড়ের সুপারি ও রাজশাহীর পানের কদর একটু বেশি। এ জেলার মানুষের আদি ঐতিহ্য সুপারির বাগান। প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি সুপারি গাছ রয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তোলা বাগানে অনেকে সুপারির গাছে পান চাষ করেন। এতে তাদের বাড়তি আয়ও হয়। জমির ধান দিয়ে সারা বছরের খাবার আর সুপারির টাকা দিয়ে চলে সারা বছরের সাংসারিক সব খরচ। সাধারণত মার্চ এপ্রিল মাসে পঞ্চগড় জেলার সুপারি বাজারে উঠে। এই সময়টাতে দেশের অন্য কোথাও সুপারি হয় না। তাই সুপারি ব্যবসায়ীদের নজর এখন পঞ্চগড়ের দিকে। ইতোমধ্যে বাজারে উঠতে শুরু করেছে স্থানীয় সুপারি। দুই সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে সুপারি বাজারে উঠলে ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়ে যাবে। জানা গেছে, এখানকার মাটি অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং মাটি বেলে দোঁআশ হওয়ায় বংশপরম্পরায় এখানে সুপারি চাষ করে আসছে এখানকার মানুষরা। বাগান আকারে ছাড়াও অনেকে বাড়ির পাশের উঁচু জমিতে সুপারির বাগান করে। সুপারি বাগানে আলাদা করে কোনো পরিচর্যাও করতে হয় না। মাঝখানে মড়ক লেগে শত শত একরের সুপারির বাগান ধ্বংস হয়ে গেলেও পঞ্চগড় জেলার সর্বত্র এখনও সুপারির বাগান চোখে পড়ে। বাগান না হলেও প্রতিটি বাড়িতে কমবেশি সুপারির গাছ আছে। লাভজনক হওয়ায় অনেকে নতুন করে সুপারির বাগান করছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার কামাত কাজলদীঘি, চাকলাহাট, হাড়িভাসা ও সদর ইউনিয়ন সুপারির জন্য বিখ্যাত। এই এলাকায় রয়েছে অসংখ্য সুপারির বাগান। জেলার অন্যান্য উপজেলায়ও সুপারির বাগান রয়েছে। উত্তরের জেলাগুলোর মধ্যে বড় সুপারির মোকাম হয় সদর উপজেলার টুনিরহাট বাজারে। সুপারির মৌসুমে প্রতি শুক্র ও সোমবার হাটবারে স্কুল মাঠে উঠে প্রচুর সুপারি। বাইরে থেকে আসা ব্যবসায়ীরা এখানকার সুপারি কিনে নিয়ে নিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পাকা সুপারি কিনে মাটিতে পুঁতে রাখে মজানোর জন্য। মৌসুম শেষে সেগুলো তুলে মজা সুপারি কয়েক মাসের চাহিদা মেটায়। রংপুরের শঠিবাড়ির সুপারি (স্থানীয় ভাষায় বাংলা গুয়া) শেষ হওয়ার পর পঞ্চগড়ের সুপারি বাজারে আসে। তাই দামও থাকে বেশ চড়া। আগে বাগানের প্রতিটি সুপারির গাছে ছিল পান। লতাজাতীয় এই পান সুপারি গাছের গোড়া থেকে শুরু করে কাণ্ড পর্যন্ত চলে যায়। উঁচু দাড় বাঁশে চড়ে এই পান পেরে তা সাইজ করে বাজারে নেয়া হতো। বরজের পানের চেয়ে এই গাছ পান ছিল অধিক জনপ্রিয়। দামও ছিল বেশ চড়া। তবে এখন আর আগের মতো সুপারি গাছে পানের দেখা মেলে না। এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সাবাড় হয়েছে পান গাছ। তবে এখনো জেলার কিছু কিছু এলাকায় সুপারি গাছে পান দেখা যায়। বাজারে বরজ পানের চেয়ে এই পানের চাহিদা ও দাম দু’টোই বেশি।
পঞ্চগড় সদরের টুনিরহাট এলাকার ভান্ডারু গ্রামের কৃষক হামিদার রহমান। বাবার লাগানো ১০ একর জমির সুপারির বাগানের মালিক হয়েছিলেন তিনি। গত ১০ বছর আগে মড়ক লেগে বাগানের সব গাছ মরে যায়। আবার নতুন করে বাগানে চারা লাগিয়েছেন। গত কয়েক বছর থেকে ফলন পাচ্ছেন। হামিদার জানান, গত মৌসূমে বাগান থেকে প্রায় ৩০০ কাহন (৮০টা সুপারিতে এক পণ আর ১৬ পণে এক কাহন) সুপারি পেয়েছিলেন। পাকা সুপারি মাটির নিচে পুঁতে মজা করে প্রতি কাহন সুপারি বিক্রয় করেছেন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়। এক মৌসুমে শুধু তার সুপারি বিক্রি হয়েছে ১৫ লাখ টাকার উপরে। গাছের বয়স বাড়ায় এবার আশা করছেন ৪০০ কাহন সুপারি পাবেন। সেই সঙ্গে বাগানের অর্ধেক গাছের গাছে পান রয়েছে। কুয়াশার কারণে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার পানের দাম অনেক বেশি। এবার তিনি দুই লাখ টাকার গাছের পান বিক্রি করেছেন। শুধু তার নয়, এই এলাকার বেশিরভাগ কৃষকের প্রধান আয়ের উৎস সুপারি বাগান। এ এলাকায় বর্ষার পানি জমে থাকে না এমন সব জমিতেই রয়েছে সুপারির বাগান। অন্যান্য আবাদের চেয়ে সুপারি চাষে খরচ একেবারে নেই বললে চলে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, পঞ্চগড়ের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে সুপারি। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে যত্রতত্র সুপারি গাছ হয়। অপেক্ষাকৃত উঁচু ও অন্য আবাদ হয় না এমন জমিতে সুপারি বাগান করে এখানকার মানুষ। লাভজনক হওয়ায় এখনো নতুন নতুন জমিতে সুপারির বাগান গড়ে উঠছে।
পঞ্চগড় সদরের টুনিরহাট এলাকার ভান্ডারু গ্রামের কৃষক হামিদার রহমান। বাবার লাগানো ১০ একর জমির সুপারির বাগানের মালিক হয়েছিলেন তিনি। গত ১০ বছর আগে মড়ক লেগে বাগানের সব গাছ মরে যায়। আবার নতুন করে বাগানে চারা লাগিয়েছেন। গত কয়েক বছর থেকে ফলন পাচ্ছেন। হামিদার জানান, গত মৌসূমে বাগান থেকে প্রায় ৩০০ কাহন (৮০টা সুপারিতে এক পণ আর ১৬ পণে এক কাহন) সুপারি পেয়েছিলেন। পাকা সুপারি মাটির নিচে পুঁতে মজা করে প্রতি কাহন সুপারি বিক্রয় করেছেন ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়। এক মৌসুমে শুধু তার সুপারি বিক্রি হয়েছে ১৫ লাখ টাকার উপরে। গাছের বয়স বাড়ায় এবার আশা করছেন ৪০০ কাহন সুপারি পাবেন। সেই সঙ্গে বাগানের অর্ধেক গাছের গাছে পান রয়েছে। কুয়াশার কারণে পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার পানের দাম অনেক বেশি। এবার তিনি দুই লাখ টাকার গাছের পান বিক্রি করেছেন। শুধু তার নয়, এই এলাকার বেশিরভাগ কৃষকের প্রধান আয়ের উৎস সুপারি বাগান। এ এলাকায় বর্ষার পানি জমে থাকে না এমন সব জমিতেই রয়েছে সুপারির বাগান। অন্যান্য আবাদের চেয়ে সুপারি চাষে খরচ একেবারে নেই বললে চলে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, পঞ্চগড়ের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে সুপারি। এ জেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এখানে যত্রতত্র সুপারি গাছ হয়। অপেক্ষাকৃত উঁচু ও অন্য আবাদ হয় না এমন জমিতে সুপারি বাগান করে এখানকার মানুষ। লাভজনক হওয়ায় এখনো নতুন নতুন জমিতে সুপারির বাগান গড়ে উঠছে।