দেশ বিদেশ

জবি’র ভর্তি জালিয়াতিতে ছাত্রলীগ নেতা জড়িত আটক ২

জবি প্রতিনিধি

১২ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ৯:২৯ পূর্বাহ্ন

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্র্ষে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতিতে ছাত্রলীগ নেতার সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অফিসে প্রক্সি দিয়ে ভর্তি হওয়ার অভিযোগে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হলে তারা ভর্তি জালিয়াতিতে জবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিব বিন বারির সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন।
আটককৃত দুই শিক্ষার্থী হলেন- সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আরিফ আলমাস আকাশ ও সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান।
গত ৪ঠা মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার দপ্তরে ভূমি আইন ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী এলিন শেখের ভর্তির সময় জমা দেয়া ছবির সঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রের ছবির মিল না পাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে সে প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির কথা স্বীকার করে। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশে দেয় জবি কর্তৃপক্ষ। এরপর আদালতে নেয়া হলে তাকে ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ৬ই মার্চ একই প্রক্রিয়ায় আরো তিন জন শিক্ষার্থী জালিয়াতির ঘটনা স্বীকার করে। তাদেরকেও মামলা দিয়ে থানায় দেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে রোববার রেজিস্ট্রার দপ্তর আরো শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের সময় আরিফ আলমাস আকাশ নামে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের আরো এক শিক্ষার্থীর ছবির গরমিল পায়। এরপর আকাশকে প্রক্টর অফিসে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে সমাজকর্ম বিভাগের তৃতীয় বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমানের মাধ্যমে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানান। জানা যায়, আকাশ ভর্তি হওয়ার পর বিভাগ ও ডিন অফিস তার তথ্য যাচাইবাছাই করে আইটি দপ্তরের মাধ্যমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় আইডি কার্ড দেন। ইতিপূর্বে সে নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি পরীক্ষায়ও অংশগ্রহণ করে আসছেন।
আটককৃত আকাশ জানায়, সে দিনাজপুর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়ার সময় ওই কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে জবিতে ভর্তি হন। এরপর এইচএসসি পরীক্ষা শেষে নোমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। নোমানও তাকে ভর্তির প্রলোভন দেখায়। ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে সব ব্যবস্থার আশ্বাস দেয় নোমান। পরবর্তীতে ডি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সির মাধ্যমে ৭ম মেধাস্থান লাভ করে। রেজাল্টের ২ দিন পর কৃষকের ছেলে আকাশ জমি বিক্রি করে ৩ লাখ টাকা যোগাড় করে দেয় নোমানকে। এই টাকা নোমান তার সিন্ডিকেটের বড়ভাই জবি শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিব বিন বারীর কাছে পৌঁছে দেন।
সূত্র জানায়, আকিব বিন বারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এর আগে ২০১৫ সালের ৩১শে অক্টোবর ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতির অভিযোগে ১৭ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে আকিব বিন বারিও ছিলেন। তিনি জালিয়াতি চক্রের একজন সক্রিয় সদস্য এবং দীর্ঘদিন ধরে এসব কাজ করে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
জবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে দুই জনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে। এদের সঙ্গে আরো দুই জনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, জবি ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে দুইজনের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা হয়েছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্তদের আটক করা হবে।
এ বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আমরা কেন্দ্রের কাছে তার বিষয়ে জানিয়েছি। কোনো অপরাধীকে ছাড় দেবে না ছাত্রলীগ। তার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ব্যবস্থা নেবে।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেন, ছাত্রলীগে অপরাধীদের কোনো জায়গা নেই। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশের প্রেক্ষিতে আকিব বিন বারিকে বহিষ্কার করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status