এক্সক্লুসিভ

হাতিরঝিলে মধ্যরাতে প্রেম

মারুফ কিবরিয়া

১২ মার্চ ২০১৮, সোমবার, ৮:৫২ পূর্বাহ্ন

মধ্যরাত। ঘড়ির কাঁটায় তখন ১টা ৩৫ মিনিট। হাতিরঝিলেও সুনসান নীরবতা। দিনের ব্যস্ততা শেষে কাজপাগল মানুষগুলো নিজ ঠিকানায় আশ্রয় নিয়েছে। কেউ কেউ গভীর ঘুমে মগ্ন। কিন্তু তখনও কেউ কেউ একটু সুখ খুঁজে পেতে বেরিয়ে পড়ে রাজপথে। মনের খোরাক জোগায়। কেউবা প্রেমিকের হাত ধরে রাতের আকাশ দেখে। এমনই একাধিক মধ্যরাতের প্রেমিকযুগল একান্তে সময় কাটাতে এসেছেন হাতিরঝিলে। তাদেরই একজন সাদা এপ্রোন পরিহিত এক তরুণী। সঙ্গে তার তরুণ প্রেমিক। দুজনই একই মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। সারাদিনের ব্যস্ততা ও লেখাপড়ার কারণে সময় হয় না একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানোর। তাই রাতকেই বেছে নেন একে অন্যের জন্য। এ সময়ে ভাববিনিময় করেন। মনের জমানো কথা মুখের ভাষায় প্রকাশ করেন। আধ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তারা ভাব বিনিময়ের পর ফের একসঙ্গে ফিরে যান গন্তব্যে। বলেন, ব্যস্ত রাজধানীতে কোথায় যাব বলুন? এ ছাড়া মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর জায়গা কয়টা আছে ঢাকায়?
সত্যিইতো মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়ানোর হাতেগোনা ক’টি জায়গার মধ্যে হাতিরঝিল অন্যতম। যেমন আসে পরিবারের সবাই একটু নিশ্বাস নিতে, তেমনি এখানে আসে প্রেমিক প্রেমিকারাও। তবে বিকালের হাতিরঝিল যেমন হয়ে উঠে প্রাণবন্ত, কপোত-কপোতীদের পদচারণায় মুখরিত। হয়ে উঠে প্রেম-বিরহ আর মিলন এমনকি হাসি আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু। আর তাই নগরবাসীর অনেকে এখন হাতিরঝিলকে ‘ডেটিং স্পট’ বলে আখ্যা দেন। দিনের শুরু থেকে সন্ধ্যা এমনকি রাত ১১টা পর্যন্ত যারা চলাচল করেন তাদের চোখেই পড়ে কপোত-কপোতীদের মিলনমেলা। কিন্তু গভীর রাতেও যে কোনো কোনো প্রেমিকযুগল হাতিরঝিলকে বেছে নেন প্রেমকুঞ্জ হিসাবে এটা অনেকেরই অজানা।
মধ্যরাতে আড্ডায় মেতে উঠা সেই তরুণ-তরুণীর নাম সানি ও অধরা। দুজই রাজধানীর একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী। তারা জানান, সারাদিন কাজ আর পড়াশোনার ব্যস্ততায় একান্তে কেউ কাউকে সময় দিতে পারেন না। তাই প্রায়ই রাতে বের হয়ে পড়েন ভালোবাসার টানে। আড্ডা হাসিতে মেতে থাকেন পরস্পর। সানি-অধরার কথা, রাতের শহরটা  নীরব থাকে। বিশেষত হাতিরঝিলেই তারা বেশি স্বস্তিবোধ করেন। সানি বলেন, আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি তিন বছর ধরে। পরিবার থেকেও আমাদের সম্পর্ক মেনে নিয়েছে। পড়া শেষ হলেই বিয়ে। বিয়ের পর সংসার জীবনে গিয়ে জানি অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়বো। নিজেদের জন্য আলাদা সময় বের করলেও তা অনেকটা কঠিন হয়ে যাবে। তাই রোমান্সের সঠিক সময় এটাকেই ধরে নিয়েছি। মাঝে মাঝে যখন সময় পাই দুজন বেরিয়ে পড়ি। নিজেদের জমানো গল্পগুলো শেয়ার করি। অধরা বলেন, বাসা থেকে বের হতে কিছুটা বেগ পেতে হয়। তবুও যখন প্রেমের বিষয়টা মেনে নিয়েছে তাই সামান্য বেগ পেলেও বেরিয়ে আসি। জমে থাকা কথাগুলো একে অপরের সঙ্গে শেয়ার হয়। বেশ ভালো সময়ই কাটে।
হাতিরঝিলের কুনিপাড়া সংলগ্ন ব্রিজে গিয়ে দেখা যায় মনির ও সূচনা নামের আরেক যুগল। তারা এসেছেন উত্তরা থেকে। পেশায় দুজনই চাকরিজীবী। সন্ধ্যায়ও কারো সঙ্গে কেউ দেখা করতে পারেন না। তাই রাতেই হাতিরঝিলে আসেন নিজের গাড়িতে করে। মনির বলেন, আমরা শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছি। বিশেষ করে সময় মেলে না ব্যস্ততার কারণে। রাতে ফ্রি থাকি। ওই সময়টায় ভালোবাসার মানুষটিকে সময় দিই। তাছাড়া হাতিরঝিলের এই পরিবেশটা রাতেই উপভোগ্য। সূচনা বলেন, এটা সত্যি যে প্রেম মানে না বাধা। আর এই তত্ত্বে বিশ্বাসী হয়ে মনিরের সঙ্গে সম্পর্ক তিন বছর ধরে টিকিয়ে রেখেছি। রাতে বের হওয়া খানিকটা সমস্যা হলেও ওর ডাকে আমি চলে আসি। দারুণ কিছু সময় ওর সঙ্গে কাটাতে পারি। তাছাড়া হাতিরঝিলের এই জায়গাটি রাতের জন্যই বেস্ট বলে আমার মনে হয়। তবে রাতের ঢাকা তাদের জন্য কতটা নিরাপদ? দুই প্রেমিক যুগলের কাছে করা প্রশ্নের উত্তরে তারা জানান, হাতিরঝিলে দিনে যেমন কোনো সমস্যা নেই রাতটাও নিরাপদ। হাতিরঝিলের নিরাপত্তাকর্মীদের অবস্থানের পাশাপাশি অত্র অঞ্চলের পুলিশ সদস্যরাও কিছু সময় পরপরই টহল দেয়। সফিক নামের হাতিরঝিলের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, আমাদের একাধিক নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্বে থাকেন। এখানে রাত ১২টার পরও মানুষের আনাগোনা থাকে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা জমে। কোনো ঝামেলা হয় না। আমাদের সঙ্গে আশপাশের থানা থেকে পুলিশ সদস্যরাও টহল দেন। তাই নিরাপত্তার বিষয়টি জোরদারই বলা যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status