বাংলারজমিন

সালিশে অপমানের জেরে আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর থেকে

১১ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ৯:০৪ পূর্বাহ্ন

রংপুরে স্ত্রীর পরকীয়ার সালিশ বৈঠকে স্থানীয় প্রভাবশালীর সিদ্ধান্তে রাগে, ক্ষোভে-অভিমানে বিষপান করে হতভাগ্য স্বামী শাকিরুল ইসলাম আত্মহত্যার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে নিহতের পরিবার প্রতিবাদ করায় অভিযুক্তরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের চাচা সাত জনকে আসামি করে বদরগঞ্জ থানায় মামলা করেছে। মামলার আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। পুলিশ, এলাকাবাসী, পারিবারিক ও মামলা সূত্রে জানা যায়, বদরগঞ্জ উপজেলার কুতুবপুরের সোনারায় গ্রামের দিনমজুর শাকিরুল ইসলামের স্ত্রী আমেনা বেগমের সঙ্গে প্রতিবেশী দুই সন্তানের জনক খাইরুল ইসলামের অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার শাকিরুলের বাড়িতে সালিশ বৈঠক হয়। খাইরুলের পক্ষ নিয়ে ওই ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোক্তারুল মণ্ডল, মাতব্বর জাহাঙ্গীর আলম সোনা, আনিছুল ইসলাম চৌকিদার, শাহাবুল ইসলাম, কাইয়ুম ও রুবেলসহ প্রভাবশালীরা প্রথমে জরিমানা দিয়ে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করেন। কিন্তু শাকিরুল জরিমানা না নিয়ে খাইরুলের গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরানোর শাস্তি দাবি করেন। কিন্তু মাতব্বরেরা শাকিরুলের প্রস্তাব না মেনে শুধুমাত্র মাফ চাইয়ে ঘটনা সমাধান করেন। এ ধরনের বিচার মানতে না পেরে শাকিরুল দুঃখে, ক্ষোভে লজ্জায় কীটনাশক পান করেন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মৃত্যু হয়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে শাকিরুলের ভাবি মমেজা বেগম ও বোন মঞ্জিলাসহ পরিবারের লোকজন উত্তেজিত হলে সালিশকারীরা তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। মঞ্জিলা জানান, প্রতিবাদ করার কারণে খাইরুলের স্ত্রী মৌসুমী, ভাবি নাছরিন, ভাই মামুন তাদের উপর চড়াও হয়। তিনি আরো বলেন, শাকিরুলের উপর নির্ভর করছিল তার অসুস্থ মাসহ পরিবার। সে মারা যাওয়ায় এখন পরিবারকে কে দেখবে। শাকিরুলের স্ত্রী এক সন্তানের জননী আমেনা বলেন, খাইরুল আমাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্তসহ কুপ্রস্তাব দিতো। তারপর সে আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছে। এ ব্যাপারে আমার স্বামীকে জানালে সে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার দাবি করলে সালিশ বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠকে বিচার না পেয়ে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছে। আমি খাইরুলের ফাঁসি চাই। এ ব্যাপারে ইউপি সদস্য মোক্তারুল মণ্ডল বলেন, বৈঠকে নারী ধর্ষিত হওয়ার কথা জানাননি। আমরা শুনেছি পরকীয়া ও উত্ত্যক্তের কথা। আর এ কারণে খাইরুলকে তওবা করিয়ে ক্ষমা চাইয়ে দিয়েছি। এ ব্যাপারে বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান প্রধান বলেন, ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছি। নিহতের চাচা দেলোয়ার হোসেন সাত জনকে আসামি করে মামলা করেছে। তিনি দুঃখের সঙ্গে বলেন, নারী ঘটিত বিচার করার এখতিয়ার গ্রাম্য মাতব্বরদের নেই। বিষয়টি তদন্ত করে সালিশকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status