এক্সক্লুসিভ

বর্ষা আতঙ্কে রোহিঙ্গারা

মানবজমিন ডেস্ক

১১ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

সামনেই বর্ষা মৌসুম। আতঙ্কে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা। সেখানে তারা যেসব আবাসনে ঠাঁই পেয়েছেন, তা নির্মিত হয়েছে পাহাড়ি ঢালুতে। বর্ষা মৌসুমে এসব পাহাড়ে ধস দেখা দিতে পারে। পলিথিন বা তারপলিন দিয়ে তৈরি হয়েছে তাদের ঘর। যাতে পাহাড় ধসে না পড়ে, সেজন্য ফেলা হয়েছে বালুভর্তি ব্যাগ। বর্ষায় যেন তা টিকে থাকে, সুরক্ষিত রাখে, রোহিঙ্গারা এখন এই প্রার্থনা করছেন। ১৮ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহাম্মদ হারেস। তিনি বলেন, বালুভর্তি বস্তা আমাদেরকে নিরাপদ করেছে। কিন্তু যদি ভারি বৃষ্টি হয় তখন এসব বস্তা আমাদের হয়তো আর নিরাপত্তা দিতে পারবে না। হারেসের ঘর যেখানে, যে মাটির ওপর তৈরি করা হয়েছে তাতে এরই মধ্যে ফাটল ধরেছে। এসব খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। উল্লেখ্য, ২৫শে আগস্ট রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে সহিংসতা শুরুর পর প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে। এর বেশির ভাগই মুসলিম। এসব উদ্বাস্তুর বেশির ভাগই এখন বসবাস করছেন বাঁশ ও প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি ছোট্ট সব ঘরে। তাদের এই আবাসনের স্থানটিতে একদিন ছিল পাহাড়ি জঙ্গল। এখানে উল্লেখ্য, বাংলাদেশে মাঝে মাঝেই হানা দেয় ঘূর্ণিঝড়। বাংলাদেশের যেখানে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড রয়েছে তারই একাংশে গড়ে উঠেছে গায়ে গায়ে লাগা রোহিঙ্গাদের শিবির। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর কম্পিউটার মডেলিংয়ের সাহায্যে দেখিয়েছে যে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভূমিধস ও বন্যার হুমকিতে পড়বেন কমপক্ষে এক লাখ শরণার্থী। বাংলাদেশের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল থেকে শুরু হয় বৃষ্টি। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ের দিকে। এর ফলে কুতুপালং-বালুখালি উদ্বাস্তু শিবিরের এক-তৃতীয়াংশ বন্যাকবলিত হতে পারে। এই শিবিরটি সবচেয়ে বড়। এতে গৃহহীন হয়ে পড়তে পারেন কমপক্ষে ৮৫ হাজার শরণার্থী। এ ছাড়া ভূমিধসের ঝুঁকির মধ্যে পাহাড়ি ঢালে বসবাস করবেন আরো ২৩ হাজার শরণার্থী। ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র ক্যারোলাইন গ্লুক বলেছেন, কুতুপালং-বালুখালি শিবিরের ১২৩ একর জায়গা বুলডোজার দিয়ে সমান করে দেয়ার কাজ করছে ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সংগঠন আইওএম এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি। এর মাধ্যমে ওই এলাকাকে নিরাপদ করার চেষ্টা চলছে। ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলার জন্য সরঞ্জাম দিচ্ছে আইওএম। এক্ষেত্রে কর্মীর জোগানও দিচ্ছে তারা। তারাই সড়ক ও পাহাড়ি ঢালগুলোকে নিরাপদ, স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন। জরুরি ভিত্তিতে ডায়রিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র বসানোর কাজ এগিয়ে চলছে। ফার্স্ট এইড বা প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ওদিকে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সচিব শাহ কামাল বলেছেন, উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এক লাখ ৩৩ হাজার মানুষকে অন্যত্র পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করছে সরকার। এ ছাড়া রোহিঙ্গাদের ভাষায় একটি রেডিও স্টেশন চালু করা হচ্ছে, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে সতর্কবার্তা পৌঁছানো যায়। এর আগে বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা রয়টার্সকে বলেছিলেন, তারা বঙ্গোপসাগরের ভিতরে জনমানবশূন্য একটি দ্বীপকে রোহিঙ্গাদের আবাসনের পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। সেখানে এক লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসনের কথা বলা হয়।
বন্যা সৃষ্টি হলে তার ফলে রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এ সময় কাছাকাছি কোনো চিসিৎসা সেবাকেন্দ্র খুঁজে পাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য কঠিন হবে। এ সময়ে পায়খানা, গোসলখানা ও টিউবওয়েলগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। ভূমিধস হওয়ার ঝুঁকিটা বেশি। এ সময়ে উদ্বাস্তু পরিবারগুলো তাদের রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ বা সরঞ্জাম সংকটের আশঙ্কা করছেন। শরণার্থীদের জন্য পথ বানাতে গিয়ে গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। এসব গাছের শেকড় পর্যন্ত রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য তুলে ফেলেছে উদ্বাস্তুরা। এর ফলে ওই পাহাড়ি ঢাল আরো দুর্বল হয়ে গেছে। তা ধসে পড়ার আশঙ্কা বেড়েছে। চাকমাকুল ক্যাম্পের ঢালে তিন সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ৪০ বছর বয়সী আরাফা বেগম। তিনি বলেছেন, যখন আমি এই ক্যাম্পে আশ্রয় নিই তখন এটা ছিল একটি জঙ্গল। এখন তা নেই। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম আসার আগেই ওই এলাকা থেকে সরে যেতে চান তিনি। মাঝি বা ব্লক নেতার এমন নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। এখানে তাদের মাঝির নাম হলো জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বৃষ্টি এলে কি করবো আমি কিছুই জানি না। আমাদের ভরসা শুধু আল্লাহ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status