এক্সক্লুসিভ

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

ঘোষণার অপেক্ষায় বাংলাদেশ

কাজী সোহাগ

১১ মার্চ ২০১৮, রবিবার, ৮:৪৭ পূর্বাহ্ন

মহাকাশে নিজেদের স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ পাঠাতে এখন চলছে শেষমুহূর্তের প্রস্তুতি। কয়েক দিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে জানিয়ে দেয়া হবে সুনির্দিষ্ট দিন ও সময়। এরপরই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের ঘোষণা দেবে বাংলাদেশ। এখন সেই সময়ের অপেক্ষা। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ফ্রান্সে রয়েছে। নির্মাণ শেষে সেটি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করেছে ফ্রান্সের থেলেস এলেনিয়া স্পেস কোম্পানি। আগামী কয়েকদিনের মধ্য সেটি বিমানে করে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নেয়া হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরালে অবস্থিত স্পেস এক্সের লঞ্চ প্যাড থেকে এটি উৎক্ষেপণ করা হবে। সঠিকভাবে পাঠানো গেলে আটদিন পর এটি মহাকাশে বরাদ্দ পাওয়া ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছবে। আপাতত ৩০শে মার্চ সম্ভাব্য তারিখ ধরে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। অপেক্ষার সময়টি সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর এবার চূড়ান্তভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ সম্ভব হবে বলে জানান তারা। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আপাতত সম্ভাব্য তারিখ রয়েছে ৩০শে মার্চ। এটা এপ্রিলেও হতে পারে। উৎক্ষেপণের অন্তত ১৫ দিন আগে আমাদের চূড়ান্তভাবে জানানো হবে। এরপরই আনুষ্ঠানিকতার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে পারবো। বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তন হলেও স্যাটেলাইট নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে না। সংশ্লিষ্টরা জানান, উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে নিজ কক্ষপথে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে স্যাটেলাইটটি কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। দেশের প্রায় ৩৭ স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কাছে ফ্রিকোয়েন্সি বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১২৫ কোটি ডলার আয় করা যাবে। এ সব চ্যানেল এখন বিদেশের বিভিন্ন স্যাটেলাইট থেকে ফ্রিকোয়েন্সি কিনে অনুষ্ঠান প্রচার করছে। এতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। তবে এ টিভি চ্যানেলগুলো এখনকার প্রচলিত ক্যাবলভিত্তিক প্রচারের পরিবর্তে ছোট ডিশ অ্যান্টেনার ডাইরেক্ট টিভি সিগন্যাল পাবে। গাজীপুরে প্রায় ১৩ একর জায়গার ৫ একরজুড়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেখানে বিদেশি প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০ ট্রান্সপন্ডার থাকবে, যার ২০টি বাংলাদেশ ব্যবহার করবে। বাকি ২০টি বিদেশি বা প্রতিবেশী দেশের কাছে ভাড়া দেয়া যাবে। উৎক্ষেপণের পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত এর তদারক করবে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। এটি আগামী ১৮ বছর পর্যন্ত মহাকাশে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এবং কাজ করতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ থেকে ৩০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের উপস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। সেখানে আরও উপস্থিত থাকবেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদসহ এ প্রকল্পের পরিচালক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার ও বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা। বিটিআরসি জানিয়েছে, স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে সারা দেশে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে সেজন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি সমপ্রচার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে দেশে থেকেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করবেন। এর আগে কয়েকবার স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের তারিখ বদলানো হয়। প্রথমত, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ২০১৭ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরে নতুন তারিখ ঠিক হয় এ বছরের ১লা মার্চ। আবারও পরিবর্তন হয় সম্ভাব্য তারিখ। স্যাটেলাইটটি নির্মাণ করেছে ফ্রান্সের থ্যালাস অ্যালেনিয়া নামের একটি প্রতিষ্ঠান। স্যাটেলাইটের কাঠামো তৈরি, উৎক্ষেপণ, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দু’টি স্টেশন পরিচালনার দায়িত্ব এ প্রতিষ্ঠানটির। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি করা হয়েছে গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে। ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রির অরবিটাল স্পটে (নিরক্ষরেখায়) উড়বে বাংলাদেশের নিজস্ব প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের জন্য ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল স্পট বা নিরক্ষরেখা (১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) লিজ নিয়েছে বাংলাদেশ। ২ কোটি ৮০ লাখ ডলার ব্যয়ে এ স্পট বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সঙ্গে রাশিয়ার ইন্টারস্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব স্পেস কমিউনিকেশনের মধ্যে একটি চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হওয়ার কথা ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সে সময় উৎক্ষেপণ সম্ভব হয়নি। ইন্টারস্পুটনিকের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তি হলেও এ চুক্তি তিন ধাপে ৪৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যাবে। এই প্রকল্পে সরকারের যে টাকা খরচ হবে তা স্যাটেলাইট ভাড়া দিয়ে ৮ বছরে তুলে এনে এই প্রকল্পকে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর আগে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন (আইটিইউ) বাংলাদেশকে নিরক্ষরেখার ১০২ ডিগ্রি স্পট বরাদ্দ দেয়। কিন্তু প্রভাবশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশ তাতে বাধা দেয়। দেশগুলোর আপত্তির মুখে বাংলাদেশ বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে। বিকল্প হিসেবে ৬৯ ডিগ্রিতে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রস্তাব দেয়া হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বিকল্প প্রস্তাবেও আপত্তি তোলে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও চীন। সর্বশেষ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে (পূর্ব) স্পট বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু এই স্পটটিও খালি ছিল না। স্পটটি ছিল ইন্টারস্পুটনিকের। কিন্তু অর্থের সংস্থান না হওয়ায় রাশিয়ার মহাকাশবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের নিজস্ব দু’টি স্পটের বিপরীতে (৮৪ ও ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি) দুই মাসের একটি শর্তহীন চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্প শুরুর আগেই বিদেশি বিশেষজ্ঞ বা পরামর্শক নিয়োগ এবং প্রকল্প গবেষণায় সরকারের ব্যয় হয় ৮৬ কোটি টাকা।
এই টাকা সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status