বই থেকে নেয়া

উত্তম কুমারের অজানা কথা (৩৮)

‘আমার অভিনয়ের প্রশংসা তখন আমি ঘরে বসেই শুনতে পাই’

৭ মার্চ ২০১৮, বুধবার, ৬:১৩ পূর্বাহ্ন

এল ১৯৫৪ সাল।
এই বছরে পর-পর অনেক ছবির মুক্তির পালা। দু-এক মাসের ব্যবধানে ছবিগুলো মুক্তি পেতে শুরু করল। সবলক’টি ছবিই সাফল্য লাভ করল। পর-পর দশখানি ছবি মুক্তি পেল এই বছরে।
নির্মল দে পরিচালিত ‘চাঁপাডাঙ্গার বৌ’ ছবিতে আমি নাকি অসামান্য অভিনয় দক্ষতার নজির রেখেছি। আনন্দবাজারের সমালোচনা স্তম্ভে পরোক্ষভাবে এই বিশেষণ প্রথম বর্ষিত হলো। আনন্দবাজার আবার লিখল-

অনেকের মনে হয়তো উত্তমকুমারই সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন..
আমার অভিনয়ের প্রশংসা তখন আমি ঘরে বসেই শুনতে পাই। ‘চাঁপাডাঙ্গার বৌ’ ছবিতে আমার অভিনীতি চরিত্রের নাম ছিল মহাতাপ। সেই মহাতাপের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল। এই বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে সুশীল মজুমদারের ‘মনের ময়ুর’ মুক্তি পেল। এই ছবির মাধ্যমে আমার অভিনয়ের খ্যাতি আবার ছড়িয়ে পড়ল। ওরাই বোধ করি বেশি করে স্বীকৃতি দিলেন বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে। কাগজের বিজ্ঞাপনেও আমার নাম মুদ্রিত হলো।

এর মাঝেও দুঃখের বিষয় হলো ‘কল্যাণী’ ছবিতে কিন্তু প্রকারান্তরে আমাকে অপমানই করা হয়েছিল। এই ছবির বিজ্ঞাপনে আমার ছবি ছাপা হলো কিন্তু ওই পর্যন্তই। আমার নামটাও বিজ্ঞাপনে ছাপা হয়নি। তখনকার দেশ পত্রিকায় এই ছবির একটা বিজ্ঞাপন দেখে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। একটি ডিজাইনে অনেক শিল্পীর মধ্যে আমার ছবিটাও ছিল। কিন্তু আমার নাম ছিল না। ছবিটি উত্তরা-পূরবী-উজ্জ্বলায় মুক্তি পেয়েছিল।

সেদিন এইসব ব্যাপারে আঘাত পেলেও মুখ বুঝে সহ্য করেছিলাম, খ্যাতির প্রত্যাশায়।
ইতিমধ্যে আমার আর রমার যুগ্ম অভিনয় খ্যাতি ছবির দর্শকদের কাছে সমাদৃত। আমাদের মতো রোমান্টিক জুুটি নাকি ইতিপূর্বে বাংলা ছবির জগতে আসেনি। আমরা নাকি বাংলা ছবির জগতের অসহায় অবস্থা মুছে ফেলতে এসেছিÑ এমন একটা ধারণাও অনেকেই পোষণ করতেন। বোধ করি ওদের ধারণার অপমৃত্যু ঘটল না। রমা অর্থাৎ সুচিত্রা সেন আর আমি দর্শকদের আকাক্সক্ষা পূরণ করবার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলতে থাকলাম। ‘অগ্নিপরীক্ষা’ মুক্তি পেল। অকল্পনীয় জনসমাদর পেল ছবিটা।
এই ছবির জনপ্রিয়তাই বোধ করি আমাকে খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিল। রোমান্টিক জুটি হিসেবে তখন আমার আর সুচিত্রা সেনের একটা বিশেষ স্থান রচিত হলো দর্শকমহলে। দৈনিক সংবাদপত্র আর অন্যান্য সাময়িক পত্র-পত্রিকা এগিয়ে এল আমাদের সাহায্য করতেÑ অভিনন্দিত করতে।

নানা কাগজে তখন নানা মন্তব্য। তারই কয়েকটি নমুনা আমি উপস্থাপন করছি এখানে।
‘মরণের পরে’ ছবির জন্য লেখা হলো- প্রণয়ের দিকটা রসোচ্ছল।
‘সদানন্দের মেলা’ ছবির জন্য বর্ষিত হলো- অনন্যসাধারণ প্রণয়ের অংশ পরিবেশন।
‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবির প্রশংসায় মানপত্রের বাণী হলো- শান্ত অথচ উন্মনা প্রণয়াতুর।
এমনি ধরনের কত অভিনন্দনের জয়টিকা পরতে থাকলাম আমরা দু’জনে।
নিজেকে ধন্য মনে হতে লাগল। ধন্য পূজারি হিসাবে মনে মনে তাই আগামী দিনের দর্শকদের জন্য পূজার অর্ঘ্য সাজাতে লাগলাম। সেই প্রসাদ যদি গণদেবতা গ্রহণ করেন তা হলেই সার্থক জন্ম, সার্থক হবে সাধনা আমার।
একটি একটি করে দিন চলে যায় আর অতিক্রম করতে থাকি একটা একটা করে খ্যাতির সোপান।
‘শ্যামলী’ নাটক তখনও অপ্রতিহত অবস্থাতেই চলছে। ৪৮৬ রাত্রির অভিনয় যখন তখন হঠাৎ আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম। আমার অসুস্থতা দেখেই বাবা-মা লালুকে ডেকে পাঠালেন। লালুই আমাদের বাড়ির প্রাথমিক চিকিৎসা করত। বলা হয়নি, লালু ডাক্তারি পড়েছিল। এমবিবিএস ডাক্তার। প্রথম দিকে লালুও কাকার ডাক্তারখানায় হাত পাকাচ্ছিল। সেই লালু আমাকে পরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত বড় ডাক্তার দেখাবার মতামত দিল। ডা. নলিনী সেনগুপ্ত এলেন। লালু আর ডা. সেনগুপ্ত জানালেন বাইশ দিন সম্পূর্ণ বেড রেস্ট। জানতে পারলাম, আমার প্যারাটাইফয়েড হয়েছে। ছেলেবেলা থেকে মাঝে মধ্যে একটু সর্দি-কাশি ছাড়া আর বড় রকমের অসুস্থতা আমার ছিল না, এই সূত্রপাত! আমি শয্যা নিলাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status