বিশ্বজমিন

দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়

ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের মন্তব্য কোনো মানদণ্ডেই স্বাভাবিক নয়

দ্য হিন্দু

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ থেকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘জনসংখ্যাতত্ত্বে বিপর্যয়’ ও একটি ‘পরিকল্পিত অভিবাসন’ নিয়ে ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত যে মন্তব্য করেছেন তা কোনো মানদন্ডেই স্বাভাবিক নয়। প্রকাশ্য জনসভায় রাজনৈতিক বিষয় থেকে দূরে থাকার একটি দীর্ঘ ও সুস্থ রীতি আছে ভারতীয় সার্ভিস প্রধানদের। কিন্তু এ সপ্তাহে দিল্লিতে এক সেমিনারে সে অবস্থান থেকে সরে গিয়ে রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন বিপিন রাওয়াত। তিনি তখন প্রতিবেশীদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক, ধর্মীয় পরিচয়, জনসংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতে অভিবাসী যাওয়ার দুটি কারণ আছে। তার প্রথমটি হলো, বাংলাদেশের ভিতরে প্রচণ্ড চাপ। তিনি বলেন, অন্য ইস্যুটি হলো সুপরিকল্পিত অভিবাসন। এটা ঘটার কারণ হলো আমাদের (ভারতের) পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী। এটি একটি প্রক্সি যুদ্ধের পর্যায়ে পড়ে। তিনি আরো বলেন, এই কৌশলকে সমর্থন করছে ‘আমাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রতিবেশী’। তিনি এর মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে পাকিস্তান ও চীনকে বোঝাতে চেয়েছেন। সেনাবাহিনী একেবারে নীরব থাকে না। তবে তারা এসব ক্ষেত্রে স্বল্পভাষী। এমন বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে তাদের সেই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার ঘটনা বিরল। প্রকৃতপক্ষে এরকম মন্তব্য করা থেকে নিজেরা বিরত থাকা ভারতীয় গণতন্ত্র ও সেনাবাহিনী উভয়ের জন্যই সুখকর। বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে প্রতিবেশী অন্যান্য দেশও স্বাধীনতা অর্জন করে। তাদের তুলনায় ভারত সেনাবাহিনীকে সফলতার সঙ্গে রাজনীতি থেকে দূরে রেখেছে। এ বিষয়টি পণ্ডিতদের গবেষণার বিষয়।
সরকার থেকে আলাদা করার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করায় উদ্বৃদ্ধ করা হয়েছে। জনগণের আস্থা অর্জন করছে তারা। সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও উপআঞ্চলিক অস্থিরতার সময়ে তারা বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে। তাদেরকে মাঝে মাঝেই এসব কাজে ডাকা হয়। তাই বলে সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে দেবে সরকার এমন না। এক্ষেত্রে বাধা রয়েছে। এটা হলো ভারসাম্যতা, যাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এ জন্যই পররাষ্ট্র বিষয়ক নীতি ও আভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে জেনারেল রাওয়াতের ‘সম্ভবত’ অপ্রস্তুত পর্যবেক্ষণ দুর্ভাগ্যজনক। তার এ বক্তব্যের ফলে ভারতের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বিরোধিতাপূর্ণ ‘রিজয়েন্ডার’ আসার ঝুঁকি রয়েছে। দেশের ভিতরেই বৈরি প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এরই মধ্যে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট থেকে। জেনারেল রাওয়াত অভিযোগ করেছেন যে, ভারতীয় জনতা পার্টি যতটা দ্রুত গতিতে আসামে প্রভাব বিস্তার করেছে তার চেয়ে বেশি গতিতে আসামে প্রভাব বিস্তার করছে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট। তাই জেনারেল রাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন এ ফ্রন্টটির প্রধান মাওলানা বদরুদ্দিন আজমল। তিনি বলেছেন, সংবিধান যতটুকু দায়মুক্তি দেয় তার চেয়ে অনেক বেশিদূর গিয়েছেন জেনারেল রাওয়াত। আরেকটি রাজনৈতিক দলের প্রধান টুইট করেছেন। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করা সেনাপ্রধানের কাজ নয়। জেনারেল রাওয়াতের মন্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে গত মাসে জেনারেল রাওয়াত জম্মু ও কাশ্মিরের সরকারি স্কুলগুলোর সমালোচনা করেন। তিনি দুটি মানচিত্রের কথা বলেন- ‘একটি হলো ভারতের এবং অন্যটি হলো জম্মু ও কাশ্মির’। এর ফলে জম্মু ও কাশ্মীরের শিক্ষামন্ত্রী কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন। এমনকি যদি ওই বক্তব্যগুলো ‘গুড ফেইথ’ বা ভাল বিশ্বাস থেকেও দেয়া হয়, তাহলে বিষয়টি হলো, তা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের সৃষ্টি করতে পারে। এটা সেনাবাহিনীর দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে কোনো সহায়ক হবে না। তারা যে রাজনীতির ঊর্ধ্বে একটি প্রতিষ্ঠান এমন একটি পূর্ণাঙ্গ ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হবে।   

(দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত সম্পাদকীয়র অনুবাদ)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status