শেষের পাতা

যমজ রাবেয়া রোকাইয়ার জোড়া মাথা আলাদা হচ্ছে

শুভ্র দেব

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

২০ মাস বয়সী অবুঝ দুই শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। আর অন্য দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতো তাদের জন্ম হয়নি। এমনিতেই তারা যমজ শিশু। আবার তাদের দু’জনের মাথা জোড়া লাগানো। তবে ধীরে ধীরে তারা বড় হচ্ছে। মুখে কথাও ফুটেছে বেশ। আব্বু-আম্মু, দাদী    
বলে ডাক দেয়। হাঁটি হাঁটি পা পা করে তারা হাঁটছে। খেলনা পেলে মেতে উঠছে খেলাধুলায়। বিশেষ করে বাবা সঙ্গে থাকলে আর কথা নেই। ঢাকা এসে তারা দু’জনেই বেশ আনন্দে সময় পার করছে। মা-বাবা দু’জনের সঙ্গে খেলাধুলা, হৈ-উল্লাসে মেতে থাকে। সময়মতো খাওয়া-ঘুম, বাকি সময়টা খেলাধুলা করেই কাটিয়ে দিচ্ছে। তাদের জোড়া মাথা আলাদা করার জন্যই পাবনা থেকে ঢাকা আনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থায়নে তাদের চিকিৎসা করা হবে। এজন্য বুধবার তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের কেবিন ব্লকের ৬১২ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে তাদের দু’জনের জোড়া মাথা আলাদা করা হবে শিগ্‌গিরই। ঢামেকের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. আবুল কালাম আজাদ মানবজমিনকে বলেন, জোড়া মাথার শিশুদের জন্য ঢামেকের সব বিভাগের প্রধানদের নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। রোবাবার সেই বোর্ড একসঙ্গে বসে বৈঠক করবে। এছাড়া ডেনমার্ক থেকে দু’জন চিকিৎসক আসবেন। তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে তাদের দু’জনের ব্রেন আলাদা আছে। তবে ব্রেনের অনেকগুলো রক্তনালীর মধ্যে কমন একটি রক্তনালী দু’জনের ব্রেনের সঙ্গে যুক্ত। তাই প্রথমে এই রক্তনালীকে ব্লক করে দিতে হবে। পরে আলাদা দু’টি রক্তনালী সৃষ্টি হবে। এরপর তাদের মাথা আলাদা করার প্রসেস শুরু হবে। তবে বিষয়টি অনেক ব্যয়বহুল। আমাদের নিজস্ব মেডিকেল যন্ত্রপাতির বাইরে আরো অনেক কিছু কিনতে হবে। তাই প্রধানমন্ত্রীও তাদের চিকিৎসার জন্য অর্থায়ন করেছেন।
রাবেয়া-রোকাইয়ার বাবা মো. রফিকুল ইসলাম ও মা তাসলিমা খাতুন। দু’জনেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাদের বাড়ি পাবনার চাটমহর এলাকায়। এই দুইসন্তান ছাড়াও তাদের তাসলিম ইসলাম নামের ৭ বছর বয়সী আরো এক মেয়ে আছে। সে এবছর স্থানীয় একটি স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। রফিকুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, রাবেয়া-রোকাইয়া জন্মের আগে অনেক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। কিন্তু তারা যে যমজ কখনই বুঝা যায়নি। পরীক্ষায় সব সময়ই দেখা গেছে একটি বাচ্চা। পাবনার পিডিসি হাসপাতালে তাদের মায়ের অস্ত্রোপচার করার সময় বিষয়টি ধরা পড়ে। চিকিৎসকরা অনেক ঝুঁকি নিয়ে সেদিন সফল ভাবে তাদের আলোর মুখ দেখান। চিকিৎসকরা তখন বলেছিলেন তারা বেশি দিন বাচবে না। ওই দিন খুব খারাপ লেগেছিল। মনে হয়েছিল আল্লাহ্‌ সন্তান যখন দিলেন সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান কেন দিলেন না। তাদেরকে দেখে মায়া লেগে যায়। তাই জন্মে ৫ দিনের মাথায়  নিয়ে আসি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে চিকিৎসকরা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। পরে আমরা পাবনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মকবুল হোসেনকে বিষয়টি খুলে বলি। তার মাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাবেয়া-রোকাইয়ার চিকিৎসার জন্য আবেদন করি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতার কারণেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করা হয়েছে। রফিকুল আরো বলেন, বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা.সামন্ত লাল সেনের তত্ত্বাবধায়নে একবার পপুলার হাসপাতালে হাঙ্গেরির একটি মেডিকেল টিম রাবেয়া-রোকাইয়াকে দেখে গেছে। সিটিস্ক্যান ও এমআরআই দেখে তখন তারা অনেকটা আশা দিয়ে বলেছিল ২০১৮ সালে তারা আবার আসবেন এবং আমার সন্তানদের চিকিৎসা করবেন। আমাদের সংসদ সদস্যর আশ্বাসেই এখানে এসেছি।
রাবেয়া-রোকাইয়ার মা তাসলিমা খাতুন মানবজমিনকে বলেন, আর অন্য দশটা স্বাভাবিক শিশুর মত না হলেও তারা অনেক ভালো। শারীরিক সমস্যা থাকলেও তারা আমাদেরকে কোনো জ্বালাতন করে না। সব সময়ই খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। কান্নাকাটি, চিৎকার চেঁচামেচিও করে না। এদিক দিয়ে তাদেরকে নিয়ে বেশ খুশি আমরা। স্বপ্ন আছে তারা যেন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পায়। কারণ তাদের প্রতি সবার অন্যরকম একটা ভালোবাসা কাজ করে। তাদের মাথা আলাদা হলে স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেলে তবে বড় মেয়ের মত তাদেরকেও লেখাপড়া শেখাবো। তাসলিমা খাতুন বলেন, জন্মের পর থেকেই আশে পাশের সবাই তাদের দেখতে এসেছে। এখনও অনেকে এসে খোঁজ খবর নিয়ে যায়। সবারই যেন একটা ভালোলাগা কাজ করে। আত্মীয়-স্বজন সবাই চায় তারা যেন স্বাভাবিক হয়ে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status