শেষের পাতা

তেল-গ্যাসের মূল্য বাড়লে গরিবের বোঝা বাড়বে

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শনিবার, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন

গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট খাত বিশেষজ্ঞরা। তারা মনে করেন, মধ্যবিত্ত পরিবারের ঢাকায় থাকাই এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষ আছেন চরম কষ্টে। অল্প কয়েকদিন হয়েছে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় জীবনযাত্রা নিয়ে নানা ধরনের কষ্টের মধ্যে আছে মধ্য ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ। গ্যাস আর জ্বালানির দাম বাড়লে শুধু এখাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বাড়িভাড়া ও নিত্যখাদ্য পণ্যের
 দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে জীবনযাত্রাকে দুর্বিষহ করে তুলবে। গ্যাস-জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়ে যায় শিল্পকারখানার উৎপাদন খরচ। ফলে বেড়ে যাবে উৎপাদিত পণ্যের দামও। এতে যেমন চাপ বাড়বে ব্যবসায়ীদের ওপর, তেমনি তা প্রভাব বিস্তার করবে ক্রেতা ও বাজারের ওপর। বিপিসির জ্বালানি তেলের দাম ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের গ্যাসের দাম সমন্বয় করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা মানবজমিন-এর সঙ্গে আলোপকালে এসব কথা বলেন। এ মাসের গোড়ার দিকে সরকারের কাছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেয় এবং অন্যদিকে ১৯শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা এলএনজি আমদানির পর ভবিষ্যতে গ্যাসের দাম সমন্বয় করার বিষয়ে বৈঠক করেন। এদিকে সিপিবি বলেছে, কোনো অজুহাতেই তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেয় সংগঠনটি।
পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমত উল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, এলএনজি আসলেই আমাদেরকে গ্যাস তিন থেকে চার গুণ দামে কিনতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা চূড়ান্ত হওয়ার পর তারা গ্যাস উত্তোলন শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকার বসে আছে কেন? সরকার ইচ্ছা করেই গ্যাস উত্তোলন করছে না। যদি আরো গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হয় তাহলে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট দুই থেকে তিন টাকায় কিনতে পারবে জনগণ। তিনি বলেন, সরকার বিদেশের স্বার্থের কথা চিন্তা করে অর্থাৎ ভারতের কথা চিন্তা করে এটা করছে না। এই বিশেষজ্ঞ বলেন, রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে লাভ কম হবে সরকারের। সিন্ডিকেট করে এ খাতে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ী ও বিদেশিদের সুবিধা দিতেই সরকার মরিয়া। বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, জ্বালানি তেলে ঋণ পরিশোধ করেও লাভ করেছে বিপিসি। ১০ হাজার কোটি টাকা গত বছর লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও বিপিসি জনগণের পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়েছে। জ্বালানি তেলে লোকসান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। সরকার ২০১৬ সালে দেশে জ্বালানি তেলে যে পরিমাণ টাকা কামিয়েছিল তাতে মানুষের কোনো লাভ হয়নি। গ্রামে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। তারা কষ্টে আছেন। এই পরিস্থিতিতে তেলের দাম বাড়ালে এর প্রভাব পড়বে সর্বত্র।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)- জ্বালানি  উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, কয়েক দফায় গ্যাসের ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এমনিতেই মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। আবার গ্যাস ও জ্বালানি তেলে দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা কেন হবে। প্রস্তাব নিয়ে বিইআরসিতে আসতে হবে। গণশুনানি হবে। তারপর মূল্যায়ন করে সিদ্ধান্ত। জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় সরকার এলএনজি আমদানি করতে চাইছে ঠিকই। কিন্তু এই বেশি দামের গ্যাস তো সাধারণ মানুষ পাবে না। সাধারণ জনগণের ঘাড়ে গ্যাসের দামের বোঝা চাপিয়ে সরকার জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির এখতিয়ার বিপিসি’র নেই। এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনসম্মত হবে না।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের জীবন আর চলে না। অল্প কয়েকদিন হলো গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। আবার গ্যাস ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে সরকার বুর্জোয়াদের সুবিধা করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে। তিনি বলেন, সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একদল সুবিধাবাদী সরকারকে বেকাদায় ফেলার জন্য নির্বাচনের বছরে তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানোর অপ্রয়োজনীয় প্রস্তাব করেছে; যা জনগণ মানবে না। তিনি বলেন, বিপিসি গত কয়েক বছর যে লাভ করেছে, এটা দিয়ে আগামী পাঁচ বছর তেলের দাম না বাড়ালেও ক্ষতি হবে না। বিপিসি তেলে কত টাকা মুনাফা করেছে তার একটা গণশুনানি দাবি করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
এদিকে ২২শে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম এক বিবৃতিতে তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ানোর উদ্যোগের খবরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, কোনো অজুহাতেই তেল-গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না। দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি সিপিবি’র। তারা আরো বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও দেশের বাজারে দাম কমানো হয়নি। তারা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে আনার দাবি জানান। এসব দাবিতে সচেতন দেশবাসীকে সোচ্চার হতে এবং দাবি আদায় আন্দোলনের প্রস্তুত থাকারও আহ্বান জানান তারা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status