বই থেকে নেয়া

উত্তম কুমারের অজানা কথা (৩৩)

‘শেষ পর্যন্ত অনুগ্রহ করে তারা আমাকে সুযোগ দিলেন’

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, শুক্রবার, ৪:১৮ পূর্বাহ্ন

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়ক উত্তম কুমার অনন্য অভিনয় জাদুতে মুগ্ধতা বিলিয়েছেন দুর্নিবার। তার অভিনীত ছবি মানেই ভালোলাগার এক বিশাল প্রাপ্তি। পর্দায় এ নায়ক যেমন উজ্জ্বল তেমনই তার ব্যক্তিজীবনের চলাচলেও ছিল নানান রঙের মিশেল। সেই অজানা জীবনের গল্প তার বয়ান থেকে অনুলিখন করেছেন প্রখ্যাত সাংবাদিক-সাহিত্যিক গৌরাঙ্গপ্রসাদ ঘোষ যা পরবর্তী সময়ে ‘আমার আমি’ নামে বই আকারে প্রকাশ হয়। সে বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে উত্তম কুমারের আত্মজীবনী-

অসিতবরণ অনেকগুলো ছবিতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলেছেন বলে তিনি রাজি হতে পারলেন না। তারপর কাকে নায়ক নির্বাচন করা যায় সেই চিন্তায় তারা রীতিমতো অধীর। অস্থির। অনেক ভেবে অনেক চেষ্টা করেও একজন খাঁটি নায়ক তারা নির্বাচন করতে সক্ষম হলেন না।
এদিকে আমার মানসিক অস্থিরতা ক্রমশই বাড়ছে। অথচ সাহস করে ওদের কাছে মনের কথাটা ব্যক্ত করতেও পারছি না।
এমন সময় নির্মলবাবু আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি দুুরুদুরু বক্ষে দেখা করলাম। মাত্র কয়েকটা কথা। আমার সঙ্গে আলাপ করে নির্মলবাবু যে বেশ খুশি হয়েছিলেন তা তার অভিব্যক্তি থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। তবুও আমার সংশয়, যদি কাজটা না পাই! অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বললাম, কাজটা যদি আমাকে দেন, আমি নিশ্চয় পারবÑ
শেষ পর্যন্ত অনুগ্রহ করে তারা আমাকে সুযোগ দিলেন।
‘বসু পরিবার’ ছবিতে আমি নায়ক চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। এ যেন চরম জয়ের আনন্দ।
নির্মলবাবু আমাকে সুখেন চরিত্র বুঝিয়ে দিলেন। যেদিন আমি চিত্রনাট্যের সুখেনকে জানলাম, ঠিক সেইদিন থেকে নিজেকে সুখেনের আসনে বসিয়ে আমি চলতে শুরু করলাম।
এ কথা হয়তো কেউ বিশ্বাস করবে না, অনেকদিন পর্যন্ত আমি নিজেকে সুখেন ছাড়া আর কিছুই ভাবিনি। অল্পদিনের মধ্যে ছবির কাজ শুরু হয়ে গেল।
ওদিকে আরও একটি ছবিতে আমি তখন কাজ করে চলেছি। ছবির নাম ‘কার পাপে’। কালীপ্রসাদ ঘোষের পরিচালনায় ছবিটি উঠছিল।
‘বসু পরিবার’ ছবিতে কাজ শুরু করলাম। ওদিকে ‘কার পাপে’ ছবিটি মুক্তির প্রতীক্ষায়।
‘বসু পরিবার’ ছবিতে কাজ চলাকালীন বারকতক পোর্ট কমিশনার্সের সেই ক্যাশ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারে গিয়ে যে বসিনি তা নয়। যতক্ষণ সেখানে বসে কাজ করেছি ততক্ষণ আমাকে ঘিরে রেখেছে এই সুখেন।
ছবি শেষ হলো একসময়।
এসব ১৯৫২ সালের কথা। যে ১৯৫২ সালকে আমি আমার সমস্ত মন দিয়ে ঘৃণা করতাম সেই ১৯৫২ সালেই আমার ভাগ্যের চাকা সম্পূর্ণ ঘুরে গেল।
এই বছরে মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে পর-পর মুক্তি পেল ‘সঞ্জীবনী’, ‘বসু পরিবার’ আর ‘কার পাপে’। ‘সঞ্জীবনী’র ব্যর্থতা আর ‘কার পাপে’র আশানুরূপ জনখ্যাতি না পাওয়া আমাকে যেন এক সুউচ্চ পর্বতচূড়া থেকে গভীর অতলে নিক্ষেপ করতে চাইল। যে মুহূর্তে আমি পতনের কানায় কানায় এসে দাঁড়ালাম, ঠিক সেই মুহুর্তে আমার একান্ত আপনার সুখেন আমাকে বাঁচিয়ে দিল। চরম খ্যাতি পেল ‘বসু পরিবার’। প্রতিটি দর্শকের মুখে বসু পরিবারের খ্যাতি। ছবিটিও অবশেষে হিট করলো।
সেই সঙ্গে আমার ব্যর্থতায় ভরা জীবনের ইতিহাসের পাতায় ১৯৫২ সালটি যেন সোনার অক্ষরে লেখা হয়ে গেল। পত্র-পত্রিকা হলো মুখরিত। আমার নামটি বাদ দিয়ে সমালোচনার রেওয়াজ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ কয়েকটি পত্রিকায় আমি সমালোচনার স্তম্ভে স্থান পেলাম। আমার অভিযানের সামনে সাফল্যের যে সিংহদ্বার এতদিন রুদ্ধ ছিল, সহসা যেন তা হলো উন্মুক্ত। আমি যেন আমার বাঁচার আলোর নিশান স্পষ্ট দেখতে পেলাম। দিন যত যায়, ‘বসু পরিবার’ ব্যবসায়িক দিক থেকে যেন ততই আলোড়ন তুলতে থাকে। সেই সঙ্গে আমারও সুনাম।
এই ১৯৫২ সালের ২৪শে জানুয়ারি দিল্লীতে প্রথম আন্তর্জাতিক চলিচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন হয়েছিল। এই সালের ৮ই নভেম্বর প্রভাদেবী মারা গেলেন। প্রভাদেবীর মৃত্যু-সংবাদ পেয়ে আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলাম। অনেক স্মৃতি মনে পড়ছিল সেদিন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status